রাণীর দেশ ইংল্যান্ডের সাথে লড়াকু বাংলাদেশের দেখা মিলেনি। টস জিতে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়টি এখন পুরনো। অতিথের রেকর্ড থেকে অধিনায়কের সিদ্ধান্ত প্রথম পাঁচ ওভার পর্যন্ত ঠিক থাকলেও এরপর খেই হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার ছড়াও হওয়ার পর থেকে মাঠে আস্তে আস্তে মিলিয়ে যেতে থাকে টাইগার। নিউজিল্যান্ডের সাথে যে লড়াকু মানসিকতা ছিল শনিবার তার ছিটেফোটাও দেখা যায়নি মাঠে। হয়তো বিশাল রানে চাপা পড়ার ভয় থেকে খেলা হারার আগেই হেরে যায় ম্যাশ বাহিনী। তবে একজন ব্যতিক্রম ছিলেন। বিশেষ করে ব্যাটিং দুর্দান্ত ও ধারাবাহিক সাকিবকে পাচ্ছে টিম বাংলাদেশ। বোলার থেকে অরলাউন্ডার সাকিব এখন দলের তিন নম্বর পজিশনের সেরা ব্যাটসম্যান- আরো বাড়িয়ে বললে এ পজিশনের এখন একমাত্র ভরসা সাকিব।

ইংল্যাণ্ডের ৩৮৬ রানের জবাবে ২৮০ রানে অল আউট হয়ে যায় টাইগার বাহিনী। ১০৬ রানের পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়া ম্যাশদের হার প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু সাকিব যতক্ষণ ব্যাটিং (১২৫) করেছেন তখন পর্যন্ত রান সংখ্যা তিন ছাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু সাকিব আউট হয়ে গেলে মাহমুদুল্লাহ, সৈকতরা দলকে সেভাবে এগিয়ে নিতে যেতে পারেননি। উল্টো পুরো ৫০ ওভার  পূর্ণ করার আগেই অলআউট টাইগাররা!

বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাকিব আল হাসানের পথচলা শুরু গত দশকে। শুরুতে বাঁহাতি স্পিনারের তকমা গায়ে মেখে জাতীয় দলে আবির্ভাব। এরপর সময়ের পরিক্রমায় বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ব্যাটে-বলে সমান পারদর্শী এই বাঁহাতি দলের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার।ক্যারিয়ার জুড়ে বেশিরভাগ ম্যাচেই পাঁচ-ছয়ে ব্যাট করেছেন সাকিব। কখনোবা চারে। গত কয়েকটি সিরিজ থেকে নিজের ইচ্ছাতেই তিন নম্বরে নামছেন তিনি। তিনে নেমে পাচ্ছেন চোখ ধাঁধানো সাফল্য। এই প্রথম তিন নম্বরে সেঞ্চুরিও পেয়ে গেলেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দল বিধ্বস্ত হলেও সাকিবের ব্যাটিং বাংলাদেশ দলকে দিয়েছে খানিকটা স্বস্তি। ম্যাচ শেষে তিনি জানালেন, এই পজিশন বেছে নিতে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি তাকে।

২০১৪ সালে প্রথমবার তিন নম্বরে ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়ে ব্যর্থ হন সাকিব। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওই ম্যাচে রানের খাতা না খুলেই আউট হন তিনি। ওই ব্যর্থতার তিন বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ফের তিন নম্বরে সুযোগ আসে সাকিবের। মাঝে চারটি ম্যাচ ৫ নম্বরে ব্যাটিং করলেও এই সময়ের বাকি ম্যাচগুলোতে তিন নম্বরেই ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। ২০১৭ সালের পর এই পজিশনে ব্যাটিং করে দারুণ সফল সাকিব।

তবে তিন নম্বর পজিশনটি নিজের করে নিতে টিম ম্যানেজমেন্টকে দৃঢ়তার সঙ্গে বোঝাতে হয়েছে। সাকিবকে প্রমাণ করতে হয়েছে এই পজিশনে ব্যাটিং করার যোগ্য তিনি। সোফিয়া গার্ডেনসে বিশ্বকাপের প্রথম সেঞ্চুরি শেষে একথাই জানালেন সাকিব, ‘হ্যাঁ, সবার কাছে প্রমাণ দিতে হয়েছে যে এখানে আমি ব্যাটিং করার যোগ্য। যদি আমি এই পজিশনে রান না পাই তাহলে সতীর্থরাই বলবে যে আমার পাঁচে ব্যাটিং করা উচিত। এজন্য বলছি এখানে ব্যাটিং করতে সবাইকে অনেক বোঝাতে হয়েছে।’

এই পজিশনে ব্যাটিং করার চ্যালেঞ্জে জয়ী হয়ে সাকিব বলেছেন, ‘এটা ভিন্ন অনুভূতি। নতুন চ্যালেঞ্জ বলা যায়। আমি এখনও এই পজিশনে ব্যাটিং শিখছি বলবো। এখনও বড় কোনও কিছু করে ফেলিনি। এটা মাত্রই শুরু হলো। আমি দলের হয়ে যতটুকু পারছি অবদান রাখার চেষ্টা করছি, সেটা বোলিং-ব্যাটিং যাই হোক না কেন। এটা আমার জন্য দারুণ একটি সুযোগ। আমি এখন উপভোগ করছি তিনে ব্যাটিং করে।’