গত সোমবার রাতে বিয়ানীবাজারে নতুন করে দুজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন রহিমা বেগম (৪৫) এবং অপরজন ৯ বছরের শিশু সায়েম আহমদ। তাদের শরীরে করোনাভাইরাসের কোন উপসর্গ নেই। শারীরিকভাবে তারা দুজনেই সুস্থ থাকায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মোতাবেক চিকিৎসকদের পরামর্শে তাদেরকে বাড়িতে হোম আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে আক্রান্ত দুজনের মধ্যে একজন শিশু হওয়ায় নিয়মিত তাঁর শারীরিক অবস্থার খোজখবর নিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীলরা। অন্যদিকে, সবাইকে অবাক করে দিয়ে দু’দিন পূর্বেও সারাবাড়ি মাতিয়ে রাখা শিশুটির এখন দিনরাত কাটছে মায়ের সাথে একটি ঘরে।

করোনা আক্রান্ত শিশু সায়েম আহমদ মাথিউরা ইউনিয়নের নালবহর গ্রামের আব্দুল কালামের ছেলে। সে নালবহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র। সায়েম আহমদের করোনা পজেটিভ হলেও তাঁর শরীরে এ ভাইরাসের কোন উপসর্গ নেই। সে শারীরিকভাবে সুস্থ আছে। করোনা পজেটিভ শনাক্ত হবার পর থেকে তার সাথে মা নাজমা বেগম রয়েছেন। তবে একই কক্ষে থাকলেও মা ছিলেন আলাদা বিছানায়। তিনি নিয়মিত ছেলেকে সাহস যোগাচ্ছেন। ছেলে সায়েমের হাতে ট্যাব দেয়া হয়েছে। ওই ট্যাবে বিভিন্ন ধরণের কার্টুন ও খেলাধুলা ডাউনলোড করে দেয়া হয়েছে। সার্বক্ষনিক যাতে সে হাসিখুশি থাকে, তার জন্য বসতঘরের অন্য কক্ষ থেকে পরিবারের অপর সদস্যরা তার সাথে নানাকথা বলছেন। তাকে দেশী ফলমূল খেতে দেয়া হচ্ছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাগণ ওই স্কুলছাত্রের খোঁজখবর রাখছেন। পাশাপাশি এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে সায়েমের জন্য নানা রকমের ফলমূল ও খেলনাসামগ্রী সমৃদ্ধ কার্টুন ইপহার দেয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, করোনা পজেটিভ শিশু সায়েমের পিতা আবুল কালাম অতিসম্প্রতি করোনায় মৃত একজনের সরাসরি সংস্পর্শে গিয়েছিলেন। আবুল কাশেম নামের ওই করোনা রোগী বুধবার দিবাগত রাতে সিলেট সামসুদ্দীন হাসপাতালে মারা যান। বৃহস্পতিবার তাকে মাটিজুরার মালোপাড়ায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। আবুল কাশেম আর আবুল কালাম ঘনিষ্ট আত্মীয়। এ সুবাধে কালাম নিহত কাশেমের সাথে সরাসরি সংস্পর্শে যান। বর্তমানে কালাম কাশেমের বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে আছেন। তিনি মাত্র একদিনের জন্য নিজ বাড়ি নালবহরে আসেন। আর এতেই সংক্রমিত হয়ে পড়ে শিশু সায়েম। তবে ছেলে সায়েম সংক্রমিত হলে আবুল কালামের করোনার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে।

শিশু সায়েম আহমদের চাচা আবু বক্কর বলেন, আমার ভাতিজা সায়েম শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ আছে। তাঁর শরীরে করোনা ভাইরাসের কোন উপসর্গ নেই। চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে বাড়িতে রেখে ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ ফলমূল, গরম পানি, মাল্টা ও লেবুর রস, কালোজিরা খেতে দেয়া হচ্ছে। মায়ের সাথে বাড়ির কক্ষে তাঁর দিনরাত কাটছে। তিনি আরও বলেন, সায়েম আসলে বাইরে যাবার জন্য ছটফট করছে। আমরা তাকে বুঝাচ্ছি, এখন বাইরে যাওয়া উচিত নয়। সপ্তাহ খানেক পরই আবার বাইরে যেতে পারবে। ভাতিজাকে এমন মিথ্যে আশ্বাস দিতেও মন সায় দেয় না, তবুও দিচ্ছি। আল্লাহ সবাইকে করোনাভাইরাসের মতো মহামারি থেকে হেফাজত করুন।’

বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডাঃ আবু ইসহাক আজাদ বলেন, করোনা পজিটিভ শনাক্ত হলে সাধারনত আইসোলেশনে থাকতে বলা হয়। তাছাড়া সায়েমের শরীরে কোন উপসর্গ নেই। এরপরও তাকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মোতাবেক ঔষধপত্র দেয়া হয়েছে। নিজের বসতঘরে মায়ের সেবায় হোম আইসোলেশনে আছে সায়েম। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং শারীরিক সুরক্ষা সরঞ্জাম পরে মা-ই সেবা করতে পারছেন তার শিশু সন্তানের। আমরা নিয়মিত সায়েমের শারীরিক অবস্থার খোঁজ রাখছি। শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকায় নিজ বাড়িই আমরা ভালো মনে করেছি।

‘এবি টিভি’র সর্বশেষ প্রতিবেদন-