বিয়ানীবাজার নিউজ ২৪ প্রবাস ডেস্ক। ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।

সাত মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারির পর তা বাস্তবায়ন করতে না পেরে নিজের এজেন্ডা বাস্তবায়নে বিকল্প পথ ধরলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে বসবাসরত এক কোটি ১০ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে ধরে তাদের দেশছাড়া করতে এক লাখ সেনা মোতায়েন করছে ট্রাম্প প্রশাসন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এ খবর দিয়েছে। তবে হোয়াইট হাউস এ খবর অস্বীকার করলেও মঙ্গলবার বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসী ধরপাকড়ে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তর।

অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে মার্কিন ন্যাশনাল গার্ড ট্রুপস সদস্যরা বিভিন্ন এলাকায় দফায় দফায় টহল দিচ্ছে। ট্রাম্পের অভিবাসীবিরোধী নতুন ঘোষণায় লক্ষাধিক বাংলাদেশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের ঝুঁকিতে পড়েছেন। এ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অভিবাসী এবং মানবাধিকার নিয়ে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো যুক্তরাষ্ট্রের নীতি-নৈতিকতার পরিপন্থী এ পদক্ষেপ থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ট্রাম্পের প্রতি। খবর দি ইনডিপেনডেন্ট, বিবিসি ও এনআরবি নিউজের।

এ বিষয়ে ১১ পাতার একটি নির্দেশনা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ। জানা গেছে, মেক্সিকো-অ্যারিজোনা সীমান্ত এলাকাসহ ক্যালিফোর্নিয়া, নিউ মেক্সিকো নিয়ে চার রাজ্যে বাড়তি সেনা নামানো হয়েছে। কোনোভাবেই যেন শরণার্থীরা প্রবেশ করতে না পারে, সেই নির্দেশও সেনাদের দেওয়া হয়েছে।

নতুন নির্দেশনা প্রসঙ্গে মার্কিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেলি জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী বহিষ্কারের জন্য প্রথম লক্ষ্যবস্তু হবেন অপরাধে জড়িত থাকার রেকর্ড রয়েছে এমন অবৈধ অভিবাসীরা। গুরুতর অপরাধের পাশাপাশি ট্রাফিক আইন ভঙ্গ বা দোকান থেকে জিনিস চুরি করার মতো তুলনামূলকভাবে লঘু অপরাধে জড়িত, সরকারি সুযোগ-সুবিধার অপব্যবহারকারী ব্যক্তিরা এর আওতায় পড়বেন। এ ছাড়া যাদের জননিরাপত্তা ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করা হবে, তাদেরও খুঁজে বের করা হবে।

নতুন এই নির্দেশনা বিশ্লেষণ করে গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, এতে এজেন্টরা যে কোনো অবৈধ অভিবাসীকেই গ্রেফতার করার ক্ষমতা পাবেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে শুধু গুরুতর অপরাধ করা এবং সীমান্তে ধরা পড়া লোকজনকেই বহিষ্কার করা হতো। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ আদেশ সেই নীতির একেবারে বিপরীত। তবে ওবামার সময়ে শিশু বয়সে অবৈধভাবে প্রবেশকারীদের বহিষ্কার থেকে অব্যাহতি দেওয়ার যে পরিকল্পনা ছিল, তা বহাল রাখা হয়েছে।

নতুন পদক্ষেপ কার্যকর করতে মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট (ডিএইচএস) অতিরিক্ত ১০ হাজার কর্মী নিয়োগ করার পরিকল্পনা করছে। এই দপ্তর বলেছে, অভিবাসন আইন লঙ্ঘনকারী সবাই এ পদক্ষেপ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় পড়তে পারেন। এর মধ্যে থাকবে বহিষ্কারের ব্যবস্থাও।

গত মাসের ২৫ তারিখে ট্রাম্পের জারি করা এক নির্বাহী আদেশে অবৈধভাবে বসবাসরতদের মধ্যে যারা গুরুতর অপরাধে লিপ্ত, শুধু তাদের গ্রেফতার করে নিজ দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও, সর্বশেষ নির্দেশনায় সব অবৈধ অভিবাসীকে ঢালাওভাবে গ্রেফতারের কথা বলা হয়েছে। এ বিশেষ নির্দেশ মন্ত্রণালয় থেকে মাঠ পর্যায়ে পেঁৗছে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লস এঞ্জেলেস সিটিতে ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট’ (আইস)-এর সদস্যরা রাস্তায় নামেন অবৈধদের ধরার জন্য। সেই অভিযানের ছবিও মিডিয়ায় পাঠানো হয়।
ট্রাম্পের নীতির সমালোচনা করে নিউইয়র্ক সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাসিয়ো বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে সামাজিক সম্প্রীতি হুমকির মুখে পড়ল। যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী ছেলেমেয়ের সামনে তাদের মা-বাবাকে ধরে নিয়ে নিজ দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার ফলে পারিবারিক বিভক্তি বাড়বে, যা কোনো সভ্য সমাজে কাম্য হতে পারে না।’

ট্রাম্পের এ পদক্ষেপকে ‘গণবিরোধী ও অ-আমেরিকান’ অভিহিত করে নিউইয়র্ক, লস এঞ্জেলেস, ফিলাডেলফিয়া, বোস্টন, আটলান্টা, সানফ্রান্সিসকো, সিয়াটলসহ তিন শতাধিক সিটির মেয়র সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তারা নিরপরাধ ও অসহায় অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেফতারে কোনো সহায়তা দেবেন না। এ কারণে ক্ষুব্ধ ট্রাম্প অতিরিক্ত ১০ হাজার এজেন্ট নিয়োগের নির্দেশ দেন। শুধু তাই নয়, যেসব সিটি তার নির্দেশ পালনে গাফিলতি বা গড়িমসি করবে, সেগুলোর জন্য কেন্দ্র থেকে বরাদ্দ অনুদান বাতিল করে সেই অর্থ ব্যয় করা হবে নয়া এজেন্টের বেতন-ভাতা বাবদ।