সিলেট জেলার একটি প্রবাসী অধ্যুষিত উপজেলা হচ্ছে গোলাপগঞ্জ। এই উপজেলার কয়েক লক্ষাধিক মানুষ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করেন এবং দেশের রেমিট্যান্স খাতে বিরাট অবদান রাখছেন। আর এই উপজেলায় নির্বাচন মানে রাজনীতির নতুন নতুন কৌশল। দেশ বিদেশের সবার নজর এখন নির্বাচনের দিকে।

প্রবাসী অধ্যুষিত গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আগামীকাল ৮ মে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা শেষ হয়েছে সোমবার রাত ১২টায়। শেষ দিনে প্রার্থী, সমর্থক ও নেতাকর্মীদের নির্ঘুম প্রচার প্রচারণায় মুখরিত গোলাপগঞ্জ উপজেলা। প্রচারণার শেষ দিনে প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী ইশতেহার তুলে ধরেন। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করার অঙ্গীকার করেন।

তবে ভোটাররা জানিয়েছেন, তারা সৎ যোগ্য প্রার্থীকেই বাছাই করে তাদের মূল্যবান ভোট প্রয়োগ করবেন। সর্বত্র এখন আলোচনার বিষয় প্রার্থীদের মধ্যে কে হাসবেন শেষ হাসি? কে হচ্ছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান? কারা হচ্ছেন ভাইস চেয়ারম্যান? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে অপেক্ষা করতে হবে ৮ মে বিকেল বেলা পর্যন্ত।

এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে তিন প্রবাসী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী তিন প্রার্থী হলেন দোয়াত কলম প্রতীকের বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মঞ্জুর কাদির শাফি এলিম (যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী), অপর প্রার্থী সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, ঘোড়া প্রতীকের শাহিদুর রহমান চৌধুরী জাবেদ (যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী) এবং ব্রাজিল যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, আনারস প্রতীকের আবু সুফিয়ান উজ্জল।

এই তিন প্রার্থীর মধ্যে তুমুল লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে। তবে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান দোয়াতের প্রার্থী মঞ্জুর কাদির শাফি চৌধুরী এলিম।

সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম অ্যাডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরীর মারা গেলে ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত উপ- নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে প্রায় বিশ মাস চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এই বিশ মাসে দায়িত্ব পালন করে তিনি জনগণের মন জয় করে নিয়েছেন বলে তার কর্মী-সমর্থকদের ধারণা। এবার পূর্ণ ৫ বছরের জন্য আবারো চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই নির্বাচনে প্রচার প্রচারণায় তার সাথে গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ রয়েছে।

এদিকে আরেক প্রার্থী আবু সুফিয়ান উজ্জ্বল। তিনি ভোটার মাঠে নতুন। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী সরওয়ার হোসেনের কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। সংসদ নির্বাচনে সরওয়ার হোসেনের পক্ষে উপজেলা জুড়ে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় তার সরব ভূমিকা ছিল। সরওয়ার হোসেনের সমর্থকদের বড় একটি অংশ আবু সুফিয়ান উজ্জলের সাথে রয়েছেন। এছাড়াও গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি অংশ তার সাথে প্রচার প্রচারণায় সক্রিয় রয়েছেন। অনেকেই মঞ্জুর কাদির শাফি চৌধুরী এলিমের শক্ত প্রতিপক্ষ বলে মনে করছেন।

অন্যদিকে শাহিদুর রাহমান চৌধুরী জাবেদও ভোটার মাঠে নবাগত। নবাগত হলেও তার সাথেও গোলাপগঞ্জ উপজেলার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ছাত্রলীগের একটি অংশ রয়েছে। এই তিন প্রবাসীর ভোটের লড়াইয়ে কে বিজয়ের শেষ হাসি হাসবেন তা নির্ধারণ করবেন উপজেলার ভোটাররা।

এ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক আবু সুফিয়ান আজম (টিয়াপাখি), উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ আহমদ (তালা), প্রবাসী আকমল হোসেন (বই), আল ইসলাহ নেতা নাবেদ হোসেন (চশমা) ও লবিবুর রহমান লবিব (টিউবওয়েল)।

ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) পদে সেলিনা আক্তার শিলা (ফুটবল), মো. নার্গিস আক্তার (কলস)।

এদিকে নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নির্বাচন যাতে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার শান্তিপূর্ণ ভাবে দিতে পারে এবং সব ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে মাঠে প্রশাসনকে চার স্তরের নিরাপত্তায় ঢেলে সাজানো হয়েছে।

গোলাপগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মাছুদুল আমিন জানান, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। এ নির্বাচনে কোন কারচুপির সুযোগ নেই। ইতিমধ্যে আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে ব্রিফিং করেছি।

গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার মো. আহসান ইকবাল বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। সবকটি ভোটকেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। আশা করছি গোলাপগঞ্জ উপজেলায় শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।