সিলেটের বিভিন্ন এলাকার সৌন্দর্য দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে ছুটে আসেন পর্যটকরা। বিশেষ করে দুই ঈদে পর্যটকের পরিমাণ বেশি থাকে। ঈদকে টার্গেট করে ব্যবসায়ীরা নতুন করে সাজান সব কিছু। কিন্তু এবার খাঁ খাঁ করছে সিলেটের পর্যটন এলাকাগুলো।

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার প্রভাবে এই দুরবস্থা বলে জানিয়েছেন সংশ্নিষ্টরা। এতে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে সংশ্নিষ্টদের মাথায় হাত পড়েছে। গড়ে প্রতিদিন ২ কোটি টাকার অর্থিক লোকসান গুনতে হচ্ছে হোটেল ব্যবসায়ীদের। আর পর্যটন এলাকার ব্যবসায়ীদের গুনতে হচ্ছে আরও বেশি।

মঙ্গলবার সিলেটের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র জাফলংয়ে গিয়ে হাতেগোনা কয়েকজনকে দেখা গেল। এবারের বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হচ্ছে সিলেটের গোয়াইনঘাট। ওই উপজেলার একটি ইউনিয়ন হচ্ছে জাফলং। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জাফলংমুখী সড়ক।

বিভিন্ন স্থানে পিচ উঠে গেছে। সেনাবাহিনী ও স্থানীয়দের সহায়তায় কিছু কিছু এলাকার সড়ক সংস্কার করা হয়েছে।

জাফলংয়ের পর্যটন ব্যবসায়ী শাহ আলম আহমদ জানান, করোনায় অবকাঠামোগত তেমন ক্ষতি হয়নি। আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এবারের বন্যায় অবকাঠামোগত ও আর্থিক দুই ধরনের ক্ষতিই হয়েছে। বিশেষ করে অনেক এলাকায় দীর্ঘদিন পানি জমে থাকায় সড়কের পিচ উঠে গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর এলাকা পর্যটকদের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। ঈদ এলেই সাদাপাথরে ঢল নামে পর্যটকের। হাজার হাজার পর্যটকের উপস্থিতি বাড়িয়ে দেয় ওই এলাকার ব্যস্ততা। এবার সাদাপাথরে বাইরের পর্যটক নেই। যারা আছেন, তাঁরা সিলেট থেকে বেড়াতে গেছেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আলিম উদ্দিন জানান, আমাদের প্রস্তুতি ছিল বেশি। সেই অনুপাতে পর্যটক আসেননি। পর্যটক না আসায় ভেস্তে গেছে সব। কোলাহল কম থাকায় বিকিকিনি কম হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জানান, এবারের বন্যায় সাদাপাথর এলাকা দিয়ে উজানের ঢল নেমেছিল। এতে ওই এলাকার অনেক ব্যবসায়ীর জিনিসপত্র পানিতে ভেসে গেছে। স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্পসহ কয়েকটি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অর্ধশতাধিক নৌকাও পানিতে ভেসে যায়। ঈদে পর্যটক উপস্থিতিও কম।

স্থানীয় ব্যবসায়ী কালাম মামুন জানিয়েছেন, এবার বন্যার কারণে পর্যটকরা সিলেটেই আসেননি। এ ছাড়া, প্রচণ্ড গরমের কারণে স্থানীয় লোকজনও ঘর থেকে বের হননি। নৌকা দিয়ে রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট ঘুরে বেড়ানোর উপযুক্ত সময় হলেও পর্যটক নেই।

পর্যটন ব্যবসায়ী নেতারা জানান, গেল ঈদুল ফিতরে সিলেটে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটকের ঢল নামে। পর্যটন খাতে ব্যবসা হয়েছিল শতকোটি টাকার ওপরে। ঈদুল ফিতরের পরপর সিলেটজুড়ে দু’দফা বন্যা হওয়ায় মারাত্মক ধস নামে পর্যটন খাতে। এমন পরিস্থিতিতে পর্যটন খাতে প্রতিদিন দুই কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে।

পর্যটক সমাগম হলে সিলেটের রেস্টুরেন্ট ও রেন্ট-এ-কার ব্যবসা জমে ওঠে। কিন্তু এবার ঈদে ঠিক উল্টো চিত্র দেখা গেছে। অনেক মালিক কেবল পর্যটকদের আশায় ঈদের ছুটিতে রেস্টুরেন্ট খোলা রেখেছিলেন। কিন্তু পর্যটক না আসায় তাদের লোকসানের খাতা দীর্ঘ হচ্ছে।

সিলেট হোটেল মোটেল অ্যান্ড গেস্ট হাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে প্রায় ৫০০ আবাসিক হোটেল ও গেস্ট হাউস রয়েছে। ঈদ কিংবা যে কোনো উৎসবের ছুটিতে এসব পর্যটকে পরিপূর্ণ থাকে। গেল ঈদুল ফিতরের ছুটিতে অনেক পর্যটক হোটেলে সিটই পাননি। কিন্তু এবার বেশিরভাগ হোটেল খালি।

সিলেট হোটেল মোটেল অ্যান্ড গেস্ট হাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি এটিএম শোয়েব জানান, এবার ঈদুল আজহার ছুটিতে বেশিরভাগ হোটেল মোটেল খালি। এমনও হোটেল আছে, যেখানে একটি কক্ষও ভাড়া হয়নি। অগ্রিম বুকিংও নেই।