সিলেটে রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ছাড়া মোটরসাইকেল ও থ্রি-হুইলার বিক্রি করা যাবে না। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এর সিলেট অফিসের পক্ষ থেকে মোটরসাইকেল বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিয়ে এ নির্দেশনা জানানো হয়েছে। ১ নভেম্বরের থেকে এ নির্দেশনা কার্যকরও হয়েছে।

ক্রেতাদের ক্রয়কৃত যান রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনতে ও রাজস্ব ফাঁকি এড়াতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সিলেট বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে।

বিআরটিএ সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) পক্ষ থেকে প্রথমে এ উদ্যোগ নেয়া হয়। পরে পাঁচ বছর পার হয়ে যাওয়ার পরও তেমন কোন অগ্রগতি না থাকায় পুনরায় ২০১২ সালে সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক করে বিআরটিএ। সেবারও এ উদ্যোগের অগ্রগতি পরিলক্ষিত না হওয়ায় চার বছর পর ২০১৬ সালে ফের এ উদ্যোগের ব্যাপারে  সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করে বিআরটিএ। দেখতে দেখতে পার হয়ে যায় আরও তিনটি বছর। তবে নির্দেশনা থেকে যায় শুধু কাগজে কলমে। তবে এ নির্দেশনাকে বাস্তবে রূপ দিতে এবার নড়েচড়ে বসেছে বিআরটিএ। চলতি বছরের ৩০ অক্টোবর সিলেটের মোটরসাইকেল ও থ্রি হুইলার বিক্রয়কারী স্থানীয় সকল এজেন্ট/ডিলারদের কাছে লিখিত নির্দেশনা পাঠিয়ে তা পালনের অনুরোধ করেছে বিআরটিএ সিলেটের রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপক্ষ।

আরও জানা যায়, ৩০ অক্টোবর এ নির্দেশনা জারি করার পর গত ১ নভেম্বর থেকে এটি কার্যকর করা হয়। ফলে এবার থেকে মোটরসাইকেল/থ্রি হুইলার গাড়ি বিক্রির ক্ষেত্রে ক্রেতাদেরকে গাড়িটির বাজার মূল্যের সাথে বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানকে দিতে হবে রেজিষ্ট্রেশন ফি বাবদ নির্ধারীত মূল্য। নতুবা ক্রেতারা মোটরসাইকেল কিনতে ও বিক্রেতারা মোটরসাইকেল বিক্রি করতে পারবেন না।

নির্দেশনায় বলা হয়,

  • উপর্যুক্ত বিষয়ে অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জানানো যাচ্ছে যে, যে সকল মোটরসাইকেল ও থ্রি হুইলার বিক্রয়কারী স্থানীয় এজেন্ট/ডিলার রয়েছে তাদেরকে মোটরসাইকেল/থ্রি হুইলার বিক্রয়কালে তৎসংশ্লিষ্ট আমদানি ও বিক্রয় সংক্রান্ত কাগজপত্র নিকট হস্তান্তর না করে স্থানীয় বিআরটিএ অফিসে যোগাযোগ পূর্বক সংশ্লিষ্ট মোটরযানের রেজিষ্ট্রেশনসহ প্রয়োজনীয় কার্যাদি সম্পাদন করার জন্য ১ নং সূত্রে বর্ণিত পত্রের মাধ্যমে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় হতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় হতে প্রেরিত পত্রের  নির্দেশনা যথাযথ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২,৩, ও ৪ সূত্রে বর্ণিত পত্রের মাধ্যমে বিআরটিএ সিলেট সার্কেলকে নির্দেশ প্রদান করে।
  • ইদানীং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, কতিপয় বিক্রয়কারী এজেন্ট/ডিলার কর্তৃক যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উক্তরূপ সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে বর্ণিত শ্রেণীর মোটরযান বিক্রয় পূর্বক ক্রেতার নিকট রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত কাগজপত্রাদি হস্তান্তর করা হচ্ছে।  বিক্রয়কারী এজেন্ট/ডিলার কর্তৃক  ক্রেতার নিকট কাগজপত্র হস্তান্তরের ফলে ক্রেতাগণ যথাসময়ে রেজিস্ট্রেশন না করায় সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হতে বঞ্চিত হচ্ছে। কোন কোন ক্রেতা সংশ্লিষ্ট মোটরসাইকেলটি রেজিস্ট্রেশন না করে রেজিষ্ট্রেশনবিহীন অবস্থায় রাস্তায় চলাচল করছেন, যা সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর পরিপন্থী।
  • এমতাবস্থায় আপনার প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিক্রিত সকল মোটরসাইকেল/থ্রি হুইলার বিক্রয় সংক্রান্ত কাগজপত্রাদি ক্রেতার নিকট হস্তান্তর না করে, আপনি নিজে কিংবা আপনার মনোনীত প্রতিনিধির মাধ্যমে ক্রেতার পক্ষে রেজিষ্ট্রেশনসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদন করার জন্য এবং প্রতিমাসে বিক্রিত ও রেজিষ্ট্রেশনকৃত মোটরযানের তালিকা সিলেট বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।

