আগামী ৩ নভেম্বর বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের টেস্ট ম্যাচের মধ্য দিয়ে অভিষিক্ত হতে যাওয়া সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বসে ফ্রিতে খেলা উপভোগ করতে পারবেন সিলেটের স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।

চা বাগান আর পাহাড়ের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠা সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম বাংলাদেশের অষ্টম ভেন্যু হিসেবে অভিষেক হওয়ার আগে বুধবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে নগরীর একটি হোটেলের কনফারেন্স রুমে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি একথা জানান।

এসময় তিনি জানান, ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য ভেন্যুর মতো সিলেটেও স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ফ্রিতে টেস্ট ম্যাচ উপভোগ করতে পারবেন। তবে এ ম্যাচের মাধ্যমেই যেহেতু টেস্ট ক্রিকেটে সিলেটের অভিষেক হতে যাচ্ছে তাই টিকিটধারী দর্শকদের প্রাধান্য দিতে ও প্রথম দিন দর্শকদের চাপ সামলাতে যেয়ে হয়তো তাদের এ সুযোগ করে দেয়া সম্ভব হবে না। এ বিষয়টি ম্যাচের প্রথম দিন বসে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

তবে এ বিষয়ে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমি আশা করতে পারি যে আমরা এ টেস্ট ম্যাচের দ্বিতীয় দিন থেকে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বিনা টিকেটে মাঠে ঢুকে খেলা দেখার সুযোগ করে দিতে পারবো।

সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, ‘অভিষেক টেস্ট হলেও ক্রিকেটের রীতিনীতি অনুসারে খুব বেশি কিছু আয়োজনের সুযোগ নেই। তবে টেস্ট ক্রিকেটের চিরায়ত ঐতিহ্যের কাছে আমরা ফিরে যেতে সিলেটে অভিষেক টেস্ট উপলক্ষে ঢাকা থেকে একটি বেল নিয়ে এসেছি। যে বেল বাজিয়ে ম্যাচ রেফারি এ ম্যাচ শুরু করবেন।

তিনি আরো বলেন, অভিষেক টেস্ট ম্যাচটিকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রস্তুতি হিসেবে তৈরি করা হচ্ছে বিশেষ স্মারক কয়েন। এ কয়েন দিয়েই হবে সিলেটের প্রথম টেস্ট ম্যাচের টস। এছাড়াও থাকছে বিশেষ স্যুভেনিয়র ও ‘গ্লিম্পস অব সিলেট’ নামে বিশেষ একটি প্রকাশনা। যাতে সিলেটের ইতিহাস, ঐতিহ্য, পর্যটন, ক্রিকেটে সিলেটের পথচলা, সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ইতিহাস প্রভৃতি নানা তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের এ পরিচালক দর্শকদের উদ্দেশ্যে আহবান জানিয়ে বলেন, মাঠে কোনো ধরনের খাবার বা পানীয় নিয়ে আসা যাবেনা। ঢিল ছোঁড়া যায় এমন কোন বস্তু নিয়ে মাঠে প্রবেশ করা যাবে না। মাঠের মধ্যে খাবার ও খাবার পানির ব্যবস্থা থাকবে। তবে দর্শকরা চাইলে হাতে করে পতাকা বা ব্যানার নিয়ে আসতে পারবেন।

তারপরও দর্শকেরা তাদের নিজেদের মোবাইল ফোন ছাড়া আর অন্যকোনো কিছু নিয়ে যাতে মাঠে না ঢুকেন সে ব্যাপারেও তিনি বাববার অনুরোধ করেন।

তিনি সিলেটের সাবেক টেস্ট ক্রিকেটারদের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘সিলেটের মাঠে অভিষেক টেস্টে আমরা সিলেটের সাবেক টেস্ট প্লেয়ারদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তাদের মধ্যে অনেকেই আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া সংশ্লিষ্ট সকলকেই আমরা আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’

বোর্ডের এ পরিচালক নাদেল স্টেডিয়ামের ইতিহাস টেনে বলেন, ‘২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উদ্বোধন করেছিলেন। এই স্টেডিয়াম শুধুমাত্র ক্রিকেটের কথা মাথায় রেখেই নির্মাণ করা হয়েছে। অন্যান্য ভেন্যুর তুলনায় এ স্টেডিয়ামের সুযোগ-সুবিধাও অনেক বেশি।

সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার অধীনে একটি ক্রিকেট একাডেমি কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথাও উল্লেখ করেন নাদেল বলেন, ‘আমরা সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় ক্রিকেটার হান্টিং শেষ করেছি। তাদের নিয়ে এক মাসের ক্যাম্প হবে। ৩ নভেম্বর বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার অধীনে ক্রিকেট একাডেমির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সৌন্দর্য, আবাসন ব্যবস্থা ও যোগাযোগর দিক দিয়ে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম অনেক এগিয়ে। এই ভেন্যুর প্রতি বোর্ডের আন্তরিকতা আছে। আশা করছি প্রতি সিরিজেই এখানে ম্যাচ থাকবে। তবে যতো বেশি ভেন্যুতে খেলা হবে ততোই স্থানীয় পর্যায়ে ক্রিকেটের জন্য উপকার হবে।’

পরিশেষে তিনি বলেন, সিলেটের অভিষেক টেস্টকে স্মরণীয় করে রাখতে চাই আমরা। তাই আমরা সিলেটবাসীকে মাঠে এসে টেস্ট ম্যাচ দেখার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’
এই অভিষেক টেস্ট ম্যাচকে ঘিরে সিলেটজুড়ে দুদিন ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হবে বইলেও জানান তিনি।

উক্ত সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী সদস্য ও সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম, সিলেট জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদিকা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কার্যনির্বাহী সদস্য মারিয়ান চৌধুরী মাম্মী, সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি হাজী হেলাল উদ্দিন আহমদ, সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাবেক ট্রেজারর শহীদ আহমদ চৌধুরী জুয়েল, সিলেট বিভাগীয় ব্যাডমিন্টন কমিটির সভাপতি কামরান আহমদ, সিলেট বিভাগীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মিডিয়া কর্মকর্তা মোস্তফা ফরিদুল হোসেন কোরেশী, সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সদস্য ইমরান আহমদ, সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কার্যনির্বাহী সদস্য পাপলু দত্ত ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাবেক ট্রেজারর সৈয়দ তকরিমুল হাদী কাবী।