যুক্তরাজ্য প্রবাসী এক নারীর সঙ্গে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে তোলপাড়ের পর টনক নড়েছে ওসমানী বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষের। শুক্রবার (৩০ জুলাই) রাতে তারা জামিলা চৌধুরী নামে ওই প্রবাসী যাত্রীর বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন এবং এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।

জানা গেছে, সিলেট থেকে লন্ডনে সরাসরি ফ্লাইট বাংলাদেশ বিমানের বিজি-২০১ এর যাত্রী ছিলেন ভোক্তভোগী জামিলা চৌধুরী। গত বুধবার ওই ফ্লাইটে তার ‍যুক্তরাজ্য যাওয়ার কথা ছিল। অভিযোগ রয়েছে, তিনি ওইদিন যুক্তরাজ্যে যেতে পারেননি ওসমানী বিমানবন্দরের কিছু কর্মকর্তার অসৌজন্যমূলক ও অন্যায় আচরণের কারণে।

এ ঘটনার ভিডিও পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়লে টনক নড়ে ওসমানী বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষের। এরপর গতকাল সন্ধ্যায় ভুক্তভোগী জামিলা চৌধুরীর বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের স্টেশন ম্যানেজার চৌধুরী মো. ওমর হায়াতের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল । তারা তাকে শান্তনা দেওয়ার পাশাপাশি আগামী ৪ আগস্ট যুক্তরাজ্যে যেতে তার টিকেটের ব্যবস্থা করে দেওয়ারও আশ্বাস দেন। এছাড়া এ ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে দোষী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।

ভুক্তভোগীর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বাবার অসুস্থতার খবর পেয়েই যুক্তরাজ্যে সন্তানদের রেখে দেশে আসেন জামিলা চৌধুরী। বাবাকে দেখার পর গত বুধবার বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে তার যুক্তরাজ্য ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। সেখানে কোয়ারেন্টিনের জন্য হোটেলও বুকিং করে রাখা ছিল। কিন্তু ওইদিন (বুধবার) নির্ধারিত সময়ে বাংলাদেশ বিমানের কাউন্টারে পৌঁছান তিনি। কিন্তু সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তা তার কাছে লোকেটর ফর্ম চান। তখন মোবাইলে থাকা লোকেটর ফর্মটি দেখালেও এর প্রিন্ট কপি চান এক কর্মকর্তা। সেখান থেকেই ঘটনার সূত্রপাত।

জামিলা চৌধুরীর ভাষ্যমতে, ‘বারকোডযুক্ত লোকেটর ফর্মের প্রিন্ট কপি বাধ্যতামূলক হতে পারে না। কারণ সবকিছুই যেখানে এখন ডিজিটালি। তবে বিমানের ওই কর্মকর্তা সেটি মানেননি।’ খানিকক্ষণ বাক-বিতণ্ডার পর জামিলা চৌধুরী বিমানবন্দরের নির্ধারিত কাউন্টারে লোকেটর ফর্ম প্রিন্ট করার জন্য যান। কিন্তু সেখানে দীর্ঘ লাইন থাকায় তা প্রিন্ট করাতে পারেন নি। এখানে দুই দফায় বেশ খানিকটা সময় চলে যায় বলে জানান জামিলা চৌধুরী।

জামিলা চৌধুরী বলেন, ‘এরপর আমার লাগেজে অতিরিক্ত মালামালের কারণে আমার কাছে অনৈতিকভাবে টাকা দাবি করেন সেই কর্মকর্তা। আমি তা দিতে অপারগতা জানাই এবং বলি অতিরিক্ত ওজনের লাগেজ ফিরিয়ে দিয়ে শুধুমাত্র একটি লাগেজ নিয়ে আমাকে বোর্ডিং পাস দেওয়ার জন্য। কিন্তু সেই কর্মকর্তা উত্তেজিত হয়ে আমার উপর পাসপোর্ট ছুঁড়ে মারেন এবং অকথ্য ভাষা ব্যবহার করেন। আমাকে বোর্ডিং পাস না দিয়েই লাইন থেকে বের করে দেন।’

তিনি বলেন, ‘আমি উপস্থিত অন্যন্য কর্মকর্তাকে অনুরোধ করি, কিন্তু কেউ আমাকে সাহায্য করেনি।’ এসময় জামিলা চৌধুরী বিমানবন্দরে নিজের অভিযোগ জানাতে চাইলেও তার অভিযোগ কেউ গ্রহণ করেনি।

বিমানবন্দরে থাকা অবস্থায় নিজের মোবাইলে কয়েকটি ভিডিও করেন মিসেস চৌধুরী। একটি ভিডিওতে দেখা যায় কর্তব্যরত বিমান কর্মকর্তা বলছেন ‘আমাদের মধ্যে হিউমিনিটি (মানবতাবোধ) নেই। আপনি ম্যানেজারের কাছে যান, আমরা আপনাকে কোনো সাহায্য করতে পারবো না।’ আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়- সাহায্য চাইতে গেলে এক কর্মকর্তা লাগেজ বেল্টের উপর দিয়ে লাফিয়ে পালাচ্ছেন।

তবে বিমান কর্মকর্তারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ফ্লাইট ধরতে না পারার কারণ হিসেবে বলছেন- অতিরিক্ত ওজনের লাগেজের কথা।

সিলেট বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের স্টেশন ম্যানেজার চৌধুরী মো. ওমর হায়াত বলেন, ‘ওই যাত্রীর সঙ্গে নির্ধারিত ওজনের চেয়ে ৪৪ কেজি মালামাল বেশি ছিল। প্রতি কেজি ২ হাজার ৬১১ টাকা হিসেবে এক লাখ টাকার উপরে পরিশোধ করার কথা। কিন্তু তিনি প্রথমে ওভার ওয়েটের মূল্য পরিশোধ করতে রাজি হননি। পরে যখন তিনি অতিরিক্ত লাগেজ ছেড়ে যেতে রাজি হন তখন কাউন্টার বন্ধ হয়ে গেছে।’

বিমান বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে প্রতি কেজি অতিরিক্ত ওজনের জন্য ১০ পাউন্ড ফি উল্লেখ থাকার কথা বললে তিনি বলেন, ‘ওয়েবসাইটে কি আছে জানি না, তবে আমাদের এটাই ধার্য্য করা আছে এবং তা নিয়মমাফিকই নেওয়া হচ্ছে।’

ওমর হায়াত আরো বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের একঘন্টা আগে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের কাউন্টার বন্ধ করতে হয়। কিন্তু ওই যাত্রী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তার লাগেজের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। তাই তাকে রেখেই বিমান ছাড়তে হয়েছে।’

মসজিদের শহর বিয়ানীবাজার। পর্ব#১৮। এ পর্বে উপজেলার প্রাচীন দৃষ্টিনন্দন মাথিউরা দোয়াখাঁ জামে মসজিদ