বড়লেখা পৌরমেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরীর উদ্যোগে প্রায় ১৫ বছর পর পৌরশহর দখলমুক্ত হলো। অবৈধভাবে ফুটপাতে থাকা ৩০০ হকারকে পৌরসভার নিজস্ব মার্কেটে পুনবার্সন করে রোববার রাতে দখলমুক্ত সড়কে জানযট নিরসনে স্থাপন করা হয়েছে ডিভাইডার। দীর্ঘদিন পর ফুটপাতে বসানো অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেয়ায় শহরবাসীর মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। এতে পাল্টে গেছে পৌরশহরের চিত্র। সড়কে ডিভাইডার স্থাপন ও শহরের সৌন্দর্য বর্ধনে এনসিসি ব্যাংকসহ কয়েকটি বেসরকারী ব্যাংক, বাজার ইজারাদার ও কিছু ব্যবসায়ী পৌরসভাকে আর্থিক সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন।

পৌরকর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, বড়লেখা শহরের প্রধান সড়ক মৌলভীবাজার-চান্দগ্রাম আঞ্চলিক সড়কটির বড়লেখা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উত্তর বাজারের ষাটমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত এলাকা খুবই ব্যস্ততম এলাকা। এই এলাকার ফুটপাত যত্রতত্র দখল করে গড়ে ওঠে অবৈধ দোকান ঘর। ফলে সংকুচিত হয়ে পড়ে সড়ক। সব সময় যানজট দেখা দিত। নাগরিক ও শিক্ষার্থীদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটতো। দুর্ভোগ পোহাতে হত জনসাধারণকে।

ফুটপাতের দখল ছেড়ে দেওয়া সবজি ব্যবসায়ী আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘মেয়র সাহেব পুনর্বাসনের কথা বলেছিলেন। তিনি তার কথা রেখেছেন। আমরা গরিব মানুষ। রাস্তার ধারে দোকানদারি করতাম। খুব চিন্তায় আছলাম (ছিলাম) ব্যবসার জায়গা পাইমু কিনা। পৌর মার্কেটে বড় জায়গা পাইছি।’আমির হোসেন ও সুমন আহমদ নামের দুইজন শ্রমিক বলেন, ‘আগে যানজটের কারণে অনেক কষ্ট অইত। এখন আর এ সমস্যা অইত নায়। খুব সুন্দর অইছে। অন্য রকম এক শহর মনে ওর।’

বিলাল আহমদ নামের আরেক সবজি ব্যবসায়ী বলেন, ‘মেয়রের পদক্ষেপ ভালো লাগছে। তিনি শক্ত ভূমিকা নিয়েছেন। অন্য কেউ যা করতে পারেননি তিনি তা করে দেখিয়েছেন। দীর্ঘদিনের যন্ত্রণার অবসান হয়েছে। স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা হাঁটতে পারতো না। দোকান পাট আর গাড়ি সব কিছু দখল করে রাখতো।’

পৌরসভার মেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী জানান, ‘বড়লেখা শহরকে যানজটমুক্ত রাখা আমার নির্বাচনী গুরুত্বপুর্ন ইশতেহার ছিল। এটা নিরসনের জন্য ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে দফায় দফায় সভা করি। ফুটপাত দখলমুক্ত হওয়ায় শহর যানজট মুক্ত হবে। সড়কে ডিভাইডার দেয়া হয়েছে। এটা করা সম্ভব হয়েছে হুইপ শাহাব উদ্দিন এমপির পরামর্শে ও ইউএনও ও ওসি, সদর ইউপি চেয়ারম্যানের সর্বাত্মক সহযোগিতায়।’ এছাড়া অনেক বেসরকারী ব্যাংক, বাজার ইজারাদার ও কিছু ব্যবসায়ী সড়কে ডিভাইডার স্থাপনে অর্থায়ন করেছেন। মেয়র জানান, প্রথম দফায় শহর থেকে ৫টি সিএনজি চালিত অটোরিকশা ষ্ট্যান্ড সরানো হয়। দ্বিতীয় দফায় বিভিন্ন দোকানের সামনের পাকা ঢালাই সরানোর জন্য বলা হয়। মালিকরা তা স্বেচ্ছায় অপসারণ করেন। যা ছিল শহরের যানজট ও জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ। তৃতীয় দফায় ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা তাদের দখল ছাড়েন। তাদের পৌর মার্কেটে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ সহিদুর রহমান জানান, ‘ফুটপাত দখলের কারণে শহরে যানজট লেগেই থাকতো। অনেক সময় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিও ঘটত। এখন নতুন করে কেউ যাতে ফুটপাত দখলে নিতে না পারে সে জন্য পুলিশের জোরালো তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।’

ইউএনও মুহাম্মদ সুহেল মাহমুদ জানান, ‘ বড়লেখা পৌরশহরের দীর্ঘদিনের একটা বড় সমস্যা ছিল ফুটপাত দখল। অনেক সরকারি ভূমিও অবৈধ দখলে ছিল। রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে পড়েছিল। আমি ও পৌরসভার মেয়র জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের নিয়ে সভা করি। সভায় ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দেওয়া হয়। পুনর্বাসনের বিষয়ে একটি কমিটিও গঠিত হয়। ফুটপাতের দখল ছাড়ার পর তাদের পুনর্বাসন করা হয়েছে। এখন বাজার অবৈধ দখল মুক্ত হয়েছে।’ এছাড়া সড়ক জনপথ বিভাগকে তাদের ভূমি যাতে পুরনায় অবৈধ দখলে না যায় সে দিকে তৎপর থাকতে বলা হয়েছে।