এ ব্যাপারে বিআরটিএ সিলেট অফিসের সহকারী পরিচালক মো. সানাউল হক বলেন, ক্রেতারা আগে টাকা দিবে। পরে তারা বিআরটিএতে প্রয়োজনীয় সকল কাগজাদি জমা দিয়ে, সেখান থেকে রেজিস্ট্রেশন নাম্বার সংগ্রহ করে তারপর শোরুম গাড়ি গ্রাহকের কাছে হস্তান্তর করবে। অন্যথায় শোরুম গাড়ি আটকে রাখবে। মানে রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ছাড়া গাড়ি রাস্তায় চলতে দেয়া যাবে না।

তিনি আরও বলেন, সিলেটে মোটরসাইকেল ও থ্রি হুইলার চালকদের মধ্যে একটা বাজে অভ্যাস তৈরি হয়েছে। প্রত্যেককে গাড়ি কেনার দীর্ঘ সময় পার হয়ে যাবার পরও কেউই গাড়িটি রেজিট্রেশনের আগ্রহ দেখায় না। এতে করে যেমন বেআইনি ভাবে রাস্তায় গাড়ি চালাচ্ছে, তেমনি সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।

তিনি বলেন, ২০০৭ সালে প্রথমে এ আইনটি করা হয়। পরে ২০১২ সালে আবার এ ব্যাপারে রিমাইন্ডার দেয়া হয়, চার বছর পর ২০১৬ সালে এ বিষয়ে ফের রিমাইন্ডার দিয়ে কোন সাড়া পাওয়া না গেলে বর্তমানে আইনটি বাস্তবায়নে কড়াকড়ি করা হয়েছে।

মো. সানাউল হক বলেন, নিয়ম অনুযায়ী এখন থেকে বিক্রয়কৃত মোটরসাইকেল ও ত্রি-হুইলারের কাগজ শোরুম থেকে সরাসরি নিকটস্থ বিআরটিএ অফিসে জমা করে সেখান থেকে নাম্বার নিয়ে তারপর ক্রেতাদের কাছে গাড়ি ও চাবি হস্তান্তর করতে হবে। মানে নাম্বারসহ গাড়ি ক্রেতা/গ্রাহকের হাতে তুলে দিতে হবে। এমন নির্দেশনাই ২০০৭ সালে সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছিল।

এ বিষয়ে তিনি ক্রেতা ও বিক্রেতাদের অবহেলাকে দায়ী করে বলেন, একটা অর্ডার পুরাতন হলে গেলে সবাই একটু রিলাক্সে চলে আসে। সে রকম সবাই রিলাক্সে চলে গিয়েছিলো। কিন্তু এখন থেকে আর এমনটা করার সুযোগ নেই। এখন এ ব্যাপারে আমরা কড়াকড়ি পদক্ষেপ নিয়েছি। সেই পুরাতন অর্ডারই আমরা আবার নতুন করে বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি। আমরা যতদিন হার্ডলাইনে না যাবো ততদিন এটি কার্যকর হবে না, আর সরকার যেমন রাজস্ব হারাবে তেমনি লোকজন আগের মতই চলতে থাকবে।

তথ্যসূত্র- সিলেটটুডে২৪।