গোলাপগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর উপর শিকপুর-বহরগ্রাম এলাকায় সেতু নির্মাণ কাজে গতি পেয়েছে। দীর্ঘ ৫বছর ধরে নির্মাণ প্রকল্প ঝুলে থাকার পর সম্প্রতি সেতু নির্মাণ এলাকা পরিদর্শন করেছেন জাপানি দাতা সংস্থা জাইকার প্রতিনিধি দল। আড়াইশ মিটার র্দৈঘ্যের সেতুটি প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মাণ করা হবে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
সিলেট থেকে গোলাপগঞ্জ হয়ে বিয়ানীবাজার- বড়লেখা যেতে বর্তমানে দুই দিকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার বেশী পথ পাড়ি দিতে হয়। এর মধ্যে শেওলা সেতু দিয়ে চলাচল করলে প্রায় ২০ কি:মি: এবং চন্দরপর-সুনামপুর সেতু দিয়ে গেলে প্রায় ১০ কি:মি: পথ বেশি অতিক্রম করতে হয়। ফলে শিকপুর-বহরগ্রাম সেতু নির্মিত হলে এই ৩০ কি:মি: দুরত্ব কমে আসবে।
সেতু নির্মাণের খবরে নদী তীরবর্তী মানুষের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে। গত রবিবার সেতু নির্মাণ এলাকা পরিদর্শন করেন জাইকার কনসালট্যান্ট রোদরিগো মার্টিনেজ, এরলু কারলোন ও মোস্তফা ইকবাল আজম। এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রকল্পের প্রকৌশলী আল্লাহ হাফিজ (সিআইবিআরআর), উপ প্রকল্প প্রকৌশলী আবু সালেহ মোঃ হানিফ, সিলেট এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী এ.এস.এম মহসিন, গোলাপগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ জুলফিকার হক চৌধুরী।
যোগাযোগ করা হলে জুলফিকার হক চৌধুরী বলেন, সেতুর নকশা প্রনয়নের কাজ শুরু হয়েছে। নকশা চুড়ান্ত করার পূর্বে দাতা সংস্থার প্রতিনিধিরা নির্মাণ এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
এদিকে, অনুসন্ধানে জানা গেছে প্রায় ৫বছর পূর্বে নিজ নির্বাচনী এলাকার জনগনের দাবীর প্রেক্ষিতে কুশিয়ারা নদীতে শিকপুর-বহরগ্রাম সেতু নির্মাণের আশ্বাস দেন সিলেট -৬ আসনের সাংসদ শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ।
এরপর ২০১৩ সালের আগষ্ট মাসে শিকপুর-বহরগ্রাম সেতুর কারিগরি দিক ও নদীর নাব্যতা যাচাই করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড.সুজিত কুমার বালা ও অধ্যাপক ড.তারেকুল ইসলাম । এরপর সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি অদৃশ্য কারনে আর গতি পায়নি। অবশেষে ৫ বছর পর প্রকল্পের কাজে নতুন করে গতি এসেছে।
এদিকে গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও বড়লেখা উপজেলার সাথে সিলেটের যোগাযোগ স্থাপনের জন্য দীর্ঘ প্রায় ১যুগ পূর্বে কুশিয়ারা নদীতে ফেরী সার্ভিস চালু করা হয়। ফেরী পারপারকে কেন্দ্র করে নদী তীরে গড়ে উঠে বাজার ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। পূর্ব সিলেটে যাতায়াতের বিকল্প পথ হিসেবে গোলাপগঞ্জ-আমুড়া ভায়া শিকপুর-বহরগ্রাম ফেরি সার্ভিস অনেকটা সহজ মাধ্যম ছিল। ফলে এ ফেরী দিয়ে প্রতিদিন শত শত যানবাহন ও হাজার হাজার লোক যাতায়াত করতেন। সিলেট-বিয়ানীবাজার-বারইগ্রাম সড়ক থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরত্ব কম হওয়ায় বহু যাত্রী এ পথ দিয়েই চলাচল করতেন। ২০১৫ সালে কুশিয়ারা নদীর ওপর চন্দরপুর-সুনামপুর সেতু চালু হলে শিকপুর-বহরগ্রাম ফেরি সার্ভিসের গুরুত্ব অনেকটা কমে যায়। বড়লেখা ও বিয়ানীবাজার উপজেলার মানুষ সময় বাচাঁতে কয়েক কিলোমিটার ঘুরে সেতু দিয়ে যাতায়াত শুরু করেন। সারা দিনে গুটি কয়েক যানবাহন চলাচল করায় ফেরি সার্ভিসের জন্য ফেরিঘাট ইজারা নিতে আগ্রহ দেখায়নি কেউ। লোকসানের ঘানি টেনে কর্তৃপক্ষ নিজস্ব লোকবল দিয়ে ফেরি সার্ভিস কোনো রকমে চালু রেখে এ সড়কের যাত্রীদের সেবা প্রদান করে আসছিলেন। ফেরীতে পারাপারের জন্য যেখানে দিন রাত গাড়ীর দীর্ঘ লাইন পড়ে থাকত সেখানে লোকসান গুনতে গুনতে একসময় ফেরী সার্ভিস সাময়িক বন্ধ করে দেন কর্তৃপক্ষ। তারপর ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের শেষের দিকে কুশিয়ারা নদীর পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পেলে বন্ধ থাকা ফেরী ও পল্টুন পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সার্ভিস পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
সওজ সূত্র জানায়, সুনামপুর-চন্দরপুর সেতু চালু হওয়ার পর বহরগ্রাম-শিকপুর ফেরী সার্ভিস চালু রাখতে গিয়ে বছরে ১ লক্ষ ৯২ হাজার টাকা ভর্তুকি গুনতে হত। বহরগ্রাম শিকপুর এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান সেতু চালু হলে আবারো গাড়ী চলাচল বৃদ্ধিপাবে শিকপুর দিয়ে। ফলে স্থবির হয়ে পড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রাণ ফিরে পাবে সেই সাথে জনদূর্ভোগ লাগব হবে।