মো. নুরুল ইসলাম। বয়স ৫৫ বছর। গাঁজার ছয়টি গাছ লাগিয়েছিলেন তিনি। এ কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। সেই মামলায় সাজা হয় দুই বছরের। তবে আদালত তাকে কারাগারে না পাঠিয়ে সিলেট জেলা প্রবেশন কর্মকর্তার অধীনে নিজ বাড়িতে থেকে মাদকবিরোধী প্রচারণা চালানোর নির্দেশ দেন। তাই সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) তিনি সিলেট আদালত প্রাঙ্গণে মাদকবিরোধী প্রচার কার্যক্রমে যোগ দিতে এসেছেন।

নুরুল ইসলামের মতো সাজাপ্রাপ্ত আরও ৫৯ জন পুরুষ আসামি আদালত প্রাঙ্গণে বেলা ১১টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী মাদকবিরোধী প্রচারণায় অংশ নেন।

নুরুল ইসলাম বলেন, কারাগারে থাকলে আমার পরিবারকে দেখার মতো কেউ থাকতো না। বিজ্ঞ আদালত আমাকে বাড়িতে থেকে কাজ করার যে সুযোগ দিয়েছেন। এতে আমি খুব খুশি। আমি আর কোনো দিন কোনো অপরাধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হবো না।

বাংলাদেশে সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের এই সুযোগের আইনটি করা হয়েছিল ১৯৬০ সালে। তবে সেই আইনটির কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৪ সাল থেকে।

সিলেট জেলা প্রবেশন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সিলেট জেলায় ২০১৪ সাল থেকে ১৫১টি মামলা প্রবেশন কর্মকর্তার অধীনে রয়েছে। তার মধ্যে ৫২টি মামলার মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। অপরদিকে আরও ৯৯টি মামলা এখনও চলমান রয়েছে। আসামিদের মধ্যে পুরুষ ৮৬ জন, নারী ১০ জন ও তিনজন শিশু রয়েছে। এদের বেশিরভাগই মাদক মামলার আসামি। এছাড়াও পারিবারিক কলহসহ অন্যান্য অপরাধ কর্মকাণ্ডের কারণেও সাজা হয়েছে।

সিলেটের আদালত প্রাঙ্গণে ভোলাগঞ্জ উপজেলার গুচ্ছগ্রাম থেকে হাজিরা ও মাদকবিরোধী প্রচারে অংশ নিতে এসেছেন হাছনা বেগম। মাদক বিক্রির অপরাধে তার সাজা হয়েছিল এক বছর। তবে আদালত তাকে কারাগারে না পাঠিয়ে প্রবেশন কর্মকতার অধীনে পাঠিয়ে দিন।

তিনি বলেন, মাদক বিক্রির কাজ আর কখনোই করবো না। এখন অনেক ভালো আছি। এখানে এসেছি মাদকবিরোধী প্রচার কার্যক্রম চালাতে। আমাকে কারাগারে না পাঠানোয় অনেক ভালো হয়েছে। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। এখন স্বামী-সংসার নিয়ে ভালো আছি।

হাছনা বেগমের মতো আরও সাতজন নারী বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে প্রবেশন কর্মকর্তার অধীনে রয়েছেন। তারা সবাই এসেছেন মাদকবিরোধী প্রচার কার্যক্রমে।

সিলেট আদালত প্রাঙ্গণে সকালে সাজাপ্রাপ্ত ৭০ জন আসামি প্রচার কার্যক্রম চালান। তাদের এই কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের মতে, অনেক সময় কারাগারে প্রেরণ ও সাজা ভোগের পরও অনেকেই আগের মত অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। তবে তাদেরকে কারাগারে না পাঠিয়ে যে ব্যবস্থা করা হয়েছে তাতে অনেকেই অপরাধ কর্ম থেকে দূরে সরে যাবেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এটা নিঃসন্দেহে একটি ভালো কাজ। মানুষ ভুল করে, ভুল সংশোধনের জন্য এমন একটি উদ্যোগ আসলেই প্রশংসার দাবিদার।

সিলেট জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা মো. তমির হোসেন চৌধুরী বলেন, যারা সাজাপ্রাপ্ত ও প্রবেশন কর্মকর্তার অধীনে তাদের প্রত্যেককে প্রতি মাসে একবার করে হাজিরা দিতে হয় প্রবেশন কর্মকর্তার কার্যালয়ে। পাশাপাশি প্রতি মাসেই তাদেরকে মাদকবিরোধী প্রচার কার্যক্রমে অংশ নিতে হয়। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বেশ কিছু চলচ্চিত্র দেখারও নির্দেশনা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সাজাপ্রাপ্ত আসামি অনেককেই আদালত কারাগারে না পাঠিয়ে আমাদের তত্ত্বাবধানে দিয়ে দেন। যাতে করে তারা অপরাধ কর্মকাণ্ড থেকে দূরে সরে যান। পাশাপাশি মাদকবিরোধী প্রচার কার্যক্রম চালান। আমরা প্রতি মাসেই তাদেরকে নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করি। প্রতি মাসে তাদেরকে একবার আমাদের এখানে এসে হাজিরা দিতে হয়।

বিয়ানীবাজারে অটোরিকশা চুরির পর বিক্রি ।। চোরচক্রের ৩ সদস্য কারাগারে