ভারত ও বাংলাদেশের সিলেট দিয়ে বয়ে যাওয়া দুই নদী কুশিয়ারা এবং গঙ্গার পানি বণ্টন বিষয়ক আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের সরকারি প্রতিনিধিদের মধ্যে। সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্ধারিত ভারত সফরের আগেই একটি চুক্তি হতে পারে।

দুই দেশের মধ্যে প্রবাহিত বিভিন্ন নদীর পানির সুষম বণ্টন নিশ্চিতে গঠিত যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টন বিষয়ক চুক্তি প্রস্তুতের কাজ শুরু করেছেন।

আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দিল্লি সফরে যাবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আগেই, অর্থাৎ আগস্টের শেষ সপ্তাহেই চুক্তিটি স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কমিশনের দুই দেশের সরকারি প্রতিনিধিরা। সূত্রের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দ্য হিন্দু।

এছাড়া সাম্প্রতিক বর্ষায় দুই দেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হওয়া বিভিন্ন নদীর পানি বেড়ে তীরবর্তী অঞ্চলে বন্যার ব্যাপারটিও গুরুত্ব পাচ্ছে জেআরসির ভারত ও বাংলাদেশি প্রতিনিধিদের আলোচনায়। গত জুন-জুলাই মাসে অতি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নদীর পানির স্তর বেড়ে যাওয়ায় ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম ও তার সীমান্তঘেঁষা বাংলাদেশের সিলেট বিভাগে ব্যাপক বন্যার ঘটনা আমলে নিয়ে এ ধরনের দুর্যোগ প্রতিরোধে যৌথভাবে কাজ করতে চায় কমিশন।

বহু বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গত জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠনের পর ২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রথম দিল্লি সফরে যান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের সময় বিষয়টি উত্থাপন করেন তিনি।

তারপর ২০২১ সালের মার্চে নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফরে এলে সে সময়ও দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ছিল তিস্তা। কিন্তু সে সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির কারণে তিস্তার অচলাবস্থা কাটছে না।

তবে গত সপ্তাহে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করতে দিল্লি গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন ইস্যুর পাশাপাশি তিস্তা নিয়ে বৈঠক হয়েছে উভয়ের মধ্যে। সূত্রের বরাত দিয়ে দ্য হিন্দু জানিয়েছে, ওই বৈঠকে তিস্তার বিষয়য়েও একটি সুরাহায় পৌঁছেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। তবে এ বিষয়ে কী সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন তারা, তা স্পষ্ট জানা যায়নি।

উভয়দেশের মধ্যে প্রবাহিত বিভিন্ন নদীর জলসম্পদ বণ্টন, সেচ এবং বন্যা ও এই জাতীয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ যৌথভাবে মোকাবিলা করতে ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের মধ্যে সমঝোতার মধ্যে দিয়ে গঠিত হয় যৌথ নদী কমিশন বা জেআরসি।

কিন্তু এই কমিশনের ধারবাহিকতায় বার বার ছেদ পড়েছে। জেআরসির সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিল ২০১০ সালে। রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরকে গুরুত্ব দিয়েই ফের তৎপর হয়ে উঠেছে জেআরসি।

শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফর নানা কারণেই তাৎপর্যপূর্ণ। প্রধান কারণ— আগামী বছর জাতীয় নির্বাচন হবে বাংলাদেশে। তার আগে সম্ভবত এটিই শেখ হাসিনার শেষ ভারত সফর।

‌বন্যায় তিলপাড়া ইউপির ৯৫ শতাংশ এলাকাই ছিল প্লাবিত, যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক