স্যার, জীবনে সফল হতে হলে কী করতে হবে? শ্রেণিকক্ষে এই প্রশ্নের মুখোমুখী হয়েছি বহুবার। প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীদের উক্ত প্রশ্নের উত্তর দেবার কোন যোগ্যতাই আমার নাই। কিন্তু উত্তর দিতে হবে। কেননা, শিক্ষকের দায়িত্ব কেবল পাঠদানেই সীমাবদ্ধ নয় বরং ছাত্র-ছাত্রীদের ভেতর লুক্কায়িত সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে সহযোগিতাও করা। সেই বোধ থেকে আজকের লেখার অবতারনা। লক্ষ্যবস্তুুতে পদার্পন করার উপায় তালাশ করতে গিয়ে বিভিন্ন বই পড়েছি। অনেক লেখকের বায়োগ্রাফী পড়েছি। দৈনিক কাগজের পাতায় প্রকাশিত সফল মানুষদের গল্প পড়েছি। আলোকিতজনের বক্তব্য দেখেছি ও শুনেছি ইউটিউবে। সামগ্রীক পড়া ও শুনার সংমিশ্রণ হলো লেখাটি। লেখাটি তীরহীন গভীর সমুদ্রে চলতে থাকা জাহাজে ব্যবহৃত রাডারের মতো। রাডার অত্যন্ত বিশ্বস্থতার সাথে সঠিক দিক-নির্দেশনা দিয়ে জাহাজকে নির্দ্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌছে দেয়।

অর্থবহ জীবনঃ ইঞ্জিনিয়ার ড. হিশাম ইয়াহইয়া আল তালিব তাঁর “ট্রেনিং গাইড ফর ইসলামিক ওয়ার্কার” গ্রন্থে মি. এভারেজম্যান নামক এক কাল্পনিক ব্যক্তিকে দাঁড় করেছিলেন উদাহরণ হিসেবে। মি. এভারেজম্যান ১৯০১ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ঈ অথবা উ গ্রেড পেয়ে পরীক্ষায় পাস করলেন। ১৯২৪ সালে মিস মিডিওকারকে বিয়ে করেছিলেন। এভারেজম্যান জুনিয়র এবং বেটী মেডিওকার নামে এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা হলেন। চল্লিশ বছরের সাদামাটা চাকুরী জীবনে বিভিন্ন অগুরুত্বপূর্ণ পদ অলংকৃত করেছিলেন। তিনি কোন সময়ে ঝুঁকি বা সুযোগ নেননি। তাছাড়া, তিনি প্রতিভার স্ফুরণ এড়িয়ে চলেছেন। শুধু তাই নয়, কোন সময় কারো সাথে কোন কিছুতে জড়িত হননি। এভাবেই তিনি কোন লক্ষ্য-উদ্দ্যেশ্য, আকাঙ্খা, সংকল্প আস্থা ব্যতীত ৬০ বছরের জীবন সমাপ্ত করেছেন। অর্থাৎ, কখনো কিছু করতে চেষ্টা করেন নাই। তিনি জীবন থেকে অল্পই প্রত্যাশা করেছিলেন।

আরেকটি জেনিয়ুইন গল্প হলো এমন এক ব্যক্তি ২১ বৎসর বয়সে ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্থ হন। ২৬ বছর বয়সে প্রিয়তমা সহধর্মীনিকে হারান। কংগ্রেসের নির্বাচনে পরাস্থ হলেন ৩৪ বছর বয়সে। ৪৫ বৎসর বয়সে হারলেন আমেরিকান পার্লামেন্টের জেনারেল ইলেকশনে। ভাইস প্রেসিডেন্ট হবার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু এক্ষেত্রেও ব্যর্থ হলেন, বয়স তখন ৪৭। সিনেটের নির্বাচনে পুনর্বার হারলেন ৪৯ বছর বয়সে। শেষমেষ এই নাছুড় বান্দা ৫২ বছর বয়সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে দৃষ্টান্ত হয়ে রইলেন। এই হাল না ছাড়া ব্যক্তির নাম আব্রাহাম লিংকন। তাঁর মতে, পরাজয় মানে সমাপ্তি নয় বরং যাত্রা একটু দীর্ঘায়িত হওয়া মাত্র।

