বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে কাঙ্ক্ষিত সড়ক প্রশস্তকরণ ও মেরামত কাজ শেষ করার আগেই পালিয়ে গেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। উন্নয়নের পরিবর্তে সিলেটের সঙ্গে বিকল্প যোগাযোগের এ সড়ক এখন মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা।

বিয়ানীবাজার-শিকপুর সড়কের মাথিউরা বাজার থেকে বহরগ্রাম পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত ও মেরামত করার জন্য বরাদ্দ করা হয় ২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রকৌশল শাখা সিলেটের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স দেলোয়ার হোসেনকে নিয়োগ দেন। গত বছরের জুনে সড়কের কাজ শুরু করা হয়। পাঁচ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ধীরগতিতে কাজ শুরু করে। সড়কের উভয়পাশের তিন ফুট প্রস্থ ও দুই ফুট গর্ত করে ইট-বালু দিয়ে সাবডেট ও মেকাডাম করার কথা। কিন্তু সড়কের উভয়পাশের এক কিলোমিটার অংশের দুই ফুট গভীর নালাটি এখন যানবাহন ও সাধারণ মানুষের গলার কাঁটা হিসেবে দেখা দিয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, বহরগ্রাম থেকে মাথিউরা পশ্চিমপাড় পর্যন্ত সড়কের তিন কিলোমিটার অংশের উভয়পাশে তিন ফুট করে গর্ত করা হয়। মাথিউরা পশ্চিমপাড় এলাকা থেকে দুধবকশী এলাকা পর্যন্ত এক কিলোমিটার অংশ গর্ত থাকায় প্রতিদিন ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। গত বছরের ডিসেম্বরে গর্ত পাশ কাটাতে গিয়ে গাড়ির ধাক্কায় এক স্কুল শিক্ষার্থী নিহত হয়।

বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা যায়, সড়কটি ১৮ ফুট প্রস্থ থেকে ২৪ ফুট প্রস্থে উন্নীত করার জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স দেলোয়ার হোসেনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ে সড়কের ১৫ ভাগ কাজ করার পর থেকে এ প্রতিষ্ঠানটি নিখোঁজ রয়েছে। ২০১৬ সালের ১৬ মে থেকে চলতি বছরের ২৩ মে পর্যন্ত কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এ প্রতিষ্ঠানটি মাত্র ১৫ ভাগ কাজ শেষ করেছে। ২ কোটি ৯৬ লাখ টাকার উন্নয়ন কাজের বিপরীতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জামানত গ্রহণ করা হয় মাত্র ২৯ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিখোঁজ ও কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বিয়ানীবাজার প্রকৌশল অফিস নতুন করে টেন্ডার আহ্বানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। অবশিষ্ট ৮৫ ভাগ কাজের জন্য ব্যয় হবে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এদিকে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স দেলোয়ার হোসেনের অফিসিয়াল মোবাইল নম্বরটি বন্ধ রয়েছে।

বিয়ানীবাজারের মাথিউরায় কাজের জন্য তৈরি করা অস্থায়ী অফিসটিও দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ। এখানে একটি সাইনবোর্ডে সিলেট শহরের কাজল শাহ নোয়াব রোড এলাকায় এ প্রতিষ্ঠানের অফিস উল্লেখ করা হলেও সিলেটে গিয়ে নির্ধারিত এলাকায় এ অফিসের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। স্থানীয় এক মুদি ব্যবসায়ী বলেন, এখানে একটি অফিস ছিল। কয়েক মাস আগে সেটি বন্ধ করে সাইনবোর্ড খুলে ফেলা হয়।

সিলেটের কাজল শাহ এলাকার বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটির প্রচুর ব্যাংক ঋণ রয়েছে। ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় এবং নির্ধারিত সময়ে সড়কের কাজ শেষ করতে না পারার কারণে চুপিসারে অফিস গুটিয়ে নেয়।

বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রকৌশলী রামেন্দ্র হোম চৌধুরী বলেন, কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কাজ শেষ করতে না পারায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। নতুন করে টেন্ডার আহ্বানের প্রস্তুতি চলছে।