একসঙ্গে সিলেট ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন দু’জন। তখন থেকেই সিলেটের আওয়ামী রাজনীতির লাইমলাইটে তারা। সিনিয়রদের কাছেও রয়েছে গ্রহণযোগ্যতা। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে রয়েছে পরিচিতি। কারো কারো সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। দিনে-দিনে আরো পাকাপোক্ত হিসেবে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করেছেন। এ কারণে আসন্ন সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের দুটি শীর্ষ পদে চোখ তাদের দু’জনেরই। চালাচ্ছেন জোর লবিংও।

তাদেরকে ঘিরে অনুসারীরা মেতে উঠেছেন প্রচারণায়। এরা হলেন- সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ও  জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান। ‘নাদেল-নাসির’ জুটি সিলেটে অনেক আগে থেকেই পরিচিত। এক সময় তারা সিলেট ছাত্রলীগকে শাসন করেছেন।

ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে স্বচ্ছ ধারার রাজনীতিবিদ হিসেবে তারা পরিচিতি পেয়েছিলেন। নাদেল ছাত্রলীগের যে কমিটির সভাপতি ছিলেন, নাসির ছিলেন সেই কমিটির সাধারণ সম্পাদক। ছাত্রলীগের রাজনীতির ইতি টানার পর দু’জনের গন্তব্য হয় দুই কমিটিতে। নাদেল মহানগর আওয়ামী লীগে ও আর নাসির যান  জেলা আওয়ামী লীগে। এরপর থেকেই তারা দু’জন আলাদা আলাদা বলয় গড়ে তোলেন। শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ২০১১ সালের মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন। ওই সময় তিনি সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্য লবিংও চালান। শেষ মুহূর্তে তার রাজনৈতিক অগ্রজ, এক সময়ের ছাত্রলীগ নেতা আসাদ উদ্দিন আহমদকে সাধারন সম্পাদক করা হয়। আর নাদেল হন সাংগঠনিক সম্পাদক।

এ কারনে এবার সাধারন সম্পাদক হতে তিনি জোর লবিং চালাচ্ছেন। তবে- এই পদে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ফয়জুল আনোয়ার আলোয়ার, বিজিত চৌধুরী ও অধ্যাপক জাকির হোসেন এরই মধ্যে আলোচনায় এসেছেন। তারাও চালাচ্ছেন লবিং। নাদেল বলয়ের নেতারা জানিয়েছেন- ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সফল ছিলেন শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। এখন তিনি সিলেটের ব্যবসায়ীদেরও নেতা। পাশাপাশি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক। সিলেটের রাজনীতি সহ নানা দিকে রয়েছে নাদেলের বিচরণ।

সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের আস্থাভাজন নেতা হওয়ার কারনে তার হাত ধরেই সিলেটের ক্রীড়া ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন হয়েছে। নির্মাণ হয়েছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। এখন সেটি ওয়ানডে, টেস্ট এং টি টুয়েন্টি ক্রিকেটের অন্যতম ভেন্যু। তার মালিকানাধীন একটি স্থানীয় সংবাদপত্র রয়েছে। ফলে, দক্ষ সংগঠক হিসেবে নাদেল ইতিমধ্যে পরিচিতি পেয়েছেন। এই অবস্থায় নতুনদের মধ্যে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নাদেলের নাম সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে।

নাদেলকে নিয়ে সিলেটে প্রচারণার অন্ত নেই। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নাদেলকে সাধারণ সম্পাদক চেয়ে তার পক্ষের নেতাকর্মীরা নগরীতে ব্যানার ফেস্টুন সাঁটিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে প্রচারণা। কখনো কখনো নাদেলও এসব প্রচারনায় অংশ নিচ্ছেন। সিলেটে রাজনীতি করলেও নিজ এলাকা মৌলভীবাজারের কুলাউড়া নিয়ে স্বপ্ন নাদেলের। গত জাতীয় নির্বাচন থেকে তিনি ওই এলাকায় নেমেছেন ভোটের রাজনীতিতে।

নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন- সিলেটে ছাত্রলীগের রাজনীতির একটি নতুন ধারার সূচনা হয়েছিলো নাদেল-নাসিরের হাত ধরে। সেই ধারা এখনো বিরাজমান। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও ইতিমধ্যে তারা ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছেন। তাদের হাত ধরে সিলেট আওয়ামী লীগ পেতে পারে নতুন গতি। নাসির উদ্দিন খান সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হওয়ার কারনে এবার সিলেট জেলার যে উপজেলাগুলোতে সম্মেলন হচ্ছে সবখানেই রয়েছে তার কর্তৃত্ব। সিনিয়র নেতারাও নাসির থাকার কারণে ছিলেন নির্ভার। নিজ এলাকা বিয়ানীবাজারে এবার আওয়ামী লীগের কমিটি ভোটের মাধ্যমে গঠন করা হয়। আর এতে ভূমিকা রাখেন নাসির। এর বাইরে কয়েকটি উপজেলার কমিটি গঠনে তিনি ভূমিকা রাখেন। নাসির উদ্দিন খানও ব্যবসায়ী। সর্বশেষ তিনি সিলেট চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। সিলেট শহর ছাত্রলীগের কমিটির শীর্ষ নেতার দায়িত্ব পালনের পর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন তিনি।

ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে তিনি পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে গড়ে উঠেন। এবার নাসির জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক হতে লবিং চালাচ্ছেন। দলীয় সভানেত্রীর সুনজর কাড়ার চেষ্টা করছেন। জেলা আওয়ামী লীগে নাসিরের রাজনৈতিক সিনিয়ররাও সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্য লবিং চালাচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছেন- বর্তমান যুগ্ম সম্পাদক এডভোকেট নিজাম উদ্দিন, অধ্যাপক সুজাত আলী রফিক।

এছাড়া সহ সভাপতি এডভোকেট শাহ ফরিদ আহমদও এই পদে আলোচনায় এসেছেন। অনুসারীরা জানিয়েছেন- নতুনের মধ্যে নাসির উদ্দিন খানের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সম্মেলনকে সামনে রেখে নাসিরের পক্ষেও প্রচারনা চলছে। ইতিমধ্যে ব্যানার, ফেস্টুন সটানো হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে সমানতালে প্রচারণা।

সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন- নাদেল ও নাসির যোগ্য ব্যক্তি। কিন্তু আওয়ামী লীগ এমন একটি দল যেখানে যোগ্য নেতার অভাব নেই। তাদের চেয়ে সিনিয়র নেতারা এবার দুটি কমিটির সাধারন সম্পাদক পদে লবিংয়ে রয়েছেন। তবে- দলকে সাংগঠনিক ভাবে চাঙ্গা ও নতুন ধারার সৃষ্টি করতে হলে নতুনদের জায়গা করে দেওয়ার পক্ষে মত দেন নেতারা। এতে সাংগঠনিক ভাবে আওয়ামী লীগ আরো শক্তিশালী হবে।

সূত্র- সিলেট প্রতিদিন।