শেষ পর্যন্ত সিলেটবাসীর স্বপ্নপুরণ হচ্ছে ঢাকা সিলেট মহাসড়কের চারলেন প্রকল্প অনুমোদনের মাধ্যমে। নানা প্রতিকুলতা ও প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে একনেকে এ প্রকল্পটির অনুমোদন লাভ করায় খুশি সিলেটবাসী। এর নেপথ্যের কারিগর সিলেট-১ আসনের সাংসদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়ই নানা জটিলতার অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক ৬ লেন প্রকল্পটির চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া গেছে। অথচ এক সময় মেঘা এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন নিয়ে ঘোর অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিলো।

অবশেষে পূরণ হতে যাচ্ছে বৃহত্তর সিলেটবাসীর অনেক বড় একটি স্বপ্ন। সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে গতকাল মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি)।

‘সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন’ নামের এ মেঘা প্রকল্পে ১৬ হাজার ৯১৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা খরচের অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন ধরা দিতে শুরু করেছে সিলেটবাসীর হাতের মুঠোয়।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ প্রকল্পটি যাচাই-বাছাই করতে ৪৫-৬০ দিন সময় নেয়ার কথা বললেও নানা কারণে নির্দিষ্ট মেয়াদে তা সম্ভব হয়নি। পরে জুনের মধ্যে মহাসড়কের নকশার অনুমোদন চায় এডিবি।

প্রকল্পের দ্রুত অনুমোদনে এডিবি’র এদেশীয় আবাসিক প্রতিনিধি মনমোহন প্রকাশের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন দেখা করে তাগিদ দেন। পরে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে দেখা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রকল্পটির সকল প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সুপারিশ করেন। এছাড়াও এই মেঘা প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদনের ক্ষেত্রে যেখানেই জটিলতা দেখা দিয়েছে সেখানেই হস্তক্ষেপ করে অনুমোদন দ্রুততর করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

মঙ্গলবার প্রকল্পটির অনুমোদন শেষে তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি বলেন, প্রথমেই মহান আল্লাহর দরবারে শোকরিয়া আদায় করছি। সেই সঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীতকরণ বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি ছিলো। এটি ১৯৯২ সালে নির্মিত হওয়ার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় তা সম্ভবপর হয়ে উঠেনি। তবে সিলেটবাসীর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন অনেকদূর এগিয়ে গেছে।

ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আমার নির্বাচনি ইশতেহারের মধ্যে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের বিষয় ছিলো। মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীত হবার পর পুরো সিলেট অঞ্চল এবং মহাসড়কের অন্যান্য স্থানগুলো পর্যটন এবং শিল্পাঞ্চলগুলো উপকৃত হবে, যা শেষ পর্যন্ত জাতীয় অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে।

মঙ্গলবার একনেক সভা শেষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ‘সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্পটি ১৬ হাজার ৯১৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা খরচে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে সরকার দেবে ৩ হাজার ৬৭৩ কোটি ৯০ লাখ এবং এডিবি ঋণ দেবে ১৩ হাজার ২৪৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. মামুন-আল-রশীদ বলেন, মূল সড়কের উভয় পাশে ধীরগতির যান চলাচলের জন্য আলাদা সার্ভিস লেন নির্মিত হবে। বাঁক সরলীকরণসহ অধিকমাত্রার ট্রাফিক বিবেচনায় এনে ৮০ কিলোমিটার গতিবেগ নিশ্চিত করা হবে। শিল্প ও বাণিজ্যে গতিশীলতা আনতে এশিয়া হাইওয়ে নেটওয়ার্ক, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাত দেশের জোট ‘বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক) করিডোর, দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) করিডোরসহ আঞ্চলিক সড়ক নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে চারলেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।

প্রকল্পের আওতায় আলাদা সার্ভিস লেনসহ সড়ক নির্মাণে অতিরিক্ত ৯৮৬ দশমিক ৪৭ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। এর জন্য মোট ব্যয় হবে চার হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। ভূমি অধিগ্রহণে কাঁচপুর থেকে সিলেট পর্যন্ত ইউটিলিটিও স্থানান্তর করা হবে, নির্মাণ করা হবে ৩২১টি আরসিসি কালভার্ট। কালভার্টগুলোর মোট দৈর্ঘ্য হবে প্রায় এক হাজার ৩৮১ মিটার। ছোট-বড় ৭০টি ব্রিজসহ থাকবে। থাকবে পাঁচটি রেলওয়ে ওভারপাস।

উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ বিশেষ করে ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, ভুটান এবং চীনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশ কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। এসব বিবেচনায় প্রকল্পটি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।

লেনবিশিষ্ট মহাসড়কের উভয়পাশে ধীরগতির যান চলাচলের জন্য ৫ দশমিক ৫ মিটার প্রশস্ত করাসহ প্রকল্পের আওতায় ৬৬টি সেতু , ৩০৫টি কালভার্ট, ৭টি ফ্লাইওভার/ওভারপাস, ৬টি রেলওয়ে ওভারপাস থাকবে।

ঢাকা (কাঁচপুর) থেকে সিলেটের মোট দূরত্ব ২২৩ দশমিক ১২৮ কিমি। এর মধ্যে ১১ দশমিক ৫৬ কিলোমিটার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত। এর উন্নয়ন এলওসির আওতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং ২ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ভৈরব ব্রিজ বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রস্তাবিত সড়কের মোট দৈর্ঘ্য দাঁড়িয়েছে ২০৯ দশমিক ৩২৮ কিমি।

বিয়ানীবাজারে নির্মিত হচ্ছে আরেকটি উপকেন্দ্র, কমবে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও অতিরিক্ত চাপ