উপরের দুই ঘটনার প্রেক্ষিতে বলা যায় অর্থবহ জীবন হচ্ছে দ্বিতীয়টি। জাতি কখনো মি. এভারেজম্যানকে মনে রাখবে না। কেননা, জাতি মনে রাখার মতো কোন কর্ম তিনি রেখে যাননি। অন্যদিকে, গণতন্ত্রের সর্বাধিক পরিচিত ও গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞার কথাই ধরুন অথবা আমেরিকার ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী প্রেসিডেন্টের কথাই ধরুন আব্রাহাম লিংকনের নাম আসবেই। অথচ তিনি একজন কাঠুরিয়ার সন্তান। সুতরাং আমার প্রস্থানে সমাজ ক্ষতিগ্রস্থ হলে অথবা সমাজ আমার অভাববোধ করলেই বুঝতে হবে এটাই অর্থবহ জীবন।

সফলতা ও সার্থকতাঃ আর কতো আলোকিত মানুষদের সফলতার গল্প পড়তে হবে ! আমাদেরও তো ইচ্ছা করে আলোকিত মানুষ হতে, জীবনে সফলতা পেতে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা সফল হতে চাই। আর এভাবেই বসুন্ধরায় আমার জন্ম নেয়াকে সার্থক করতে চাই। কিন্তু সফল ও সার্থক হওয়া এতো সহজ ব্যাপার নয়। আবার অধরাও নয়। জীবনে সফলতা ও সার্থকতা পেতে নিচের তিনটি ধাপ ফলো করা যায়। তিনটি ধাপের মধ্যে প্রথম ধাপ সহিভাবে সম্পন্ন হলে দ্বিতীয় ধাপ শুরু করতে হবে। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ শেষ না করে তৃতীয় ধাপ বা চুড়ান্ত ধাপ শুরু করা যাবে না। এই ধারাবাহিতা রক্ষা করে আজই স্বপ্ন ছুঁয়ার প্রচেষ্টায় মশগুল হতে হবে।

প্রথম ধাপঃ 

বর্তমান অবস্থার উপর আস্থা ও বিশ্বাসঃ শ্রেণি রোল ১১ না ৪৯ সেটা বিবেচনায় না নিয়ে ঐ অবস্থায় নিজের উপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখাই হল প্রথম ধাপের মূল কথা। আমার সামর্থ আছে, আমার দ্বারা সম্ভব এই ধরনের ইতিবাচক মনোভাব তৈরী করা প্রথম ধাপের কাজ। সমাজে এমনও উদ্দীপ্ত তরুণ রয়েছেন যাদের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে তবে পড়ালেখা তেমন বেশী নেই। পড়ালেখা তো উচ্চ বেতনে চাকুরীর জন্য অত্যাবশ্যকীয়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বা ডিগ্রি মানুষের জ্ঞানার্জনে সহায়তা করে মাত্রÑ অভিজ্ঞতা বা কলাকৌশল বাড়ায় না। এমন মেলা উদাহরণ আছে যে প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি ছাড়াও বহু মানুষ জীবনে সফল ও সার্থক হয়েছেন। এই মানুষগুলোর মধ্যে কয়েকটি গুণ ছিল যেমন, তারা ইতিবাচক চিন্তার অধিকারী, পরিশ্রমী, সময়জ্ঞান সম্পন্ন, সাধ্যের মধ্যে উচ্চাকাংখী এমনকি সর্বাবস্থায় আশাবাদী।

মানুষ বা কর্ম সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষন না করাই ইতিবাচক চিন্তা। পজিটিভ মনোভাব সম্পন্ন মানুষের কিছু বৈশিষ্ট্য হল তারা দয়ালু, আত্মবিশ্বাসী, ধৈর্য্যশীল এবং নিরহংকার।প্রতিটি সেকেন্ডকে কাজে লাগিয়ে সাধ ও সাধ্যের ভেতর থেকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে অবিরাম ছুটে চলাতেই পরিশ্রমী মানুষের পরিচয় মেলে। এক্ষেত্রে নিরাশার কোন স্থান দেয়া চলবে না। ইসলামের ইতিহাস থেকে জানা যায় প্রত্যেক নবী-রাসুলগণ পরিশ্রমী ছিলেন। তাঁদের নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল। লক্ষ্য হাসিলে পেরেশানী ছিল এবং সবসময় আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাসী ছিলেন। আর ছিলেন অসম্ভব আশাবাদী; কেননা যারা আল্লাহর উপর ভরসা রাখে তারা আশাবাদী না হয়ে পারে না। শুধুমাত্র আনন্দ-ফুর্তিতে, আরাম-আয়েশে আর ঘুমিয়ে জীবন কাটিয়ে দেবার জন্য সৃষ্টিকর্তা আমাদের পৃথিবীতে পাঠান নাই। বরং সূরা আল বালাদের ৪ নং আয়াতে আল্লাহ বলছেন, “আমি মানুষকে কষ্ট ও পরিশ্রমের মাঝে সৃষ্টি করেছি।”

