সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের পর নতুন মেরুকরণের আভাস মিলছে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। নির্বাচনে পরাজয়ের নেপথ্যে স্থানীয় পর্যায়ে ‘সাংগঠনিক দুর্বলতা’র কথা বলেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের এমন মন্তব্যের পর সিলেট আওয়ামী লীগে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে বলে মনে করছেন সবাই। আগামী ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ডামাডোলের মধ্যে সিলেট আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিয়ে এরই মধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে।

আগামী সেপ্টেম্বরেই জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি আসছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। এ নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও দুটি কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবি পাওয়ার আশায় তৎপরতা শুরু করেছেন ডজন খানেক নেতা। এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সিলেটে আসছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সিলেট আওয়ামী লীগের শোকসভায় তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন। এই অনুষ্ঠান থেকে সিলেট আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব নিয়ে ইঙ্গিত পাওয়ার আশা করছেন সংশ্নিষ্টরা।

তবে এ ধরনের কোনো খবর তারা জানেন না বলে দাবি করেছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী ও মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ। এ দু’জন যথাক্রমে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষপদে স্থানীয়ভাবে আলোচনায় রয়েছেন। এ প্রসঙ্গে শফিকুর রহমান চৌধুরী জানিয়েছেন, কমিটির ব্যাপারে কিছুই জানি না। একইভাবে আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেছেন, দলীয়ভাবে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানি না। কোনো কিছু হলে তো সবাই জানতে পারবেন।

আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ স্বীকার না করলেও জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেতে মাঠে নেমেছেন অনেকেই। জেলার বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীর পাশাপাশি সভাপতি পদে আলোচনায় রয়েছেন সহসভাপতি আশফাক আহমদ (সদর উপজেলা চেয়ারম্যান) ও মাসুক উদ্দিন আহমদ। অন্যদিকে আসাদ উদ্দিন আহমদের নাম আলোচনায় এলেও মহানগরে সভাপতি পদে বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের আরেক দফা থেকে যাওয়ার সম্ভাবনার কথাও বলেছেন তার অনুসারীরা।

অবশ্য পরপর দুটি নির্বাচনে মেয়র পদে পরাজয়ের পাশাপাশি ‘এক নেতা এক পদ’ নীতিতে মহানগরের সভাপতি পদে নতুন কেউ আসবেন বলে মনে করছেন অনেকে। প্রায় দুই দশক ধরে মহানগরের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসা বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বর্তমানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিরও সদস্য। গত ৩০ জুলাই সিলেট সিটি নির্বাচনের পর তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এরপরই সিলেট আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্বের বিষয়টি আরও জোরালোভাবে আলোচনায় আসে।

জেলার সম্ভাব্য সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন, অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিক, অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান ও উপ-দপ্তর সম্পাদক জগলু চৌধুরী। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জগলু চৌধুরী জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কোনো দায়িত্ব দিলে তিনি তা পালনের জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। মহানগরের সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান যুগ্ম সম্পাদক ফয়জুর আনোয়ার আলাউর, বিজিত চৌধুরী, জাকির হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সাংস্কৃতিক সম্পাদক প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী ও শিক্ষা সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ।

তাদের কেউ সরাসরি তদবিরের কথা অস্বীকার করলেও ফেসবুকে তাদের অনুসারীদের পক্ষ থেকে কৌশলী প্রচার চালানো হচ্ছে। ‘অমুক ভাইকে অমুক পদে দেখতে চাই’ বলে আলোচনায় থাকা প্রায় সবাই ফেসবুকে তৎপরতার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বলে জানা গেছে। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন আলোচনায় থাকা প্রায় সব নেতাই। ফলে কৌশলী প্রচার চালালেও তাদের কেউ প্রকাশ্যে কিছু না বলে ওবায়দুল কাদের আসার অপেক্ষায় রয়েছেন।

২০১১ সালের ২২ নভেম্বর সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। সেই সময় আব্দুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ানকে সভাপতি ও শফিকুর রহমান চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে ঘোষণা করা হয় জেলা কমিটি। ২০১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর আব্দুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান মারা গেলে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান। পাশাপাশি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ।

সে সময় মহানগরে বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে সভাপতি ও আসাদ উদ্দিন আহমদকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিন বছর মেয়াদি এ দুটি কমিটির মেয়াদ শেষে অতিবাহিত হয়েছে আরও প্রায় চার বছর। ফলে জাতীয় নির্বাচনের আগে নতুন নেতৃত্ব না এলেও শিগগির উভয় কমিটিতে পরিবর্তনের আশায় তৎপরতা শুরু করে দিয়েছেন পদপ্রত্যাশীরা।

সূত্র- দৈনিক সমকাল