গোলাপগঞ্জ উপজেলার আনাচে-কানাচে মাদকের ছড়াছড়ি। হাত বাড়ালেই মিলছে বিভিন্ন ধরনের মাদক। মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ও সংশ্নিষ্টদের নিষ্ফ্ক্রিয়তায় মদ, গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবা, ফেনসিডিল, হুইস্কি, বিয়ারসহ নানা ধরনের মাদক পৌঁছে যাচ্ছে তরুণদের হাতে। উপজেলার একাধিক স্পটে রয়েছে মাদক ব্যবসায়ীদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ ভয়ে মুখ খুলতেও নারাজ।

দেশের সীমান্তবর্তী উপজেলা দিয়ে ভারত থেকে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য অতি সহজে গোলাপগঞ্জ তথা জেলা সদরে সরবরাহ করছে একটি চক্র। সন্ধ্যার পর চিহ্নিত কিছু স্পটে বসে মাদকের ভাসমান হাট। মাদক নিয়ন্ত্রণের বিষয় নিয়ে প্রায়ই উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা সভায় আলোচনা হয়ে থাকে। কিন্তু প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে দিন দিন প্রসার পাচ্ছে মাদকের ব্যবসা এবং বাড়ছে মাদকসেবীর সংখ্যা।

মাদক ব্যবসায়ীরা সুকৌশলে তাদের লোকজনের মাধ্যমে এসব মাদক আমদানি-রফতানি করে থাকে। আর ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় এই পেশায় জড়িয়ে পড়ছে উঠতি বয়সের তরুণরাও। পুলিশ মাঝে মধ্যে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত খুচরা বিক্রেতাদের আটক করলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে তাদের গডফাদাররা।

বাঘা ইউনিয়নের গোলাপ নগরের এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘উত্তর কান্দিগাঁও এলাকায় ইদানীং মাদকের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি। প্রশাসন থেকে এদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোলাপগঞ্জ পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিক বাসিন্দা জানান, সরস্বতী এলাকার মাতাব, রফিক, বকু, কামারগাঁওয়ের নানু ও তার পরিবার প্রকাশ্যে মাদকের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত থাকলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে পারছে না। পুলিশ মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করলেও তারা বীরদর্পে নীল ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ায় উঠতি বয়সী যুবসমাজ মরণনেশা মাদকে আসক্ত হচ্ছে।

সমকাল প্রতিবেদক কথা বলেছেন এলাকার কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে। তারা বলেন, আগামীতে যারা দেশের নেতৃত্ব দেবে সেই তরুণদের একটি বড় অংশ এখন ইয়াবা সেবন করে বিপথগামী হচ্ছে। সেই সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বিভিন্ন স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। মাদক বিক্রির বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট। মাদকাসক্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সমাজে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুনসহ নানা অপরাধপ্রবণতাও বেড়েছে।

এ বিষয়ে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ওসি একেএম ফজলুল হক শিবলী জানান, মাদকের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান অব্যাহত আছে। মাদকের সঙ্গে জড়িত যত প্রভাবশালীই হোক, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এর মূলোৎপাটন করা হবে।