সিলেট জোনের সড়ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্যয় বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে মেয়াদও। এজন্য সংশোধন করতে হচ্ছে ‘জেলা মহাসড়কসমূহ যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনের পাঠিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ৫৩৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা। সেখান থেকে ১২২ কোটি ৮১ লাখ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৬১ কোটি ১১ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে এক বছর ছয় মাস মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হচ্ছে।

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এরই মধ্যে প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণ শেষ হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় উপস্থাপন করা হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে সিলেট জোনের অধীন চারটি সড়ক বিভাগের ১৩টি ক্ষতিগ্রস্ত জেলা মহাসড়ক মেরামত এবং পুনর্বাসনের মাধ্যমে বিরাজমান সড়ক নেটওয়ার্কের মান উন্নয়ন হবে। অর্থাৎ নিরাপদ, আরামদায়ক, সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ী সড়ক নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করা যাবে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর মূলত তার অধীন জাতীয়, আঞ্চলিক, জেলা মহাসড়কগুলোর নির্মাণ, মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করেছে। সওজর অধীন মোট সড়কের দৈর্ঘ্য ২১ হাজার ৩০২ কিলোমিটার। এর মধ্যে জাতীয় মহাসড়ক ৩ হাজার ৮১৩ কিলোমিটার, আঞ্চলিক মহাসড়ক ৪ হাজার ২৪৭ কিলোমিটার এবং জেলা মহাসড়ক ১৩ হাজার ২৪২ কিলোমিটার। আর্থসামাজিক উন্নয়ন তথা দেশের সমষ্টিগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে জেলা মহাসড়কগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মন্ত্রণালয় বলছে, সিলেট সড়ক জোনের অধীন মোট জেলা সড়কের সংখ্যা ২৮টি, যার মোট দৈর্ঘ্য ৫৮৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। হাইওয়ে ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স সার্ভে ২০১৩ অনুযায়ী সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা সড়কগুলোর মধ্য থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আটটি জেলা মহাসড়কের মোট ৯৬ কিলোমিটার সড়ক জেলা সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প প্রথম পর্যায় প্রকল্পের আওতায় সংস্কার ও উন্নয়ন করা হয়েছে। বাকি সড়কগুলো থেকে সড়কের গুরুত্ব ক্ষতিগ্রস্ততা ও মানের কম প্রশস্ততার ওপর ভিত্তি করে ১৩টি জেলা মহাসড়কের ১৮৪ দশমিক ৭২ কিলোমিটার সড়কাংশ উন্নয়নে জেলা মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প সিলেট দ্বিতীয় পর্যায় হিসাবে নেওয়া হয়।

প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, সড়ক বাঁধে মাটির কাজের পরিমাণ ২ লাখ ৬৪ হাজার ঘনমিটার এবং এ খাতে ব্যয় বৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এছাড়া বিদ্যমান পেভমেন্ট প্রশস্তকরণের পরিমাণ ২ দশমিক ১১ কিলোমিটার কমিয়ে এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা। বিদ্যমান পেভমেন্ট মজবুতিকরণের পরিমাণ ১৭ দশমিক ৩৩ কিলোমিটার কম এবং এ খাতে বাড়তি ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ কোটি টাকা। পুনঃনির্মাণের পরিমাণ ১৬ দশমিক ৫৫ কিলোমিটার বাড়িয়ে এই খাতে অতিরিক্ত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

অন্যদিকে, ৫০ মিটার ডিবিএস ওয়ারিং কোর্সের পরিমাণ ৩ দশমিক ৫৯ কিলোমিটার বাড়িয়ে বাড়তি ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। ৬০ মিটার ডিবিএস ওয়ারিং কোর্সের পরিমাণ ২ দশমিক ৩৮ কিলোমিটার কম করে এ খাতে অতিরিক্ত ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।

আরও বলা হয়েছে, রিজিড পেভমেন্ট নির্মাণের পরিমাণ ৬ দশমিক ৪৯ কিলোমিটারের জন্য ব্যয় ধরা হযেছে ৩৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা। পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণের পরিমাণ ৪৬ মিটার বাড়িয়ে এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আরসিসি কালভার্ট নির্মাণের পরিমাণ ১৫৮ মিটার বাড়িয়ে বাড়তি ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। সসার ড্রেন নির্মাণের পরিমাণ ৪ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার কম এবং এ খাতে ব্যয় ২ কোটি ১৪ লাখ টাকা।

এর বাইরেও কভারসহ আরসিসি ইউ ড্রেন নির্মাণের পরিমাণ ৫ দশমিক ৪ কিলোমিটার, ব্যয় ৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। ব্রিক টো-ওয়ালের পরিমাণ ৩ দশমিক ২৬ কিলোমিটার বাড়িয়ে এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৬ লাখ টাকা। আরসিসি রিটেইনিং ওয়ালের পরিমাণ ১৮ কিলোমিটার বাড়িয়ে এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৫১ লাখ টাকা। সিসি ব্লক নির্মাণের পরিমাণ শূন্য দশমিক ৫১ লাখ ঘনমিটার বাড়িয়ে এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। তাছাড়া প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদকাল দেড় বছর বাড়ানো হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মামুন-আল-রশীদ পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সিলেট জোনের অধীন চারটি সড়ক বিভাগের ১৩টি ক্ষতিগ্রস্ত জেলা মহাসড়ক মেরামত এবং পুনর্বাসনের মাধ্যমে বিরাজমান সড়ক নেটওয়ার্কেও মান উন্নয়ন তথা নিরাপদ, আরামদায়ক, সময় এবং ব্যয় সাশ্রয়ী সড়ক নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠিত হবে। তাই প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।

তথ্যসূত্র- সারাবাংলা।