আষাঢ়ে বাদল ধারায় টই-টুম্বুর নদী-নালা। গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার দু’উপজেলার আমুড়া-শিকপুর ফেরীঘাট এখন হাজার হাজার মানুষের ভরসার বাহন হচ্ছে ছোট ছোট ডিঙি নৌকা। যে পথটি এক সময় শত শত ছোট-বড় বাহন ও হাজার মানুষের যাতায়াতে মুখরিত ছিল। বর্তমানে যান চলাচল বন্ধ থাকলেও থেমে যায়নি দু’পাড়ের ১০/১২টি গ্রামের মানুষের চলাচল। মারাত্বক ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন খরস্রোতা কুশিয়ারা নদী পাড় হন ছোট ছোট ডিঙি নৌকায়। নদীর উভয় পাড়ের শত শত শিক্ষার্থীরা সকাল-বিকেল পাড় হন এই পথে। কৃষকের চাষকৃত শাক-শবজি সিলেটসহ বিভিন্ন উপজেলায় নিয়ে যেতে নদী পারাপার একমাত্র বাহনই ছোট নৌকা। ফেরীঘাটের উভয় পাড়ে সাড়িবদ্ধ ভাবে এসব ১২ হাত লম্বা সাইজের নৌকা রয়েছে বেশ কয়েকটি। এছাড়া সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত যাত্রী পারাপার করে জীবিকা নির্বাহ করছেন নদী তীরবর্তী এলাকার এসব ডিঙি নৌকার মাঝিরা। নদী পারাপারে ঝুঁকি থাকলেও তা মেনে নিয়ে চলাচল করেন চাকুরীজীবি, ব্যবসায়ীসহ সকল শ্রেণীর মানুষ। তাদের দাবি আবারও ফেরী চলাচল শুরু হলে দু’উপজেলার মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ও যাতায়াতের পথ সুগম হবে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আমুড়া ও বুধবারী বাজার ইউনিয়নের দু’পাড় সীমানা জুড়ে অবস্থিত বহরগ্রাম-শিকপুর ফেরীঘাট। ভোর থেকেই নদীর উভয় পাড়ে যাত্রী পারাপারের জন্য সারিবদ্ধ হয় বেশ কয়েকটি ছোট ছোট ডিঙি নৌকা, যা বহরগ্রাম-শিকপুর ফেরীঘাট দিয়ে পারাপারের একমাত্র বাহন। সারিবদ্ধ ডিঙি নৌকা দেখতে এক অপরূপ সৌন্দের সৃষ্টি করলেও পারাপারের নেই সেই স্বাদ। নৌকার সাইজ ছোট হওয়ার ফলে খরস্রোতা নদী পারাপারের রয়েছে মারাত্বক ঝুঁকি। এ ঘাট দিয়ে প্রতিদিন ৩টি উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন ও উভয় পাড়ের কালিজুরী, ছত্রিস, পুরুষপাল, শিকপুর, বহরগ্রাম, বানিগ্রাম, আওই, বাগিরঘাট, ঘাগুয়া, আমুড়াসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ যাতায়াত করেন। এ ঘাটের বর্তমান ইজাদার বুধবারী ইউপি সদস্য তাজুল ইসলাম। ইজাদারের কাছ থেকে দিনপ্রতি ৬শ’ টাকা হিসেবে ঘাটের দায়িত্ব নিয়েছেন একই ইউনিয়নের কালিজুরী গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক। ডিঙি নৌকায় পাড় হয়ে ইজারকে জনপ্রতি ২ টাকা দিতে হয়। তবে নৌকার মাঝিদের কাছ কোন ধরনের টাকা নেয়া হয় না বলেন জানান আব্দুর রাজ্জাক।

উল্লেখ্য, সিলেট থেকে বিয়ানীবাজার, বাড়ইগ্রাম, বড়লেখায় কুলাউড়ায় যাতায়াতের জন্য সংক্ষিপ্ত পথ ছিল গোলাপগঞ্জ ভায়া বিয়ানীবাজার বহরগ্রাম-শিকপুর ফেরীঘাট। বিগত ২০১৫ সালে কুশিয়ারা নদীর উপর চন্দরপুর-সুনামপুর সেতু নির্মাণের পর কদর কমে বহরড়গ্রাম-শিকপুর ফেরীঘাটের। এর কিছু দিনের মাথায় যান্ত্রিক ত্রুটি দেখি ফেরী চলাচল বন্ধ করা হলে তা আজো চালু হয়নি। নদীর পাড়ে নষ্ট হচ্ছে সরকারের কোটি মূল্যেও পল্টুন। দেখার যেন কেউ নেই। পুনরায় ফেরী চলাচলের জন্য বুধবারী বাজার ইউনিয়নের মানুষ বার বার মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভা-সমাবেশ করেও কোন সুফল পাননি।

এব্যাপারে বহরগ্রাম-শিকপুর ফেরীঘাটের ডিঙি নৌকার মাঝি, কালিজুরী গ্রামের অধিবাসী বদরুর হক জানান, প্রতিদিন নৌকা চালিয়ে ৩ থেকে ৪শ’ রুজি করা যায়। তা দিয়েই পরিবারে মা-বাবা ও ৩ সন্তানের আবার নিবারন করি। একই ঘাটের মাঝি আলী জানান, শুকনো মৌসুমে নদী কিছুটা স্রোতা কম থাকলেও বর্ষাকালে কুশিয়ারা নদী জলে ভরে উঠে কানায় কানায়। তার সাথে ব্যাপক স্রোতে যাত্রীদের জন্য যেমন থাকে ঝুঁকি, তেমনি নৌকা পারাপার করতে ব্যাপক কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। অপর মাঝি জামাল উদ্দিন জানান, পরিবারের আবার জুগাতে ঝুঁকির মধ্যেও নৌকা যাত্রী ঠানতে হয়। অন্য কোন কাজ না জানা থাকায় ছোট বেলা থেকেই নৌকার মাঝি পেশায় জড়িত রয়েছেন তিনি।

এ ব্যাপারে আমুড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রুহেল আহমদ প্রতিবেদককে জানান, বহরগ্রাম-শিকপুর ঘাটে ফেরী চলাচল বন্ধ হওয়ার পর থেকে এসব ছোট ছোট ডিঙি নৌকা দিয়েই যাতায়াত করেন শিক্ষার্থীসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ। নৌকা গুলো ছোট হওয়ায় পারাপারে ঝুঁকি থাকে অধিক। তবে পুনরায় ফেরী চলাচল বা এ ঘাটে সেতু নির্র্মাণ করা হলে উভয় পাড়ের মানুষের কষ্ট লাগব হবে। তিনি ফেরী চালুর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেন।