দীর্ঘদিন থেকে বিয়ানীবাজার-সিলেট বিকল্প সড়কের পাশে লাসাইতলা এলাকায় বিয়ানীবাজার পৌরসভার বর্জ্য ফেলে স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট করছে পৌরসভা। গত বছর সড়কের পাশে পৌরবর্জ্য ফেলা বন্ধ অপসারণে দাবিতে মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করেছিলেন ভুক্তভোগী এলাকার বাসিন্দারা। পৌরসভার দায়িত্বশীলরা মাস দেড়েক বর্জ্য ফেলা বন্ধ রাখলে এরপর থেকে ফের বর্জ্য ফেলা শুরু করেন। এ নিয়ে দেশে ও প্রবাসে দেখা দিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পৌরসভার দায়িত্বশীল ও পৌর মেয়রকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন।

বিয়ানীবাজার-চন্দরপুর সড়কের লাসাইতলা এলাকায় পৌরবর্জ্য ফেলা বন্ধ ও বর্জ্য অপসারণ করার দাবি জানিয়েছেন মাথিউরা ইউনিয়নের প্রবাসী ও দেশের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ। শনিবার রাতে পৌর মেয়রের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে দেখা করে এ দাবি জানান তারা। এ সময় মেয়র দুঃখ প্রকাশ করে শিগগিরই পৌর বর্জ্য অপসারণ করা হবে বলে নেতৃবৃন্দকে আশ্বস্থ করেছেন।

২০০১ সালে বিয়ানীবাজার ইউনিয়ন ও পার্শ্ববর্তী তিন ইউনিয়নের আংশিক এলাকা নিয়ে পৌরসভা ঘটিত হয়। এর মধ্যে পৌরসভা প্রথম শ্রেণীয় পৌরসভায় উন্নীত হলেও পৌরবর্জ্য ফেলার নির্ধারীত ভূমি সংস্থান করতে পারেনি পৌরকর্তৃপক্ষ। ফলে দীর্ঘ  ১৮ বছর থেকে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে লুলা খাল ও বিয়ানীবাজার-চন্দরপুর সড়কের পাশে বিভিন্ন জমিতে। সৃষ্টি করছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ।

২০১৮ সালের আগস্টের মাঝামাঝিতে ভূক্তভোগি এলাকার যুব সমাজ পৌর মেয়রের সাথে দেখা করে বর্জ্য না ফেলার অনুরোধ করেন। পৌর কর্তৃপক্ষ কার্যকারি পদক্ষেপ না নেয়ায় ওই বছরের ২৭ আগস্ট সাধারণ শিক্ষার্থী ও স্থানীয় এলাকাবাসীসহ মাথিউরা, তিলপাড়া, কুড়ারবাজার, গোলাপগঞ্জের বুধবারী ইউনিয়নের বাসিন্দা লাসাইতলায় সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ করেন এবং মানববন্ধন করে দ্রুত বর্জ্য অপসারণের দাবি জানান। ভুক্তভোগীদের প্রতিবাদে কিছুদিন বর্জ্য অন্যত্র ফেলে আর্বজনা বালি দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু মাস দেড়েক যেতে না যেতেই পৌরসভা ফের বর্জ্য ফেলা শুরু করে ব্যস্ততম এ সড়কের পাশে।

এদিকে শনিবার রাতে যুক্তরাজ্য প্রবাসী কমিউনিটি নেতা মাহবুবু খান, ছাদ উদ্দিন, আব্দুল ওয়াদুদ, আতিক উদ্দিন, আতিকুর রহমান আতিক, মাথিউরা ইউনিয়নের  সাবেক চেয়ারম্যান জমির উদ্দিন, মাস্টার আব্দুর রাজ্জাক, রাজনীতিবিদ সুরমান আলী, আক্তার হোসেন, সমাজ সেবী জাকির হোসেন তেরা, ব্যবসায়ী মুস্তাক আহমদ, ফখরুল লোদী শহীদ পরিবারের সন্তান আলমগীর হোসেন রুনু, সাবুল আহমদ, দেলওয়ার হোসেন জিলু,  ফয়জুর রহমান ও মাস্টার রুহুল আমীন পৌর মেয়রের সাথে সাক্ষাত করে দুর্ভোগের বিষয়টি উত্থাপন করেন এবং বিহিত ব্যবস্থার দাবি জানান।

প্রবাসী মাহবুব খান বলেন, পরিবার নিয়ে দেশে এসেছি। আমার ছেলেরা বিয়ানীবাজার প্রথম আসার পথে ময়লার স্তুপ দেখে ও দুর্গন্ধ পেয়ে খুব আপসেট হয়েছে। এছাড়া রাস্তা দিয়ে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষসহ দুই উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের বাসিন্দারা যাতায়াত করেন। সেই বোধ থেকে বর্তমানে দেশে অবস্থানরত প্রবাসী ও এলাকার কয়েকজনকে নিয়ে পৌরমেয়রের কাছে বিষয়টি অবগত করেছি। আশা করি তিনি আমাদের বিষয়টি চিন্তা করবেন। আমরা দেশের অন্য পৌরসভার মেয়রের মতো তাকে চিন্তা করি না। তিনি যুক্তরাজ্য প্রবাসী। তাঁর কাছ থেকে আমরা পরিচ্ছন্ন পরিবেশের নিশ্চয়তা চাই। তিনি আমাদের আশ্বস্থ করেছেন আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বিহিত ব্যবস্থা করবেন।

রাজনীতিবিদ সুরমান আলী বলেন, একটি সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশকে কিভাবে বিনষ্ট করা হয়েছে তা লাসাইতলায় গেলেই বুঝা যায়। সবুজ সড়কটি এখন বর্জ্য ফেলা সড়কের রূপ নিয়েছে। লুলাখালের ব্রিজ থেকে বিজিবি সদরদপ্তরের পূর্ব পর্যন্ত তিনটি জায়গায় সড়কে ও সড়কের পাশে বর্জ্য ফেলা হয়েছে। এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক ও লজ্জার। তিনি বলেন, এ বিষয়টি সামাজিকভাবে একটি সুন্দর ও সুষ্ঠু সমাধান সম্ভব। আমরা সে ধারাবাহিকতায় পৌর মেয়রের সাথে সাক্ষাত করে আমাদের দাবি উপস্থাপন করেছি। আশা করি তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

পৌরসভার মেয়র আব্দুস শুক্কুর বলেন, দীর্ঘদিন থেকে স্থায়ী জায়গা নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। সুবিধা মতো স্থানে জায়গা না পাওয়ায় এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। আশা করি আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি উপায় বের করবো। তিনি বলেন, সড়কের পাশ থেকে আমরা বর্জ্য অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছি। আশা করি আগামী কয়েখদিনের মধ্যে বর্জ্য সড়কের পাশ থেকে সরিয়ে নেয়া হবে। তিনি পথচারিদের সাময়িক অসুবিধার জন্য দুংখ প্রকাশ করেন।