বছরের শুরুতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৮৩ রানে অপরাজিত ইনিংসটিই মাহমুদউল্লাহর সর্বোচ্চ। এরপর লম্বা ইনিংস উপহার দেয়নি তার ব্যাট। অবশেষে ৮ বছর পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে বছরের প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকালেন দায়িত্বপ্রাপ্ত অধিনায়ক।এই সেঞ্চুরি পূরণের পর পর ৪৪৩ রানের বিশাল লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ৬ উইকেটে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করেছে ২২৪ রান তুলে। দীর্ঘ দিন পর পাওয়া এই সেঞ্চুরিটি অবশ্য লড়াকু মানসিকতার স্বাক্ষর। বাকিরা যেখানে উইকেট বিলিয়েছেন সেখানে বাংলাদেশের ইনিংসের পুঁজি বাড়িয়েছে এই মাহমুদউল্লাহর শতক। মাভুতার ৫৪তম ওভারে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পূরণ করেন।

অথচ সকালের সেশনটা ছিলো হতাশায় ভরা। চতুর্থ দিন জিম্বাবুয়েকে ফলোঅন না করিয়ে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। এমন সিদ্ধান্ত ছাপিয়ে সকালে আলোচনায় চলে আসে প্রথম সেশনে টপ অর্ডারের ব্যর্থতা। এই সেশনে ২৫ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহ-মিঠুনের ব্যাটে সেই ধাক্কা উতরানো গেছে। তাদের ১১৮ রানের জুটিতে। প্রথম ইনিংসে এগিয়ে থাকার সুবাদে প্রতিপক্ষকে এমনই রেকর্ড ছুঁড়েছে বাংলাদেশ যা পূরণে করতে হবে বিশ্বরেকর্ড!

কিন্তু সকালের শুরুটায় তেমন কিছুর আভাস মিলিয়ে গিয়েছিলো টপ অর্ডারের ব্যর্থতায়। সকালে দুই ওপেনার ফিরে গেছেন কাইল জার্ভিসের দিনের পঞ্চম ওভারেই। আগের ইনিংসে বিশাল সংগ্রহের ভিত গড়ে দেওয়া মুমিনুল-মুশফিকুও ছিলেন একই দোষে দোষী।

জার্ভিসের ওভারে অযথা বাইরের বল কাট করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন ইমরুল। ইনিংস লম্বা করার বদলে অস্থিরতার খেসারত দিতে হয়েছে তাকে। বল থেকে দূরে থাকার পরেও শট খেলতে গিয়ে ফিরে গেছেন ৩ রানে। এক বল বিরতি দিয়ে জার্ভিসের ভেতরে ঢুকে পড়া বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান লিটন দাস। বিদায় নেন ৬ রানে।

একই পদাঙ্ক অনুসরণ করেন মুমিনুল হকও। আগের ইনিংসে ১৬১ রান করা মুমিনুল। তিরিপানোর বাইরের বলটাকে অযথা খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে দেন চাকাভাকে। ফিরে যান রানের খাতা খোলবার আগেই।

ডাবল সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুর রহিমও একই ভুল করেছেন সকাল বেলাতেই। টেস্টে ধৈর্য্য ধারণ করার বদলে শট খেলতে গিয়ে বিদায় নেন দ্রুত।

তিরিপানোর শর্ট লেন্থের বাইরের বল টেনে পুল করতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন দ্রুত। ডিপ স্কয়ার লেগে ধরা পড়েন মাভুতার হাতে। আগের ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরিতে রেকর্ড করা মুশফিক ১৯ বল খেলে ফিরে যান ৭ রান করে।

সেই ধাক্কা সামলে উঠেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মিঠুন। অভিষেক টেস্ট খেলতে নামা মিঠুন আগের ইনিংসে শূন্য রানে ফিরলেও এই ইনিংসে তুলে নিয়েছেন অভিষেক হাফসেঞ্চুরি। ৬৭ রানে উড়ো শট খেলতে গিয়ে বিদায় নিয়েছেন সিকান্দার রাজার বলে।

তার পর আরিফুলকে বোল্ড করেন শন উইলিয়ামস। নতুন নামা এই ব্যাটসম্যান তড়িঘরি সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন ৫ রানে। এই দুজনের বিদায়ের পরেও স্থির ছিলেন রিয়াদ। দ্বিতীয় সেশন শেষ হওয়ার আগেই পুঁজি সমৃদ্ধ করতে ব্যাট চালিয়েছেন। একই সঙ্গে ব্যাটে থাকা রান খরাও ঘুচিয়েছেন। প্রথম ইনিংসের মতো এমন মুহূর্তে সঙ্গ দিয়েছেন সেই মেহেদী হাসান মিরাজ।

মিরাজ অবশ্য ব্যক্তিগত ১ রানে এলবিডাব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফেরার পথে ছিলেন। অনফিল্ড আম্পায়ার তাকে আউট দিলে রিভিউ নিয়ে বাঁচেন মিরাজ। অপরাজিত থাকেন ২৭ রানে। ১২২ বল খেলা মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত থাকেন ১০১ রানে। যেখানে ছিল ৪টি চার ও ২টি ছয়।

এই ইনিংসেও জিম্বাবুয়ের পেসাররা ছিলেন সফল। দুটি করে উইকেট নেন ডোনাল্ড তিরিপানো ও কাইল জার্ভিস। একটি করে উইকেট শন উইলিয়ামস ও সিকান্দার রাজা।