দ্বিতীয়ত: প্রাতিষ্ঠানিক সার্টিফিকেট যাদের রয়েছে তারা একে বাড়তি এডভান্টেজ হিসেবে বিবেচনায় নিতে হবে।

 দ্বিতীয় ধাপঃ 

লক্ষ্য স্থিরীকরণঃ নিজ সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব তৈরী হলে কেবল দ্বিতীয় ধাপের কার্যক্রম আরম্ব করতে হবে। অত্যন্ত কঠিন এ কাজটি করতে হবে খুবই ভেবে চিন্তে। লক্ষ্য নির্ধারণ করার পূর্বে অর্জিত জ্ঞানের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে আসতে হবে আমি কী হতে চাই? আমার দ্বারা কী হওয়া সম্ভব? কাঙ্খিত পেশাটি ক্যারিয়ার পরিকল্পনায় স্থান দেওয়ার পূর্বে সে সম্পর্কে প্রয়োজনীয় পঠন-পাঠন এবং পরীক্ষা খুব জরুরী। পেশা সম্পর্কে ধারণা ও তথ্য সংগ্রহের জন্য যে বিষয়গুলোর সাহায্য নেয়া যেতে পারে তাহলোঃ

(ক) সংশ্লিষ্ট পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের পরামর্শ নেয়া যায় যেমন, আমি যদি একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হতে চাই তাহলে আমার উপজেলায় এমন একজন ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে তাঁর পরামর্শ নিতে পারি। সরকারী কর্মকর্তা হতে কী কী যোগ্যতা প্রয়োজন আর প্রসেসটাই বা কী সে বিষয়ে জ্ঞান নিতে পারি।

(খ) কাঙ্খিত পেশার ক্ষেত্রসমূহে সরেজমিনে ভ্রমন যেমন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ভূমি অফিসার অথবা সমাজসেবা অফিসারের কর্মক্ষেত্রে ভ্রমন করা যেতে পারে।

(গ) সংশ্লিষ্ট পেশা সম্পর্কে লিখিত বই, তথ্যবহুল সাক্ষাৎকার, খবরের কাগজ পড়ে তথ্য জানা যাবে। এভাবেই আমাদের পছন্দের পেশাকে নির্দ্দিষ্ট করতে হবে। শুধু নির্দ্দিষ্ট করলেই চলবে না বরং একে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে অর্জনের চেষ্টা ফিকির করতে হবে। অর্থাৎ লক্ষ্যটাকে স্বপ্নে পরিণত করতে হবে। স্বপ্ন হচ্ছে সেটাই যেটা লক্ষ্য অর্জনের পূর্ব পর্যন্ত ব্যক্তিকে ঘুমাতে দেয় না।

 তৃতীয় ধাপঃ

লক্ষ্যকে স্বপ্নে রুপান্তরকরনঃ আশা করি এতক্ষনে আমরা একটা নির্দ্দিষ্ট লক্ষ্য পেয়ে গেছি। এই ধাপে আমরা দেখবো লক্ষ্য অর্জনে আমাদের সীমাবদ্ধতা কী কী আছে। এই বাধা বা সীমাবদ্ধতাসমূহ খুঁজে বের করে করে সামনের লক্ষ্যপানে দৌড়াতে হবে। এক্ষেত্রে তিনটি বিষয়ের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে হয়।

(ক) সময়জ্ঞানঃ আমরা কতো হেলায় ফেলায় সময় নষ্ট করি যার ইয়াত্তা নেই। সময়কে মোটেও গুরুত্ব দেই না। একবারও কী ভেবে দেখেছি দিনে কতবার ১৫ মিনিট, ৩০ মিনিট বা ১ ঘন্টা করে সময় নষ্ট করছি অযথা আড্ডায় অথবা বেহুদা ঘুমিয়ে। এভাবে আমাদের হারিয়ে যাওয়া প্রতিদিনের ১৫ মিনিট মানে বছরে পূর্ণ ১১ দিন আর প্রতিদিনের ৩০মিনিট মানে বছরে ২২ দিন। যদি প্রতিদিন ১ ঘন্টা করে সময় নষ্ট করি বছরে ৪৪ দিন অর্থাৎ, এক মাসেরও বেশী সময় অযথা বরবাদ করছি। এই বিষয়ে মুহাম্মদ (সা:) বলেছেন, দুজন ফেরেশতার নিম্নরুপ আহবান ব্যতীত একটি প্রভাত ও সকাল আসে না- হে আদম সন্তান! আমি একটি নতুন দিন এবং আমি তোমার কাজের স্বাক্ষী। সুতরাং আমায় সর্বোত্তম ব্যবহার কর। শেষ বিচারের দিনের আগে আমি আর কখনও ফিরে আসবো না।’ উক্ত হাদিসে একটি উদাত্ত আহবান রয়েছে আর রয়েছে এক ধরনের সতর্কীকরণ। আহবানটি হল এই “আমায় সর্বোত্তম ব্যবহার কর”। সতর্কীকরণ হল “২৪ ঘন্টার ব্যাপারে কিয়ামতের দিনে আজকের দিনটি সাক্ষ্য প্রদান করবে”। বড়ই কঠোর সতর্কবার্তা বটে।

