লন্ডনের সেন্ট জোনস উডে ক্রিকেটের ‘মক্কা’ খ্যাত লর্ডস ২০৩ বছরের ঐতিহ্য ধারণ করে টিকে আছে। স্টেডিয়ামটির অবকাঠামো এমনভাবে গড়ে তোলা হয়েছে যেন গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডই ফুটিয়ে তোলে আভিজাত্য। তেমনি এক আভিজাত্যে নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশও। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মাধ্যমে। এ স্টেডিয়াম নির্মাণে সিলেটের নিজস্ব ঐতিহ্য ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছিলো। তাদের সে চিন্তার কারণে এটি এখন পৃথিবীর অনেক সুন্দর স্টেডিয়ামের চেয়েও সুন্দর।

সিলেট শহরের প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজার থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে লাক্কাতুরায় ১৫০০ একর জমির উপর গড়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। সেটির গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে মিলছে আভিজাত্যের ছাপ। বিপিএলের পঞ্চম আসর এখানে গড়ানোর মাধ্যমে যা দেখেছ পুরো বিশ্ব।

তিনতলা গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের দ্বিতীয় তলায় চারটি ড্রেসিংরুম। বাকি জায়গা দর্শকদের বসার জন্য। ড্রেসিংরুম থেকে যখন খেলোয়াড়রা মাঠে নামেন বা আউট হয়ে কোনও ব্যাটসম্যান সাজঘরের দিকে ফেরেন, দর্শকরা প্রিয় তারকাকে দেখতে পান খুব কাছে থেকে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যেটা একসময় কল্পনাই ছিল।

স্টেডিয়ামের ভেতর ও বাহিরের সৌন্দর্যও মন কেড়ে নেবে সৌন্দর্য পিপাসুদের। ভেতরের গ্রিন গ্যালারির সৌন্দর্য, বাইরে সবুজ বন। শিল্পীর তুলির রঙে যেন সাজানো সবকিছু। খেলোয়াড়-বিসিবি কর্মকর্তা-সাংবাদিক থেকে শুরু করে দর্শকদের সবার মুখেই এখন স্টেডিয়ামটির বন্দনা।

১৭ বছর আগের মাটির টিলা, চা বাগানে ঘেরা পাড়ার মাঠটি এখন রূপ নিয়েছে আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে। প্রবেশ মুখ থেকে ভিতরের মাঠ, সবুজে ঘেরা গ্যালারি এতটাই নৈস্বর্গিক রূপ নিয়েছে যা হার মানাচ্ছে পৃথিবীর যেকোনো স্টেডিয়ামকেই। বিপিএল উদ্বোধনী মঞ্চে দাঁড়িয়ে যেটি একরকম ঘোষণার সুরেই বললেন বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান, ‘বাংলাদেশ তো বটেই, পৃথিবীর অনেক স্টেডিয়ামের চাইতেও এটি সুন্দর। ক্রিকেট যেসব জায়গায় জনপ্রিয়, তার মধ্যে সিলেট অন্যতম।’

বিসিবি পরিচালক ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল চ্যানেল আই অনলাইনকে জানালেন স্টেডিয়াম গড়ে তোলার প্রেক্ষাপট, ‘২০০৩ এর কথা, সেই সময় অর্থমন্ত্রী ছিলেন সাইফুর রহমান। তিনিই লাক্কাতুরার এই স্থানটিকে বিভাগীয় স্টেডিয়াম করার অনুমোদন দেন। তখন এখানে চারপাশে ছিল মাটির টিলা ও পাড়ার ছেলেদের খেলার ছোট্ট একটা মাঠ। পরে কাজ শুরু হয়, কিন্তু সেইভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল না। ২০১১ এর পর তখনকার বিসিবি সভাপতি মোস্তফা কামাল এসে গুরুত্ব দিয়ে কাজ এগিয়ে নিতে বলেন। ২০১৩তে নাজমুল হাসান পাপন দায়িত্ব নিয়ে স্টেডিয়ামটি পরিদর্শনে আসেন। তখন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত তাকে জানান স্টেডিয়ামটির জন্য বড় একটি অর্থ বরাদ্দ দেবেন। তারপর থেকেই ধাপে ধাপে সব কাজ শেষ করে স্টেডিয়ামটি এই পর্যায়ে পৌঁছেছে।’