সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন সিলেট-৫ (কানাইঘাট-হজিগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক বিরোধীদলীয় হুইপ সেলিম উদ্দিন।

সোমবার (১৩ জুলাই) রাতে ‘বিয়ানীবাজার নিউজ২৪’ এ প্রেরিত এক শোক বিবৃতিতে সেলিম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রবেশের পর কখনও আড়ালে যাননি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ৷ এরশাদ সরকারের আমলে দেশের যেমন উন্নয়ন হয়েছে, তেমনি দেশের মানুষের কাছে তাঁর একটা জনভিত্তি গড়ে উঠেছিল৷ তিনি বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জীবন ছিল উত্থান-পতন, সাফল্য-ব্যর্থতায় বর্ণিল। প্রবল প্রতিরোধের মুখেও জাতীয় পার্টি নামের রাজনৈতিক সংগঠনটিকে তিনি ধরে রেখেছিলেন, সৃষ্টি করেছেন বহু অনুসারী। তিনি ইতিহাসের পাতায় অমোচনীয় স্বাক্ষর রেখে গেছেন। তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় দেশের আপামর মানুষের কাছে একটি প্রিয় নাম ছিল প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। রাষ্ট্র পরিচালনায় তার দৃঢ়চেতা মনোভাব এদেশের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিল। দেশের গ্রামীণ উন্নয়নের স্বপ্নদ্রষ্টা পল্লীবন্ধু সাবেক রাষ্টপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ৬৮ হাজার গ্রাম উন্নয়নে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। উপজেলা পরিষদ গঠন, সমবায় সমিতির মাধ্যমে পল্লী অঞ্চলে মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, গ্রামীণ যোগাযোগ স্থাপন তার মাধ্যমে সুচিত হয়েছিল। সেই মহান ও দুরদর্শী সাবেক রাষ্ট্রনায়ক দেশের আপামর মানুষের হৃদয়ে আজীবন বেঁচে থাকবেন তার সৃষ্টি ও কর্মের কারণে।

শোক বার্তায় সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছেন সেলিম উদ্দিন। পাশাপাশি শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।

উল্লেখ্য, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত ভারতের কোচবিহার জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। পরে তার পরিবার রংপুরে চলে আসেন। রংপুরেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এরশাদ। ১৯৬৯ সালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি পেয়ে ১৯৭১-৭২ সালে সপ্তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তান থেকে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ওই বছরই আগস্ট মাসে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে তাকে সেনাবাহিনীর উপপ্রধান হিসেবে নিয়োগ করা হয়। ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে এরশাদকে সেনাবাহিনী প্রধান পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৭৯ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন।

১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন। ১৯৯১ সালে এরশাদ গ্রেপ্তার হন। ১৯৯১ সালে জেলে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় এরশাদ রংপুরের পাঁচটি আসনে বিজয়ী হন। ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনেও এরশাদ সংসদে পাঁচটি আসনে বিজয়ী হন। ১৯৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি জামিনে মুক্ত হন। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরশাদের জাতীয় পার্টি ১৪টি আসনে জয়ী হয়। ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের সঙ্গে মহাজোট গঠন করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের  নির্বাচনে তার দল ২৭টি আসনে বিজয়ী হয়। এরপর দশম ও সবশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি সাংসদ হন। তিনি চলতি জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা ছিলেন। গত বছরের এই দিনে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

নদীর উপর র্নিঘুম রাত কাটছে বিয়ানীবাজারের বহু পরিবারের