রোবটিকস প্রতিযোগিতায় লড়তে এসেছে মুড়ির ডিব্বা! লড়াই তো পরের কথা, প্রতিযোগী দলের নাম শুনেই সবাই আগে একচোট হেসে নিত। মুড়ির ডিব্বা—এটা আবার কেমন নাম! ওসব হাসির তোয়াক্কা না করে মুড়ির ডিব্বা কিন্তু ঠিকই কয়েকটি প্রতিযোগিতা থেকে পুরস্কার ছিনিয়ে এনেছে।

সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটিতে বেশ কয়েকজন ফাহিম আছেন। তবে মুড়ির ডিব্বা ফাহিম বা রোবটিকস ফাহিম কিংবা মার্স রোভার ফাহিম বললে সবাই একজনকেই চেনে—ফাহিম আহমদ। স্নাতক সম্পন্ন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগ থেকে। ফাহিম আহমদ বড়লেখা পৌরশহরের হাটবন্দ এলাকার শাহাব উদ্দিন সিরাজের পুত্র।

রোবটিকসের দল—মুড়ির ডিব্বার প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন এই ফাহিম, বিচিত্র নামটিও তাঁরই দেওয়া।

ক্যাম্পাসের বড় ভাইদের দেখে প্রথম বর্ষেই ফাহিমের রোবটিকসের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। বিভিন্ন কর্মশালায় অংশ নিতে শুরু করেন তিনি। ফাহিম বলেন, ‘প্রথম দিকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ ছিল স্রেফ অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য। নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েকবার চ্যাম্পিয়ন বা রানারআপ হয়েছি। তবে বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত রোবটিকস প্রতিযোগিতায় প্রথম চ্যাম্পিয়ন হই ২০১৬ সালে।’

চট্টগ্রামের সাদার্ন ইউনিভার্সিটিতে আয়োজিত ‘সাদার্ন রোবোটিক কনটেস্ট-২০১৬’–এর রোবোফাইটে চ্যাম্পিয়ন হয় মুড়ির ডিব্বা। সেই থেকে শুরু। ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে ‘রোবোরায়ট-২০১৭ ’, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ‘রোবোরেসলিং-২০১৭’সহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ফাহিমের দল। এ ছাড়া ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি) বোম্বেতে ‘রোবো-সুমো-রেসলিং-২০১৬’, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘রোবটিকস কনটেস্ট-২০১৭’সহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় রানারআপ হন ফাহিম ও তাঁর দল।

মার্স রোভার নামে একটি রোবট তৈরি করেছে ফাহিমের দল। রোবটটি মঙ্গলপৃষ্ঠে অবতরণ করালে, এটি মঙ্গলের আবহাওয়া–সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে পারবে। জানাতে পারবে, গ্রহটি মানুষের বসবাসের উপযোগী কি না। আবিষ্কারের স্বীকৃতিও মিলেছে। ফাহিমদের তৈরি রোবট যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা আয়োজিত ইন্ডিয়ান রোভার চ্যালেঞ্জ-২০১৮–তে রানারআপ হয়েছে।

এখন লিডিং ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে পড়ছেন ফাহিম আহমদ। প্রকৌশলবিদ্যা ছেড়ে ব্যবসায় প্রশাসন কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নিজেদের তৈরি রোবট কীভাবে ব্যবসায়িকভাবে সফল করানো যায়, তা জানতে, শিখতে এমবিএতে ভর্তি হয়েছি।’ ভালো সংগঠক হিসেবে বেশ সুনাম আছে ফাহিমের। ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত লিডিং ইউনিভার্সিটি (এলইউ) ইলেকট্রনিকস ক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। একই সময়ে তিনি ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ার্স (আইট্রিপলই) লিডিং ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট ব্রাঞ্চের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন।

একসময় ফাহিম বিভাগের বড় ভাইদের কাছে তাঁদের বাসায় গিয়ে শিখেছেন রোবট তৈরির কৌশল। এখন তিনি নিজের দক্ষতা অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে এলইউ ইলেকট্রনিকস ক্লাবের মাধ্যমে ছোট ভাইদের প্রশিক্ষণ দেন। বেশ কয়েকবার বিদেশে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছিলেন, যাননি। নিজের দেশের জন্য কিছু করার স্বপ্ন দেখেন এই তরুণ।

তথ্যসূত্র- প্রথম আলো।