সিলেটে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জেলার ৬টি আসনে যোগ্য প্রার্থীর সন্ধানে রয়েছে কেন্দ্র। খোঁজা হচ্ছে ক্লিন ইমেজধারী প্রার্থী, যার ধারাবাহিকতায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ বিভিন্ন মাধ্যমে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তথ্য সংগ্রহ করছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও সাংগঠনিক জরিপের মাধ্যমে তাদের আমলনামা নেয়া হচ্ছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরাও মনোনয়ন পেতে নানান কৌশলে তৎপরতা চালাচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে সিলেটের ৬টি আসনের মধ্যে একাধিক আসনে দলীয় প্রার্থী পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। নতুন মুখ আসছে বলে স্থানীয় নেতাকর্মীরা ধারণা করছেন। যদিও গত নির্বাচনে জেলার দুটি আসন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। বাকি চারটির মধ্যে সিলেট সদর আসনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সিলেট-৬ আসনে শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ, সিলেট-৩ আসনে মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস ও সিলেট-৪ আসনে ইমরান আহমদ দলীয় প্রার্থী ছিলেন। আগামী নির্বাচনে তাদেরও দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত নয়। এর মধ্যে সিলেট সদর আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল মাল আবদুল মুহিত আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন না। আলোচনায় আছে অর্থমন্ত্রীর ছোট ভাই জাতিসংঘের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. আবুল কালাম আবদুল মোমেন। আগামী নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে দলীয় প্রার্থী করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে দেশে নিয়ে আসেন। দেশে আসার পর অর্থমন্ত্রী নিজেও সিলেটের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ড. মোমেনকে সিলেটের পরবর্তী প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। সম্প্রতি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (ময়মনসিংহ বিভাগ) অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ আগামী নির্বাচনে সিলেট সদর আসনে দলীয় প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এর বাইরেও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাস উদ্দিন ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসেইনের নাম রয়েছে আলোচনায়। সিলেট-২ আসনটি গত নির্বাচনে শরিকদের ছেড়ে দিলেও আগামী নির্বাচনে নিজের হাতে রাখবে আওয়ামী লীগ।

বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জ একাংশ নিয়ে গঠিত সিলেট-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন তিন সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আ ন ম শফিকুল হক, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক আখতারুজ্জামান চৌধুরী জগলু। দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জের একাংশ নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হচ্ছেন- বর্তমান সংসদ সদস্য মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী, ফেঞ্চুগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের সাবেক ভিপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক শাহ মুজিবুর রহমান, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের হাবীবুর রহমান হাবীব, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান আবু জাহেদ। জৈন্তাপুর-গোয়াইনঘাট ও কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৪ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে এলাকায় তৎপর রয়েছেন- সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমদ, গোয়াইনঘাট ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফজলুল হক।

কানাইঘাট-জকিগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৫ আসনটি গত নির্বাচনে শরিকদের ছেড়ে দিলেও এবার আর হাতছাড়া করতে চায় না আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রার্থী হতে তৎপর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আহমদ আল কবির। গত নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসনটি ছেড়ে দিলে মাসুক উদ্দিন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। এবার দল তার ত্যাগের মূল্যায়ন করবে বলে মনে করেন দলীয় নেতাকর্মীরা। গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৬ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তার কর্মী-সমর্থকরা আগামী নির্বাচনে নাহিদই দলীয় প্রার্থী থাকছেন বলে মনে করছেন। যদিও এ আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী কানাডা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সারওয়ার হোসেন মাঠে রয়েছেন।

সৌজন্যে- যুগান্তর পত্রিকা