বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্য‌মে বহুল কা‌ঙ্ক্ষিত কুলাউড়া-‌শাহবাজপুর রেললাইন সেকশন পুনর্বাস‌ন প্রকল্প কা‌জের আনুষ্ঠানিক উ‌দ্বোধন করেছেন। আজ সোমবার বিকাল ৫টার দি‌কে উভয় দে‌শের প্রধানমন্ত্রী ভি‌ডিও কন‌ফারেন্সের মাধ্য‌মে এই কা‌জের উ‌দ্বোধন ক‌রেন।

এসময় কুলাউড়া-শাহবাজপুর লাইন সংস্কার প্রকল্পসহ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েল গেজ রেল লাইন নির্মাণ কাজ এবং বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে ভারত থেকে ভেড়ামারায় নবনির্মিত ৫শ মেগাওয়াট এইচভিডিসি ব্যাক টু ব্যাক স্টেশন সেকেন্ড ব্লকের উদ্বোধন করেন দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী।

‌ভি‌ডিও কনফা‌রে‌ন্সে দুই দে‌শের প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও বক্তব্য রা‌খেন ভার‌তের প‌‌শ্চিমব‌ঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানা‌র্জি, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব, ভার‌তের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা ব্যানা‌র্জি, বাংলা‌দে‌শের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী।

জানা যায়, কুলাউড়া-শাহবাজপুর অংশের সংস্কার এবং আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজে বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে অর্থায়ন করবে। ট্রান্স এশিয়া রেলওয়ে নেটওয়ার্কের অংশ হিসেবে কুলাউড়া-শাহবাজপুর অংশের সংস্কার প্রকল্প বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রেলসংযোগ পুনঃস্থাপিত করবে। প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৫৩ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ রেললাইন, সেতু ও কালভার্ট একাধিক স্টেশন ও অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে এবং স্থাপন করা হবে নন-ইন্টারলকড কালার লাইট সিগন্যাল-ব্যবস্থা।

ভিডিও কনফারেন্সটি কুলাউড়া জংশন রেলস্টেশন চত্বরে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টের মাধ্যমে জনসাধারণকে দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়। আর ওই মুহূর্তটি বরণ করতে প্রস্তুত ছি‌লো কুলাউড়া রেলওয়ে জংশন সংলগ্ন বিশাল মঞ্চ। তৈরি ছি‌লো বিশাল মঞ্চ ও দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর নামে ‘ফলক নির্মাণ’। শহরজুড়ে শোভা পায় বাংলাদেশ এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর যৌথ ছবি সংবলিত বড়-বড় ফেস্টুন। অনুষ্ঠান সফল করতে পুলিশের পাশাপাশি সভাস্থলের আশপা‌শের দায়িত্ব পালন করে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি)।

কুলাউড়া উপ‌জেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. সাদী উর র‌হিম জাদীদ’র মঞ্চের সা‌র্বিক তত্ত্বাবধানে রেললাইন পুনর্বাসনের কাজ ও কুলাউড়া জংশন স্টেশন প্রাঙ্গণে উ‌দ্বোধনী ম‌ঞ্চে উপ‌স্থিত ছি‌লেন জাতীয় সংসদের হুইপ শাহাব উদ্দিন, সা‌বেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস স‌হিদ, এম‌পি, মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনের সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল মতিন, মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. তোফায়েল ইসলাম, কে‌ন্দ্রিয় আওয়ামীলী‌গের সদস্য অধ্যক্ষ র‌ফিকুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নেছার আহমদ, কুলাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যান আ.স.ম কামরুল ইসলাম, বড়‌লেখা উপ‌জেলা চেয়ারম্যান র‌ফিকুল ইসলাম সুন্দর, জু‌ড়ি উপ‌জেলা চেয়ারম্যান গুলশান আরা মি‌লি, কুলাউড়া পৌর মেয়র মো. শ‌ফি আলম ইউনুছসহ বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের উচ্চপদস্ত কর্মকর্তাগণ।

প্রসঙ্গত, কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথটির দৈর্ঘ ৫৩ কিলোমিটার। ১৮৮৫ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে অংশ হিসেবে চালু হয়েছিল। এটি ভারতের আসাম রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ২০০২ সালের ৭ জুলাই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এই রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার লোকজন দুর্ভোগে পড়ে। পরবর্তীতে এ পথে পুনরায় ট্রেন চালুর দাবিতে স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ২৬ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৬৭৮ কোটি ৫০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা ব্যয়ে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনর্বাসন প্রকল্প অনুমোদন হয়।

গত ১৬ আগস্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কাজ পরিদর্শন করেন। ১০ আগস্ট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে রেলের পুরনো ব্রিজ ও রেললাইন ওঠানোর কাজ শুরু হয়। কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথে ছয়টি স্টেশন রয়েছে। ভারতের ‘কালিন্দি রেল নির্মাণ’ প্রতিষ্ঠান দরপত্রের মাধ্যমে কাজটি পেয়েছে।