কুমিল্লার হামলার জেরে সিলেটের জকিগঞ্জের কালিগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল বের করে একদল লোক। এতে পুলিশ বাধা দিলে পুলিশের সাথে বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। আহত হন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২০ জন। এ ঘটনায় সাড়ে ৪ শ’ জনকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ।

কেবল জকিগঞ্জ নয়, এই ঘটনার জেরে গত বুধ থেকে শুক্রবার পর্যন্ত সিলেট বিভাগের ৬টি উপজেলায় বিভিন্ন পূজামণ্ডপে হামলা, ভাঙচুর করা হয়। হামলা করা হয় পুলিশের উপরও। এসব ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা আসামি করা হয়েছে অন্তত ১৬শ’ জনকে। বিপুল সংখ্যক লোককে আসামি করা হলেও এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে মাত্র ২১ জনকে।

এই তিনদিনে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে বিভাগের অন্তত ১৭ টি মণ্ডপ ও মন্দিরে।

সিলেট:
বুধবার রাত জকিগঞ্জে মিছিল থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জকিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)’র গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।

এ ঘটনায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আহমদ, একাধিক পুলিশসদস্যসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন।

ওই রাতেই জকিগঞ্জ থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) আমিরুল শিকদার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৪৫০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাসেম জানান, মামলায় এ পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের মাধ্যেমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

গত শুক্রবার সিলেট নগরের আখালিয়ার হালদারপাড়ায় ভাটি বাংলা অগ্রদূত যুব সংঘের দুর্গাপূজার মণ্ডপে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। দুপুরে জুমার নামাজের পর স্থানীয় মসজিদ থেকে মিছিল নিয়ে এসে এই হামলা চালায় এক দল লোক।

শনিবার রাতে এই ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে আইনে মামলা দায়ের করেন জালালাবাদ থানার এসআই কাজী জামাল আহমদ। মামলার এজাহারে ৪২ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এজাহারে হাওলাদারপাড়ার ভাটিবাংলা পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকসহ পুলিশের উপর হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলা দায়েরের পর রোববার সকাল পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মণ্ডপের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে আসামিদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা খাঁন।

হবিগঞ্জ
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার করগাঁও ইউনিয়নের গুমগুমিয়া গ্রামে পূজামণ্ডপে হামলা ও ভাঙচুর চালায় স্থানীয় পাঞ্জারাই জিকে ওয়াই দাখিল মাদ্রাসার ছাত্ররা। এসময় পুলিশের সাথে সংঘর্ষে সংঘর্ষে নবীগঞ্জ থানার ওসি ডালিম আহমদসহ ২০ জন আহত হন।

এ ঘটনায় নবীগঞ্জ থানার এসআই অমিতাভ বাদী হয়ে ১২০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি বলে জানিয়েছেন নবীগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আমিনুল ইসলাম।

এরআগে বুধবার রাতে সদর উপজেলার লুকড়া ইউনিয়নের ৫টি পুজামণ্ডপে হামলা করা হয়। তবে এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি।

মৌলভীবাজার
বুধবার রাতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার কর্মদা ইউনিয়নের ৩ টি মন্দিরে হামলা হয়। ঘটনার পর ৪০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে পুলিশ।

কুলাউড়া থানার ওসি বিনয় ভূষণ রায় বলেন, পূজামণ্ডপে ভাঙচুর ও হামলার ঘটনায় ২২ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ৪ শ’ জনকে আসামি করে তিনটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ফজলু মিয়া নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

একই রাতে কমলগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল থেকে মুন্সীবাজার ইউনিয়নের মঈডাইল ও কামারছড়া চা বাগান পূজামণ্ডপের মূর্তি ভাঙচুর করা হয়। একই সময়ে মুন্সীবাজার ইউনিয়নের বাসুদেবপুর পূজামণ্ডপের ফটক, পতনউষার ইউনিয়নের বৃন্দাবনপুর জগন্নাথ জিওর আখড়া পূজামণ্ডপের ফটক, বৈরাগির চক সার্বজনীন পুজামন্ডপের ফটক এবং মুন্সীবাজার রামপুর সার্বজনীন পূজামণ্ডপের ফটক ও লাইট ভাঙচুর করা হয়।

এসব ঘটনায় দুইটি মামলা দায়ের করা হয়। একটিতে ৭ জনের নামোল্লেখ করে ও অন্যটিতে ১১ জনের নামোল্লেখ করে ২০০ জনকে আসামি করা হয়।

তবে দুই মামলায় এ পর্যন্ত মাত্র দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মইদাইল পূজামণ্ডপে হামলা মামলার প্রধান আসামি মাওলানা আব্দুল করিম ও কামারছড়া চা বাগান মণ্ডপ হামলা মামলায় অভিযুক্ত তারেকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়ারদৌস হাসান বলেন, আসামিদের বেশিরভাগ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। আমরা তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।