আজকের কাজ আগামী দিনের জন্য ফেলে রাখা ঠিক নয়। বরং আজকের কাজ শেষ করে আগামীকালের ব্যাপারে চিন্তা করা উচিত। পবিত্র কুরআনের সূরা হাশরের ১৮ নং আয়াতে আল্লাহ বলছেন, “মুমিনগণ তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত আগামীকালের জন্য সে কী প্রেরন করে তা চিন্তা করা। আল্লাহকে ভয় করতে থাকো। তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে খবর রাখেন।” তাহলে এই সিদ্ধান্ত নেয়াই যায় আমরা অযথা ফেসবুকে, বেহুদা আড্ডায়, আন্দাজি ঘুমে সময় নষ্ট না করে কাঙ্খিত লক্ষ্যপানে ছুটতে থাকবো।

(খ) সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দক্ষতাঃ আমি যে বিষয় নিয়ে অনার্স, মাষ্টার্স করছি সেই বিষয়ে ভালো দখল থাকতে হবে। দেখা গেছে যেকোন চাকুরীর ইন্টারভিউয়ে সংস্লিষ্ট বিষয় থেকে বেশী প্রশ্ন করা হয়। ধরুন পদার্থ বিজ্ঞান হলো আমার অনার্সের বিষয়। তাই পদার্থ বিজ্ঞানের উপর যথেষ্ট পড়াশুনা থাকা জরুরী।

(গ) সংস্লিষ্ট বিষয়ের বাইরে দক্ষতা বা সাধারণ জ্ঞানঃ আমরা যেকোন বিষয়ে ডিগ্রী অর্জন করি না কেন এই জ্ঞান পর্যাপ্ত নয়। পঠিত বিষয়ের বাইরে জ্ঞান আহোরন করতে হবে। বাংলা, ইংরেজী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি, ইতিহাস এমনকি গণিতেও মুটামুটি জ্ঞান থাকতে হয়। দৈনন্দিন বিজ্ঞানেও দখল থাকতে হয়। অর্থাৎ, পঠিত বিষয়ের বাইরে অন্যান্য বিষয়ে সম্যক জ্ঞান থাকতে হয়। এজন্য অষ্টম, নবম এবং দশম শ্রেণির পাঠ্যবইগুলো অধ্যয়ন করলে ভালো অবস্থান তৈরী করা যায়। অনেক ছাত্র-ছাত্রী তাই অনার্সে অধ্যয়নের পাশাপাশি অষ্টম, নবম বা দশম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের টিউশনি পড়ান। এতে করে অতীতের পড়ে আসা বিষয়গুলো আবারো ঝালাই করার সুযোগ হয়। সাথে সাথে পকেটে টাকাও আসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা শুধুমাত্র টিউশনি করে উপার্জন করেন। তবে অতিরিক্ত টিউশনি একাডেমিক রেজাল্টের উপর প্রভাব ফেলে। সর্বোচ্চ দুটি প্রাইভেট টিউশনি ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার গঠনে বেশ কার্যকরী।

স্বপ্ন ছুঁয়ার কৌশলঃ
সফলতা ও সার্থকতার সর্বশেষ ধাপ অর্থাৎ লক্ষ্যটা যখন স্বপ্নে রুপ নেয় তখন সেটাকে টাচ করার বিশেষ কিছু কৌশল আলোচিত হবে এই পর্যায়ে। প্রথমত: সর্বোচ্চ চূড়া বা শ্রেষ্ট হবার চেষ্টা করতে হবে। আমি যা হতে চাই সেই ফিল্ডে যারা পৃথিবীতে সফল হয়েছেন তাদেও জীবনী পড়তে হবে। তাদের লাইফ স্টাইল সম্পর্কে জানতে হবে। সেই আলোকে নিজের জীবনের ইচ্ছাটা মিলিয়ে নিয়ে লক্ষ্যের একেবারে শিখরে আরোহনের বাসনা বাস্তবায়নে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হবে। এখানে স্বপ্নকে টাচ্ করার ছয়টি কৌশল দেখানো হলঃ

