বিয়ানীবাজার নিউজ ২৪ ডেস্ক। ০৩ মার্চ ২০১৭।

সিলেটে ২ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক শানে রিসালত মহা সম্মেলন শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২মার্চ) সিলেট সরকারী আলিয়া মাদরাসা ময়দানে সকাল ১১ টায় সম্মেলনের উদ্বোধন হয়।

সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মুরশিদে বরহক হযরত আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী। বাদ যুহর বক্তব্য প্রদানকালে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন আমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী। বিদায় হজ্জ্বের সময় তিনি বিনীত ভঙ্গিতে বলেছিলেন, হে মানুষ সকল! আমি যদি তোমাদের কোনো কষ্ট দিয়ে থাকি তাহালে আজ এর প্রতিশোধ নিয়ে নাও। তোমাদের জন্য আমার পিঠ খুলে দিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শতো এরূপই। এ থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। আমরা যারা একই মাযহাব অনুসরণ করি আমাদের মধ্যেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এখতেলাফ লক্ষ্য করা যায়। আমরা যদি আমাদের পূর্বসূরীদের অনুসরণ করি তাহলে এসব এখতেলাফ দূর হয়ে যাবে। তিনি মিলাদ-কিয়াম, ইয়া রাসূলাল্লাহ সম্বোধন ইত্যাদি বিষয়ে বলেন, এসব আসলে এখতেলাফের বিষয় নয়। বর্তমানে যারা এখতেলাফ করেন তাদের পূর্বসূরীদের জীবন ও লেখায়ও এসব আমলের পক্ষে বর্ণনা রয়েছে। সুতরাং এসব বিষয় নিয়ে বিতর্ক করা থেকে বিরত থাকা উচিত।

সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক, বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর সভাপতি মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী, যুগ্ম মহাসচিব, আন্তর্জাতিক শানে রিসালত মহাসম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী ও শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাওলানা নজমুল হুদা খানের যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখেন সায়্যিদ আল হাবিব উবায়দুল্লাহ আল আত্তাস (মক্কা মুকাররামা) শায়খ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আল কিত্তানী (মিশর), শায়খুল হাদীস হযরত আল্লামা হবিবুর রহমান, হযরত আল্লামা নজমুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী, দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক আলহাজ্জ এএমএম বাহাউদ্দিন, আরবী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আহসান উল্লাহ, দৈনিক ইনকিলাবের নির্বাহী সম্পাদক মাওলানা কবি রূহুল আমীন খান, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বির আহমদ মোমতাজী, মুফতী মাওলানা গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী, বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর মহাসচিব মাওলানা এ.কে.এম মনোওর আলী, দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আ.খ.ম আবূ বকর সিদ্দীক, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন এর যুগ্ম মহাসচিব ফরিদগঞ্জ আলিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল ড. মাওলানা মাহবুবুর রহমান, মহাখালী কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা নজরুল ইসলাম খান, ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ জামে মসজিদের খতীব মাওলানা আজিজুল হক মুরাদ প্রমুখ। অন্যান্যের মধ্যে আনজুমানে আল ইসলাহর সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিন্সিপাল মাওলানা মঈনুল ইসলাম পারভেজ, সৎপুর কামিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা ছালিক আহমদ, জালালপুর জালালিয়া কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা জ.উ.ম আব্দুল মুনঈম, ফুলতলী ইসলামিক সেন্টার কভেন্ট্রি, ইউকে’র প্রিন্সিপাল মাওলানা আবুল হাসান, অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল হামিদ, সুনামগঞ্জ জেলা আল ইসলাহর সভাপতি মাওলানা আবু তাহির মোঃ খালিদ, সিলেট মহানগর আল ইসলাহর সভাপতি আলহাজ্জ শাহজাহান মিয়া বক্তব্য রাখেন ।

এতে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. শায়খ নাজী বিন রাশিদ আল আরাবী (বাহরাইন), সায়্যিদ আল হাবীব ফয়সল আল কাফ (জেদ্দা), শায়খ মারওয়ান ইবনে সাদাকাহ ওয়াযযান (মক্কা মুকাররামা), শায়খ মুহাম্মদ মুহাম্মদ সাঈদ আল কুহেজী (বাহরাইন), শায়খ খালিদ সালিহ আহমদ আল কুহেজী (বাহরাইন), সায়্যিদ আল হাবীব আব্দুর রহমান আল কাফ (জেদ্দা), উজানডিহির পীর ছাহেব সায়্যিদ মোস্তাক আহমদ আল মাদানী, সায়্যিদ জুনাইদ আহমদ আল মাদানী, জালালিয়া কামিল মাদরাসার সাবেক প্রিন্সিপাল মাওলানা শুয়াইবুর রহমান, মাওলানা শিহাব উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী, সোবহানীঘাট কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা কমরুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী, ইয়াকুবিয়া হিফযুল কুরআন বোর্ডের জেনারেল সেক্রেটারী হাফিয মাওলানা ফখরুদ্দীন চৌধুরী প্রমুখ।

সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে মক্কা মুকাররামার প্রখ্যাত বুযুর্গ সায়্যিদ আল হাবীব উবায়দুল্লাহ আল আত্তাস বলেন, নবী করীম (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসাই ঈমানের মূল আর অনুসরণ হলো তার শাখা। তিনি বিভিন্ন হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে আল্লাহর রাসূলকে ভালোবাসার গুরুত্ব উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, রাসূলে পাক (সা.) যেমন সৃষ্টিগতভাবে সকল সৌন্দর্যের আধার তেমনি সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। তিনি মানুষের অধিকারের প্রতি সর্বদা খেয়াল রাখতেন। হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন যে, আনাস (রা.) দশ বছর নবী করীম (সা.)-এর খেদমতে ছিলেন কিন্তু নবী করীম (সা.) কখনো কোনো কাজের জন্য তাকে ভৎর্সনা করেননি। বিনয়ের দিক থেকে তিনি সর্বাধিক বিনয়ী, বীরত্বের দিক থেকে তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ বীর, বাগ্মীতার দিক থেকে তিনি অসাধারণ বাগ্মী। তাঁকে ভালোবাসার মধ্যেই রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতের মুক্তি।

মিশরের শায়খ ড. মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আল কিত্তানী বলেন, হযরত মুহাম্মদ (সা.) আমাদের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সর্বোত্তম নেয়ামত। তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ মানবজাতিকে হেদায়াতের পথ দেখিয়েছেন। তাঁর প্রতি ভালোবাসা ঈমানের দাবী। সাহাবায়ে কিরাম আল্লাহর রাসূলের যথাযথ সম্মান সম্পর্কে অবগত ছিলেন। এ বিষয়ে তাদের অনুসরণ আমাদের করতে হবে। হাদীসে নববী থেকে দলীল উপস্থাপন করে তিনি বলেন, আজকে যে ধরনের মাহফিল হচ্ছে এ ধরণের মাহফিল সাহাবায়ে কেরাম করেছেন। যারা এটাকে বিদআত বলে তারা মাহরুম। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে সিলসিলাক্রমে যে তাসাওউফ আমরা লাভ করেছি তা সত্য। সুফিয়ায়ে কিরামের প্রধান চিহ্ন হলো তারা বেশি বেশি আল্লাহর যিকর করেন এবং নবী করীম (সা.) এর প্রতি বেশি দরুদ পেশ করেন। তাসাওউফ ও সুফিয়ায়ে কেরামকে আমাদের আঁকড়ে ধরতে হবে। সলফে সালিহীনের পথ দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করতে হবে।

স্বাগত বক্তব্যে মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী সম্মেলনের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা.) –এর সুমহান মর্যাদা তুলে ধরার উদ্দেশ্যে এ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে। দুনিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে সম্মানিত অতিথিবৃন্দ এসেছেন। তারা আমাদের সামনে আল্লাহর রাসূলের আখলাক, আমল ও আদর্শ তুলে ধরবেন। তাদের বক্তব্য থেকে প্রমাণিত হবে আমরা যে আমল করি, যে আদর্শ লালন করি তা দুনিয়ার সকল প্রান্তের মুসলমানদের আমল। ফলে কোনো সমালোচনায় বিভ্রান্ত হবার সুযোগ আমাদের থাকবে না।

সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট লুৎফুর রহমান, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি এডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকিব, বিশিষ্ট আলিমেদ্বীন ইকড়ছই সিনিয়র মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা ছমির উদ্দীন, মুফতী মাওলানা আবূ নছর জিহাদী, সৎপুর কামিল মাদরাসার প্রাক্তন প্রিন্সিপাল মাওলানা শফিকুর রহমান, বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা ছরওয়ারে জাহান, অর্থ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ মাওলানা আবূ ছালেহ মুহাম্মদ কুতবুল আলম, সমাজকল্যাণ সম্পাদক মাওলানা মাহমুদ হাসান চৌধুরী, স্কুল অব এক্সেলেন্স-এর ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা গুফরান আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়ার কেন্দ্রীয় সভাপতি ফখরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রেদওয়ান আহমদ চৌধুরী, সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি আলমগীর হোসেন, মাওলানা আজির উদ্দিন পাশা, হাফিয নজীর আহমদ হেলাল, মাওলানা বেলাল আহমদ, রাখালগন্জ সিনিয়র মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা হবিবুর রহমান, মাওলানা আব্দুল কাদির ছাহেব (ঘোড়াডুম্বুরী), সৎপুর কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবূ জাফর মুহাম্মদ নুমান, মৌলভীবাজার টাউন কামিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল মাওলানা শামসুল ইসলাম, মাথিউউরা সিনিয়র মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদুল আলিম, বুরাইয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) হাফিজ মাওলানা নূরুর রহমান, মাওলানা আব্দুল মালিক সূফী ছাহেব, মাওলানা শামসুদ্দীন নূরী,  মৌলভীবাজার সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আলাউর রহমান টিপু, কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা ফজলুল হক খান শাহেদ, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা ইমাদ উদ্দিন নাসিরী, আল ইসলাহ ইউকে নেতা আলহাজ্জ ইসমাইল মিয়া প্রমুখ।