করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশব্যাপী বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা। এমন পরিস্থিতিতে বুধবার (১৪ এপ্রিল) থেকে সিলেটসহ সারাদেশে আটদিনের কঠোর লকডাউন শুরু হবে। আর লকডাউনের দেয়া বিধিনিষেধগুলো না মানলেই কঠোর ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন।

সোমবার (১২ এপ্রিল) বিকালে বিয়ানীবাজার পৌরশহরে মাইকিং প্রচারণার মাধ্যমে লকডাউন পালনে মন্ত্রীপরিষদ থেকে জারিকৃত ১৩ টি নিষেধাজ্ঞা জানিয়ে বিয়ানীবাজারবাসীকে তা মেনে চলার আহবান জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশিক নূর।

প্রচারনায় বলা হয়েছে, ‘প্রিয় বিয়ানীবাজার, ১৪ এপ্রিল ২০২১ খ্রিস্টাব্দ ভোর ৬টা থেকে থেকে ২১ এপ্রিল ২০২১ খ্রিস্টাব্দ মধ্য রাত পর্যন্ত মেয়াদে আরোপিত বিধি-নিষেধ যথাযথভাবে মেনে চলতে অনুরোধ করছি। নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

করোনাভাইরাসের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকাখ্যাত বিয়ানীবাজার। দেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ধরা পড়লেও বিয়ানীবাজারে ধরা পড়ে ওই বছরের ২৪ এপ্রিল। বিয়ানীবাজারে এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৮৭ জন এবং আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৮ জন রোগী। এ পর্যন্ত উপজেলায় ৩৩৭ জন সুস্থ হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে কঠোর অবস্থানে আছে বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মাস্ক পরিধান এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারি নির্দেশনা প্রতিপালনে শুরু থেকেই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছে উপজেলা প্রশাসন। এসব অভিযানে অনেকেই গুনেছেন জরিমানা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, লকডাউন শুরুর দিন অর্থাৎ বুধবার সারাদিন মাঠে থাকবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিল্লোল রায়, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মেহেদী হাসানসহ পুলিশ সদস্যরা।

‘কঠোর লকডাউন’ নিয়ে মন্ত্রিপরিষদের দেয়া ১৩ নির্দেশনা-

১. সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন। তবে বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থলবন্দর এবং সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো এই নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে।

২. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।

৩. সব প্রকার পরিবহন (সড়ক, নৌ, রেল, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট) বন্ধ থাকবে। তবে পণ্য পরিবহন, উৎপাদন ব্যবস্থা ও জরুরি সেবার ক্ষেত্রে এই আদেশ প্রযোজ্য হবে না।

৪. শিল্প-কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। তবে শ্রমিকদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেওয়া নিশ্চিত করতে হবে।

৫. আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরি সেবা, যেমন: কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরগুলোর (স্থলবন্দর, নদীবন্দর ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এই নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে।

৬. অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত (ওষুধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনা, চিকিৎসা সেবা, মরদেহ দাফন বা সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। তবে টিকা কার্ড দেখানো সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যা।

৭. খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা এবং রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কেবল খাদ্য বিক্রয় বা সরবরাহ করা যাবে। শপিং মলসহ অন্যান্য দোকানগুলো বন্ধ থাকবে।

৮. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। বাজার কর্তৃপক্ষ বা স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

৯. বোরো ধান কাটার জরুরি প্রয়োজনে কৃষি শ্রমিক পরিবহনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন সমন্বয় করবে।

১০. সারা দেশে জেলা ও মাঠ প্রশাসন উল্লিখিত নির্দেশনা বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত টহল জোরদার করবে।

১১. স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তাঁর পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করবেন।

১২. স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জুমা ও তারাবিহ নামাজের জমায়েত বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা জারি করবে।

১৩. এই নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ প্রয়োজনে সম্পূরক নির্দেশনা জারি করতে পারবে।

বিয়ানীবাজারে ঘর নির্মাণের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় প্রতিবন্ধি যুবকসহ আহত ৩