(ক) আকাঙ্খিত পেশায় সফল ও সার্থক একজনকে মডেল বানাতে হবে। তাহলে কাজে গতি আসবে। আগামীর পথচলা সহজ হবে। নির্দ্দিষ্ট গতিপথ থেকে পিছলে পড়ার রিস্ক কমে যাবে। আমরা অনেক সময় বাচ্চাদের বলি পাশের গ্রামের অমুকের মতো তোমাকেও বিজ্ঞানী হতে হবে, এই অমুকই হলেন মডেল।

(খ) অলোকিত ও সফল মানুষদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলতে হবে। তাঁদের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যায়। সফলতার কাহিনী তাঁদের নিজ মুখ থেকে শুনার অভিজ্ঞতাই আলাদা। অলোকিত মানুষরা কিভাবে আলোকিত তাঁদের সাথে কথা বলে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে মনে মনে।

(গ) পাঠ্যবই অধ্যয়নের পাশাপাশি দেশী ও বিদেশী বিভিন্ন লেখকদের বই পড়ার অভ্যাস করতে হবে। শ্রেষ্ট বইয়ের খবর রাখতে হবে। জীবনে সফল হওয়ার শ্রেষ্ট কৌশল এটা। একটি মাত্র বই জীবন বদলে দেবার শক্তি রাখে। যদিও বই কেনা ব্যয় সাপেক্ষ ব্যাপার। এক্ষেত্রে পাবলিক লাইব্রেরীর সদস্য হয়ে বই পড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

(ঘ) ইংরেজীতে কথা বলতে ও লিখতে জানা আবশ্যক বিবেচনা করতে হবে। প্রতিদিন ১০ টি ইংরেজী শব্দ শেখার অভ্যাস করা যেতে পারে। এছাড়া দৈনিক ইংলিশ পত্রিকা পড়ার ব্যবস্থা করলে আরো ভালো। উপজেলা বা গ্রাম লেবেলে সপ্তাহে ১ টি ইংরেজী কাগজ কিনে পুরো সপ্তাহ কভার দেয়া যায়।

(ঙ) গঠনমুলক ও শিক্ষামুলক দেশী-বিদেশী সিনেমা দেখা এবং গান শুনা শিক্ষণের মধ্যে পড়ে। ভালো সিনেমা বা ভালো গান মানুষের জীবনে ভাইটাল প্রভাব ফেলে। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধকে উপজীব্য করে চাষী নজরুল ইসলাম নির্মীত সিনেমা ‘ওরা ১১ জন’ বা ‘সংগ্রাম’ দেখে যুদ্ধের বিভিষিকাময় মুহুর্ত অনুভব করে আমরা শিউরে উঠি। একইভাবে, গান শুধু যে অন্তরাত্মাকে জাগিয়ে তোলে তা নয়, জাগিয়ে তোলে নৈতিকতাকেও। গান চিত্তকে সতেজ করে। তাই ভালো গান, দেশাত্মবোধক গান শুনতে হবে।

(চ) ঐতিহাসিক জায়গা, সুন্দর ও আকর্ষণীয় জায়গায় ভ্রমন করতে হবে। ভ্রমনের পূর্বে ঐ জায়গা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা নিয়ে গেলে ভালো হয়। আরো ভালো হয় ঐ স্থানের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস জেনে নেয়া।

শেষ কথাঃ সর্বোপরি আমাদের মহান সৃষ্টিকর্তার সাহায্য চাইতে হবে। আমরা যতই চেষ্টা সাধনা করি না কেনো বিশ্বাস রাখতে হবে আল্লাহর সাহায্য ও দয়া ব্যতীত জীবনে কোন সফলতা ও সার্থকতা আসে না।

 

লেখক পরিচিতি-
প্রভাষক (সমাজবিজ্ঞান), আছিরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ,
সদস্য সচিব, শিক্ষা উন্নয়ন ট্রাস্ট বিয়ানীবাজার,
সাবেক খন্ডকালীন প্রভাষক (সমাজবিজ্ঞান), বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজ, বিয়ানীবাজার।