বৃটেনে সিলেটের ঠিক কত সংখ্যক মানুষ বাস করেন এর কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে, যা আছে তা কেবল অনুমাননির্ভর। সেটি এখন দাঁড়িয়েছে ১০ থেকে ১৫ লাখে। দিন দিন এই সংখ্যা আরো বাড়ছে। এখন চলছে ‘ফোর্থ জেনারেশন।’ এ কারণে লন্ডন এবং সিলেট একে অপরের মাসতুতো ভাই। লন্ডনে এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপ। শুরু হয়ে গেছে ক্রিকেটের মহারণ। এই মহারণের জন্য আগে থেকেই তৈরি ছিলেন লন্ডনে থাকা সিলেটিরা।

বাংলাদেশ টিমকে নিয়ে স্বপ্নের বিশ্বকাপের স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন তারা। এ কারণে এবার ঈদ সিলেটে সাদামাটা। ফ্যাকাশেও বলা যায়। প্রবাসীরা নেই সিলেটে। ঈদেরও রং নেই প্রবাসীর শহরখ্যাত সিলেটে। সবাই মেতেছেন বিশ্বকাপে। এ কারণে আপাতত নজর নেই জন্মভূমির দিকে। তবে সিলেট থেকে অনেকেই এরই মধ্যে খেলা দেখতে ছুটে গেছেন বৃটেনে। কেউ কেউ যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। পরিবারের সঙ্গে ঈদটা সেরেই ছুটে যাবেন স্বপ্নের শহর লন্ডনে।

সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও ফ্যাশন হাউস মাহার স্বত্বাধিকারী মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম জানিয়েছেন, লন্ডনে এবার বিশ্বকাপ খেলা থাকায় আমরা লন্ডনিদের ঈদে পাচ্ছি না। সবাই খেলায় মত্ত। এ কারণে এবার লন্ডনি স্বজনদের ছাড়াই সিলেটে ঈদ পালন করতে হচ্ছে। তবে প্রবাসীরা না এলেও সিলেটে ঈদের কেনাকাটায় কোনো প্রভাব পড়েনি বলে জানান তিনি। বাড়ি না এলেও আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে তারা ঈদ উদ্‌যাপন করছেন।

প্রতিবছর ঈদ এলেই সিলেটে হুমড়ি খেয়ে পড়েন প্রবাসীরা। আগে থেকেই তারা ঈদে বাড়ি আসার প্রস্তুতি শুরু করেন। বিশেষ করে ঈদুল ফিতরেই তারা বাড়ি ফিরেন বেশি। কিন্তু এবারের পরিবেশ ভিন্ন। সিলেটমুখী হচ্ছেন না প্রবাসীরা। বলতে গেলে প্রবাসীদের আসা এবার শূন্যের কোঠায়।

বৃটেনে বসবাসরতরা জানিয়েছেন, বৃটেনের ওভাল, নটিংহ্যাম, কার্ডিফ, বৃস্টল, টাউনটন, সাউদাম্পটন, বার্মিংহাম ও লর্ডসের ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বাংলাদেশের খেলা হবে। ইতিমধ্যে এসব খেলার বেশির ভাগ টিকিটই সিলেটিরা কিনে ফেলেছেন। বিশেষ করে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের টিকিট নিয়ে কাড়াকাড়ি চলছে।

বৃটেনে বসবাসরত ফখরুল, জুবায়ের ও সুহেল জানালেন, সিলেটিরা এবার বাড়ি যাচ্ছেন না শুধুমাত্র খেলার জন্য। মাঠে বসে বাংলাদেশ দলকে সাপোর্ট ও প্রেরণা দেয়াই এখন সবচেয়ে বড় কাজ। এ কারণে তারা বাড়িমুখী নয়, এখন মাঠমুখী। পাশাপাশি তারা লন্ডনে থেকে বাংলাদেশ দলের পক্ষে প্রচারণাও চালাচ্ছেন। দলকে উজ্জীবিত করতে যখন যা করা প্রয়োজন তখন তারা তাই করছেন।

এদিকে এবার আর দেশে নয়। ঈদের আড্ডা জমতে যাচ্ছে লন্ডনে। সিলেটের অনেকেই এরই মধ্যে খেলা দেখতে ছুটে গেছেন সেখানে। আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে ঈদ পালন করবেন। একই সঙ্গে তারা মাঠে বসে টাইগারদের খেলা দেখার প্রস্তুতি নিয়েছেন। এ কারণে এবার লন্ডনের সবক’টি গ্রাউন্ডকে বাংলাদেশের জন্য বলা হচ্ছে হোমগ্রাউন্ড। কারণ বাংলাদেশ টিম সিলেটের লাক্কাতোড়ার নান্দনিক স্টেডিয়ামে খেলতে এসে সিলেটবাসীর যে সমর্থন পায় সেটিই এবার পেতে পারে লন্ডনে। যেহেতু গ্যালারি থাকবে দখলে, এ কারণে মাঠের খেলায় টাইগারদের সেরাটাই দেখতে চান দর্শকরা। আর ভালো খেললে, জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখলে, লন্ডনের দর্শকরা সিলেটের মতো মেতে উঠবে- এমনটি জানিয়েছেন প্রবাসীরা।

ওদিকে ক্রিকেট বিশ্বকাপকে সামনে রেখে লন্ডনে বসবাসরত সিলেটি যুবকরা বিশ্বকাপ নিয়ে একটি গান রেকর্ডের পর সেটি মুক্তি দিয়েছে। সম্প্রতি ফেসবুকে সেই গান রিলিজ দেয়া হয়েছে। গানটিও হয়েছে ভাইরাল। সিলেটের ছেলে ফজলুল হক রাজিবের লেখা গানটিতে সুর দিয়েছেন ইবরার টিপু। এই গানটি ভিউজ্যুয়াল ভার্সনের শুটিংও হয়েছে লন্ডনে। ফলে সব মিলিয়ে লন্ডনে বসবাসকারী সবাই বিশ্বকাপের উন্মাদনায় মেতে উঠেছেন।