অপ্রাপ্তবয়স্ক, অদক্ষ আর বেপরোয়া মোটরবাইক চালকদের কারণে ক্রমেই অনিরাপদ হয়ে উঠছে বিয়ানীবাজার পৌরশহরসহ উপজেলা ছোট-বড় বিভিন্ন সড়ক। উঠতি বয়সী এসব বাইকাররা একে অন্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাইক চালাতে গিয়ে নিজেরা দুর্ঘটনায় পড়ছে এবং দুর্ঘটনার অনুঘটক হিসেবেও কাজ করছে। বিগত কয়েক বছরে বিয়ানীবাজারের লাউতা, মুড়িয়া, দুবাগ, চারখাই ও মাথিউরাসহ বিভিন্ন এলাকায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বেশ কয়েকজন তরুণের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। এতো কিছুর পরেও বাইকারদের নিয়ন্ত্রণে আনার বিষয়ে কারও কোনো মাথা ব্যথা নেই।

সাম্প্রতিক সময়ে করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে সড়কে অন্যান্য যানবাহনের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। এ সুযোগে মোটরসাইকেল চালকরা হয়ে ওঠেছেন বেপরোয়া। বাইক চালকরা উচ্চ শব্দে হর্ন বাজিয়ে রাস্তা এগিয়ে যায়। এঁকে বেঁকে উল্টোপথে বাইক চলছে দ্রুতবেগে। উপজেলার সড়কগুলোতে এমন চিত্র নিত্যডিনের। বেপরোয়া এই চলাচলের কারণে সমস্যা পোহাতে হচ্ছে অন্য যানবাহনের চালকদের। তাদের অভিযোগ, আগে যাওয়ার জন্য দৌড়ায়, সাইড দিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ি ঢুকিয়ে দেয় তখন আমাদের ব্রেক মারতে হয়। তবে ট্রাফিক পুলিশের দাবি, পরিস্থিতি অনেকটা উন্নত হলেও নিয়ম ভাঙার প্রবণতা বন্ধ হয়নি। অন্যের তো বটেই, নিজের নিরাপত্তার জন্যই সচেতন হওয়া উচিত মোটরসাইকেল চালকদের।

গত কয়েক দিনে পৌরশহরসহ উপজেলার বারইগ্রাম-চারখাই সড়ক, শেওলা সেতু-শেওলা স্থলবন্দর, মোকাম রোড-সারপার নওয়াগ্রাম সড়ক, বিয়ানীবাজার-চন্দরপুর-বহরগ্রাম সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, উঠতি বয়সী ছেলেরা বেপরোয়া গতিতে বিভিন্ন কোম্পানীর আপডেট মডেলের মোটরসাইকেল চালিয়ে থাকেন। এদের বেশিরভাগই ১৫-২২ বছর বয়সী। এই বাইকাররা কোনো রকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেনা। সুযোগ পেলেই দ্রুত ছোটে চলে। সড়কজুড়ে বাইকাররা নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী বেপরোয়া গতিতে ও প্রচণ্ড শব্দ করে বাইক চালায়। এতে চলমান গাড়িগুলোর চালকরা হকচকিয়ে যায়। এজন্য প্রায়ই রাস্তায় বাইকারদের সঙ্গে প্রাইভেট গাড়ি থেকে শুরু করে অন্যান্য যানবাহনের চালকদের বচসায় লিপ্ত হতে দেখা যায়। বাইকারদের কারণে রাস্তায় হুটহাট গাড়ি ব্রেক করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ছে যানবাহনগুলো।

অনেক বাইকাররা মোটরসাইকেলের সাইলেন্সার পাইপ খুলে রেখে বিকট শব্দ তুলে উপজেলাজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। আবার কেউ কেউ গাড়িতে ডিজিটাল হর্ন লাগিয়ে কুরুচিপূর্ণ নানা শব্দ বাজিয়ে চলছে। গাড়ির ব্রেকের সঙ্গে সংযোজন হয়েছে এ ধরনের নানা ব্রেক সাউন্ডও। আছে সাইড ইন্ডিকেটর সাউন্ড। এতো কিছুর পরেও বাইকারদের নিয়ন্ত্রণে আনার বিষয়ে কারও কোনো মাথা ব্যথা নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালকদের অধিকাংশেরই নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশনসহ প্রয়োজনীয় কোনো কাগজপত্র নেই তাদের অনেকেরই। তবে অনেক তরুণ বাইকাররা নিজ উদ্যোগে ড্রাইভিং লাইসেন্স, রেজিস্ট্রেশন ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংরক্ষণের পাশাপাশি নতুন বাইকারদের ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে চলতে এবং লাইসেন্সসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুতের আহবান জানান। তবে এদের সংখ্যা খুবই নগণ্য।

এ ব্যাপারে বিয়ানীবাজার থানার ওসি হিল্লোল রায় বলেন, বেপরোয়া বাইক চালকসহ লাইসেন্স ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন বাইক এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক বাইকারদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে। এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগতভাবেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

করোনাকালেও বিয়ানীবাজারের প্রতি প্রবাসীদের ভালোবাসার হাত