জাতীয় নির্বাচনের বাকি এখনো ১৫ মাস। কিন্তু আগাম হাওয়া বইছে মৌলভীবাজার-২ আসন কুলাউড়ায়। বিশেষ করে নৌকায় উঠতে মরিয়া অন্তত ৭ জন প্রার্থী। অবশ্য শেষমেশ ৩ নতুন মুখের যে কেউ আসতে পারে এমন ধারণা দলীয় নেতাকর্মীদের।

মৌলভীবাজার-২ আসনটি গঠিত শুধু কুলাউড়া উপজেলা নিয়ে। আওয়ামী লীগসহ সব দলের প্রার্থীদের দল বদল কিংবা দল ছেড়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার রেকর্ড আছে এখানে। বিগত নির্বাচনে বর্তমান এমপি সুলতান মনসুরও আওয়ামী লীগ ছেড়ে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট থেকে) নির্বাচিত হন। প্রার্থীদের এমন পল্টি নিয়ে ভোটারা অতিষ্ঠ। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে এই আসনে তাই নতুন মুখ খুঁজছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপি।

আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাসিত নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আওয়ামী লীগের পুরোনো পরীক্ষিত নেতা। কিন্তু বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট থেকে বিগত নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের হয়ে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে জয়ী হন। এতে দলে ফেরা তার জন্য এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। আর এই সুযোগে নৌকায় উঠতে মরিয়া অনেকে।

কুলাউড়ায় আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে কাজ করছেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও একুশে পদক প্রাপ্ত প্রয়াত এমপি আব্দুল জব্বারের ছেলে আবু জাফর রাজু। তিনি বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসারের দায়িত্বে আছেন। এলাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি অংশ নেন। স্কুল-কলেজ-মাদরাসার ভবন নির্মাণসহ নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করছেন এলাকায়।

আগামী নির্বাচনে মনোনয়নের বিষয়ে আবু জাফর রাজু বলেন, আমাদের পরিবার বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী। আমরা পদের রাজনীতি করি না। আর কাকে মনোনয়ন দেবেন- বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী জানেন। আমি এইটুকু বলতে পারি আমি যেখানে যে পরিসরে থাকি, আওয়ামী লীগ আর এলাকার মানুষের জন্য কাজ করে যাবো। যেহেতু আমার বাবা এখানে এমপি ছিলেন।

এছাড়াও মাঠে আছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।

মনোনয়ন নিয়ে শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, ‘আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে এলাকায় কাজ করে যাচ্ছি। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দলের মনোনয়ন চাইব। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেন, আমি নির্বাচন করবো।’

এই আসনে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য, স্কোয়াড্রন লিডার (অব.) সাদরুল আহমেদ খান বলেন, ‘আমি মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) থেকে মনোনয়ন চাই। আমার বাবা এখানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চেয়ারম্যান ছিলেন। আমার বড় ভাইও এখন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান। আমি নিজেও ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদে ডেপুটি সার্জন হিসেবে কাজ করেছি। এরপর থেকে আমার অভিভাবকরা এলাকায় কাজ করতে বলছেন, আমি সেটা করছি। এমনভাবে কাজ করছি, যাতে ৫৭৭টি গ্রামে কিছু না কিছু অবদান রাখতে পারি। এজন্য হেলথক্যাম্প, বন্যায় ত্রাণ বিতরণ, বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করছি।’

কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রেণু বলেন, আগামী নির্বাচনে আমি নিজেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী। আমার তো শেষ সময়। আমার রাজনীতির ৫০ বছর। আমাকে দিলে আমি পাস করে আসতে পারবো। আরও অনেকে প্রার্থী আছেন, কাজকাম করছেন। ঐক্যজোট হলে কাকে দেবে তা তো জানি না, জাতীয় পার্টিকেও দিতে পারে।

কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম বলেন, জাতীয় নির্বাচনে এবার এখান থেকে আমার বড় ভাই নির্বাচন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার আবু জাফর রাজু। উনি যদি নির্বাচন না করেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে দুই ভাইয়ের মধ্যে যে কোনো একজন প্রার্থী হবো। আমি গত দুই নির্বাচনেও মনোনয়ন চেয়েছিলাম। গত সেশনে উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলাম।

তিনি বলেন, যেহেতু আমার বাবা এখানে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা এবং নৌকার এমপি ছিলেন। সে কারণে আমরা আশা করছি- এবার যদি প্রধানমন্ত্রী আমাদের পরিবারকে দেন, তাহলে আওয়ামী লীগের মূল জায়গায় নৌকাটা ফিরে আসবে। আমার বড় ভাইকে দিক বা আমাকে দিক।

কুলাউড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত মৌলভীবাজার-২ জাতীয় সংসদের ২৩৬ নম্বর আসন। এখানে মোট ভোটার ২ লাখ ৪১ হাজার ১৬১। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২২ হাজার ৪২২ এবং নারী ভোটার ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৩৯।

ভোটের ফলাফলে দেখা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (২০১৮) বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর পান ৭৯ হাজার ৭৪২ ভোট এবং নৌকা প্রতীকে বিকল্প ধারার এম এম শাহীন পান ৭৭ হাজার ১৭০ ভোট।

এছাড়া ১০ম সংসদ নির্বাচনে (২০১৪) স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মতিন আনারস প্রতীকে পান ৩০ হাজার ৮৭১ ভোট। জাতীয় পার্টির মহিবুল কাদির চৌধুরী লাঙল নিয়ে পান ২৫ হাজার ২৪১ ভোট।

৯ম সংসদ নির্বাচনে (২০০৮) জাতীয় পার্টির নওয়াব আলী আব্বাস খান ১ লাখ ৩০ হাজার ৯৪১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এম শাহীন ফুটবল প্রতীকে পান ৬৪ হাজার ৯৪২ ভোট।

৮ম সংসদ নির্বাচনে (২০০১) স্বতন্ত্র থেকে এম এম শাহীন ফুটবল প্রতীকে ৭৮ হাজার ৬৬৭ ভোট এবং আওয়ামী লীগের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহম্মদ নৌকা প্রতীকে পান ৭১ হাজার ৮০৩ ভোট।

৭ম সংসদ নির্বাচনে (১৯৯৬) আওয়ামী লীগের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহম্মদ নৌকা প্রতীকে ৫২ হাজার ৫৮২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। জাতীয় পার্টির নওয়াব আলী আব্বাস খান লাঙল প্রতীকে পান ৩৯ হাজার ৯৯২ ভোট।

৫ম সংসদ নির্বাচনে (১৯৯১) জাতীয় পার্টির নওয়াব আলী আব্বাস খান লাঙল প্রতীকে ৬১ হাজার ১০৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহম্মদ নৌকা প্রতীকে পান ৪৫ হাজার ৫২৬ ভোট।।

‌আনন্দ-উদ্দীপনায় বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাবের আনন্দভ্রমণ