সিলেট আঞ্চলিক পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় সিলেটের জনসাধারণের। জনসাধারণের ভোগান্তি লাগবে তৎপর হয়েছে বিভাগীয় প্রশাসন। পাসপোর্ট সেবা সহজীকরণ করতে বিশিষ্টজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মোশাররফ হোসেন। এসময় পাসপোর্ট অফিসে ভোগান্তির বেশ কয়েকটি কারণ চিহিৃত করা হয়। ভোগান্তি লাঘবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার ও সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি।

মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে সিলেটে পাসপোর্ট সংক্রান্ত জটিলতা-হয়রানি, পাসপোর্ট সেবা সহজীকরণ করতে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে বিভিন্ন শ্রেণির ২৭ জন অংশীজন বক্তব্য রাখেন। তাদের বক্তব্যে উঠে আসা ভোগান্তির মধ্যে বেশ কয়েকটি কারণ চিহিৃত করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে- দালালদের মার্কা (ই-মেইল) ছাড়া আবেদন গ্রহণে অনীহা, আবেদন শতভাগ সঠিক থাকলেও টাকা না দেওয়ায় কর্মকর্তাদের দ্বারা ইচ্ছাকৃত ভোগান্তি সৃষ্টি, রোহিঙ্গা পরীক্ষার মাধ্যমে হয়রানি, নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট না পাওয়া, সার্ভার ডাউন-জাতীয় সংকট এবং পাসপোর্ট কার্যালয়ে স্থান ও জনবল সংকট। এর বাইরে পাসপোর্ট পেতে যে পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন হয়, সেখানেও টাকা ছাড়া মেলে না সেবা।

সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) দেবজিৎ সিংহের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন- ‘কিছুদিন পূর্বে আমার এক পরিচিতি ছাত্রলীগ নেতা গুরুতর অসুস্থ হয়ে ভারতে চিকিৎসার জন্য যেতে পাসপোর্ট করতে হয়। সে নগদ ২০ হাজার টাকা ‘উৎকোচ’ দিয়ে পাসপোর্ট পেয়েছে। পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতির কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নাম হচ্ছে। এ ব্যাপারে কার্যত ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।’

পাসপোর্ট অফিসে প্রতিদিন ১৬ লাখ টাকার অবৈধ লেনদেন হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন। তিনি বলেন- ‘প্রতিদিন সিলেট আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে প্রায় ৮০০ মানুষ সেবা নেন। একেকজন গড়ে দুই হাজার টাকা দিলেও ১৬ লাখ টাকার অবৈধ লেনদেন হয়। এখানে পাহাড়সম সমস্যা হচ্ছে। ফলে ভোগান্তি লাঘবে তড়িৎ গতিতে পদক্ষেপ নিতে হবে।’

মতবিনিময় সভাকে যেন ‘আইওয়াশ’ না করা হয় সেই প্রশ্ন রেখে এ আওয়ামী লীগ নেতা বলেন- ‘এখানকার মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে সমস্যার যেন সমাধান করা হয়।’

এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন- সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মোশাররফ হোসেন। তিনি সমস্যার কথা শুনে বলেন- ‘অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসন সমস্যাগুলো সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। সমস্যা জানায় এখন সমাধানে সুবিধা হবে। সিস্টেমের ফাঁকফোকরগুলো জানা থাকায় এখন ভুক্তভোগীদের সমস্যা দূর করতে স্থানীয় প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারবে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ পিপিএম বলেন- ‘খোলা মনে আলাপ-আলোচনা করে অনেক সমস্যার সমাধান হয়। পুলিশের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হবে।’

মতবিনিময় সভায় অভিযোগ প্রসঙ্গে বিভাগীয় আঞ্চলিক পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক এ কে এম মাজহারুল ইসলাম বলেন- ‘পাসপোর্টের দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে তাঁর কিছু করার নেই। কারণ, পাসপোর্টগুলো ঢাকা থেকে প্রস্তুত করা হয়। এ ছাড়া সার্ভারজনিত সমস্যার সমাধানও তাঁর হাতে নেই। পাসপোর্ট অফিসের ভেতরে দালালদের তৎপরতা নেই।’

এসময় সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি ও মিডিয়া) লুৎফর রহমান সহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

‌বিয়ানীবাজারের সাবেক ছাত্রনেতা ইসলাম উদ্দিনের শূন্যতা অপূরনীয়