মনিকা ইসলাম বিলকিস আক্তার সুমি আর সুবর্ণা হামিদ। তিনজনই প্রিয়দের তালিকায়। তিনজনই আমার দীর্ঘ দিনের সহকর্মী। অনেকের সাথে অম্ল মধুর সম্পর্ক থাকলেও অদ্ভুত কারণে এই ত্রয়ীর সাথে আমার মধুর সম্পর্ক। কখনো রাগ হয় না। হয়তো রাগের সুযোগ পাই না। অনেকে বলে সম্পর্কে অম্লতা না থাকলে সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয় না। কী জানি এই মানুষগুলোর মধ্যে কোন গুনে অম্লতা আসে নি সম্পর্কে।

সুবর্ণা হামিদ- সেই ছোট্ট বেলা থেকে চিনি। ছোট বোনের ক্লাসমেট হওয়ায় সম্পর্কটা আলাদা ধরনের। ভাইয়া বলে ডাকে, যেমন ছোট ভাই বোন ডাকে। নানা জটিলতা আর সংগ্রামে মুখর জীবন। এখনো মনে পড়ে একুশে টিভির প্রথম দিককার অনুষ্ঠান সুরমা পারের গানে স্বপরিবারে সুবর্ণার কোরাস। এক ঝলক কিংবা এক ক্লিপ দেখতে আমরা অনেকে অপেক্ষা করতাম। সেই ছোট্ট সুবর্ণা হামিদ পরিণত। সন্তানের মা, স্বামীর আদর্শ স্ত্রী। চ্যানেল আইয়ের গর্বিত কর্মী।

বিলকিস আক্তার সুমি- ক্যামেরায় হাতেখড়ি হলেও এখন পুরোদস্তুর রিপোর্টার। শ্রমে, ঘামে নিজেকে শাণিত করেছে। সবুজ সিলেটের সহকর্মী হিসেবে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। এর আগে যে চিনতাম না বা সম্পর্ক ছিলো না, এমনটি নয়। রাজপথে দেখা হতো, কথাও হতো বেশ। কখনো ছবির পেছনে ছুটতে গিয়ে ঘেমে একাকার হয়ে ফিরতো অফিসে। একটি ভালো ছবির জন্য কতটা শ্রম দিতে হতো তা সুমির মতোই মানুষগুলো জানে। যোগ্যতা বলে সুমি জিটিভি গর্বিত কর্মী আজ সে।

মনিকা ইসলাম- সুমি আর সুবর্ণার চেয়ে সাংবাদিকতায় অগ্রজ। দুর্দান্ত মনিকা শ্যামল সিলেটে ছিলেন সাব এডিটর। নিউজপ্রিন্টে সাবলীল কলম চলতো আর মুখে খই ফুটতো। এক চিলতে হাসি লেগেই থাকতো ছোট গড়নের মানুষটার মুখে। প্রতিদিন বিশ্বনাথ থেকে সিলেট আসা চাট্টিখানি কথা নয়। সব কষ্ট জয় করে নিয়মিত অফিস করতো আর দিনের বেলা মাতিয়ে রাখতো নিউজরুম। সুখ দুঃখ আর সংগ্রামে এগিয়ে চলা মনিকা ইসলাম এখনো সাংবাদিকতার অঙ্গনে সরব।

মজার বিষয় হচ্ছে তিনজনই দুর্দান্ত মানুষ। আজকের এই লেখাটা অবশ্যই তাদের খুশি করার জন্য। কারণ তারা হাসলে হাসে সিলেটের অতীত সাংবাদিকতা। প্রায় দেড় যুগ ধরে দেখে আসছি, তাদের সংগ্রাম। মনিকা সংসার কর্মে ব্যস্ততার কারণে সাংবাদিকতা থেকে কিছু দিন দূরে থাকলে পারেন নি। কারণ রক্তে সাংবাদিকতার নেশা। আর সুমি ও সুবর্ণা ঠেকে, ঠকে আঘাতে আঘাতে আজ স্বনামে পরিচিত। মনিকাও কম নয়, একটু দূরে থাকলেও কিন্তু স্থানচ্যুত হয় নি।

এই তিনজন শুধু নিজে নয়, তাদের স্বামীরও সাংবাদিক। এবং ভালোবেসে নিজের মানুষকে জয় করেছেন। কাকতালীয়ভাবে লেখাটা নারী দিবসে এসে শেষ হলো।