গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকসহ বিভিন্ন বিভাগে লোকবল সংকটে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। ২০১৩ সালে এটিকে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও সে অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। সার্জারি বিশেষজ্ঞ ও অবেদনবিদ না থাকায় এখানে অস্ত্রোপচারও বন্ধ।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যানবিদ মো. সুহেদ আহমদ জানান, এখানে ৫০ শয্যার প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে ৫০ শয্যার জনবলকাঠামো অনুযায়ী প্রথম শ্রেণির ২১ পদের বিপরীতে জুনিয়র কনসালট্যান্টের ছয়টি পদই শূন্য রয়েছে।

এগুলো হচ্ছে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও), মেডিসিন, সার্জারি, অ্যানেসথেটিস্ট (অবেদনবিদ), চক্ষু এবং চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞের পদ। জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্সের ১৫টি পদের মধ্যে ১১টি এবং চারটি মিডওয়াইফারি পদের বিপরীতে একটি পদ শূন্য রয়েছে। তৃতীয় শ্রেণির ৯৬টি পদের মধ্যে ২৪টি পদই শূন্য। চতুর্থ শ্রেণির ২৭টি পদের বিপরীতে শূন্য পদ রয়েছে ১৩টি। সব মিলিয়ে ১৬৪টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে ৫৫টি পদই শূন্য রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের বারান্দায় পানের পিক, পরিত্যক্ত প্লাস্টিক ও ছেঁড়া কাগজপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ড অপরিচ্ছন্ন। তাদের ব্যবহৃত ৩০ টি বেডই রয়েছে জরাজীর্ণ। শৌচাগারগুলোর অবস্থা শোচনীয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না রাখতে পারার বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, এমএলএসএসের চারটি ও ঝাড়ুদারের পাঁচটি করে পদের বিপরীতে তিনটি করে পদ শূন্য রয়েছে।

জানা যায়, এক্স-রে মেশিনটি সপ্তাহে ৩দিন চালু থাকলেও তা সময়মত চালানো হয় না। সনোলজিস্ট না থাকায় আল্ট্রাসনোগ্রাফী মেশিনটিও রয়েছে বন্ধ।

বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা কয়ছর আহমদ নামের এক রোগীর অভিভাবক বলেন, শয্যাসংকটের কারণে অনেক সময় রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি নেওয়া হয় না।অনেক কষ্টে রোগী ভর্তী করতে হয়। আর ঔষধ সংকটত রয়েছেই।নার্সরা এক বোতল নাপা সিরাপ দিয়ে পুরো ওয়ার্ডের রোগীদের খাওয়ান।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন চিকিৎসক বলেন, সার্জারি ও অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ না থাকায় সব ধরনের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হচ্ছে না। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরও কয়েকজন চিকিৎসক বলেন, আর্থিক অনুমোদন না মেলায় এখানে এখনো ৩১ শয্যায় রোগী ভর্তি করা হয়। কারণ, ৫০ শয্যার সুযোগ-সুবিধার অনুযায়ী এখানে খাবার ও ওষুধ সরবরাহ করা হয় না।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তউহীদ আহমদ জানান, হাসপাতালের লোকবল সংকটের কারণে আশানুরূপ সেবা প্রদান করতে পারছি না। তীব্র লোকবল সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও একাধিকার জানানো হয়েছে।

জানা যায়, ২০০৬ সালের ১৭ জুলাই এলাকাবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান, বর্তমান বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী উন্নয়ন কার্যক্রমের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। পরবর্তীতে সরকার পরিবর্তন হলে উন্নয়ন কার্যক্রম আর হয়নি। তখন সরকারী এ হাসপাতালের উন্নয়ন কার্যক্রম অনিশ্চিত হয়ে পড়লে এতে গুরুত্ব দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। চিকিৎসা সেবার মান বৃদ্ধি, বিভিন্ন রোগের বিজ্ঞ ডাক্তারদের নিয়োগদানের বিষয়ে তিনি গুরুত্বারোপ করলে সরকারী এ হাসপাতালটি অনেকটা নতুনত্ব লাভ করে। তার প্রচেষ্ঠায় ৩১ শয্যা থেকে হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় পরিণত হলে ২০১৩ সালের ১৩ অক্টোবর তিনি নব-নির্মিত ভবনের উদ্বোধন করেন।

এদিকে, স্থানীয় এলাকাবাসী হাসপাতালের পূর্ণাঙ্গ সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।