হাসপাতালে ভর্তি (আছলাম) ছিলাম। একবার ডাক্তার (আইয়া) এসে দেখলো না। কোনো ঔষধও পাইলাম না। অতারলাগি (এর জন্য) সিট ছাড়িয়া যাইয়ারগি (চলে যাচ্ছি)। স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ হাসপাতাল ত্যাগ করে যাওয়ার সময় এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও ইউপি’র পশ্চিমভাগ গ্রামের আব্দুল মুমিন। তিনি জানান, স্ত্রীর প্রচন্ড জ্বর হয়েছিলো। গত ০৯ জুলাই হাসপাতালে ভর্তি হন। কোনো ধরণের সেবা না পেয়ে ক্ষোভে ও দু:খে হাসপাতাল ছেড়ে যান তিনি। স্বাস্থ্যসেবার এই বেহাল দশা জেলা সদরের পার্শ্ববর্তী রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

হাসপাতালে আসা সেবাগ্রহীতা অনেকেই অভিযোগ করেন, জেলা সদরের কাছাকাছি হওয়ায় এই হাসপাতালে কোনো ধরণের ভালো চিকিৎসা সেবা পাওয়া মুশকিল। কাঁটা-ছেঁড়া কিংবা দুর্ঘটনার রোগী হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার আগেই রেফার্ড করা হয় জেলা সদর হাসপাতালে। আর জটিল কিংবা মারাত্মক কিছু হলে প্রেরণ করা হয় সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এছাড়া হাসপাতালে গেলেও সরকারি বরাদ্ধের কোনো ঔষধ পান না রোগীরা।

সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেলো হাসপাতালটির বেহাল দশা। জরাজীর্ণ ভবন। প্রবেশ করতে যেয়ে প্রথমে মনে হবে, হাসপাতাল নয়-এটি কোনো ভূতুড়ে বাড়ি। শ্যাওলা আর ময়লার সখ্যতায় এক উদ্ভট দুর্গন্ধ আগন্তুকদের যেনো স্বাগত জানায়। মূল গেট ধরে ভেতরে প্রবেশ করতে চোখে পড়ে কুকুরের নিরাপদ ঘুমের দৃশ্য। প্রবেশপথের এই হাল ভেতরের ভয়াবহ চিত্রের যেনো একটা আগাম বার্তা জানিয়ে দেয়। উপজেলার প্রায় আড়াই লাখ মানুষের জন্য নির্মিত এই ৩১ শয্যা হাসপাতালটি এখন নিজেই রোগী হয়ে পড়েছে। পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ড অপরিচ্ছন্ন ও অপরিস্কার থাকে সব সময়। তীব্র গন্ধে সেখানে অবস্থান করাও বেশ কষ্টকর। তবুও অসহায় মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পাবার আসায় সেখানে ভর্তি হন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের বেশিরভাগই জ্বর, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত।

পুরুষ ওয়ার্ডের বারান্দায় ভাঙা সিট, পরিত্যক্ত ও ময়লাযুক্ত ফোম আর বেডসিট মিলে গোটা হাসপাতাল এলাকা-ই জানান দেয়, পরিচ্ছন্নতাকর্মী থেকে শুরু করে বড়োকর্তাদের কাজ শুধু চাকরি করা আর  কোনোমতে মাস শেষ হলে বেতন উত্তোলন। সরেজমিনে গিয়ে পুরো হাসপাতাল ঘুরে কোনো ডাক্তারের  দেখা মেলেনি। হাসপাতালের পরিসংখ্যানবিদ পরিচয় দিয়ে একজন জানালেন, ভারপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সভায় আছেন। আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ছুটিতে। এখানে ১০ জন ডাক্তারের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ২জন।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: উত্তম কুমার শর্মা জানান, ১০টি  মেডিক্যাল অফিসার পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ০৪টি পদ। হাসপাতালে কর্মরত আছেন ০৬জন। এর মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: বর্ণালী দাস রয়েছেন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে। ডা: শুভাশীষ গুপ্ত পারিবারিক ছুটিতে। ডা: শামসুন্নাহার ইভা প্রেষণে আছেন হবিগঞ্জ সদরে। তিনি আরও জানান, হাসপাতালে ডাক্তার সংকট আগে থেকেই। এটা সবার জানা। এই সংকট নিয়েই সাধ্যমতো সেবা  দেয়া হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে হাসপাতাল ভবনের। জরাজীর্ণ এই ভবনে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করা ঝুঁকিপূর্ণ ও কষ্টকর।