মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে বিয়ানীবাজার উপজেলার শেওলা ইউনিয়নের বালিঙ্গা গ্রামের নিজের বসতঘরে বসে টেলিভিশন দেখছিলো স্কুল পড়ুয়া তরুণী নাজনিন আক্তার। বাড়ির সকলের অগোচরে সেই ঘরে ঢুকে পিছন থেকে হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে দা দিয়ে গলায় কোপ দিয়ে তরুণীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে নাজিম উদ্দিন পাশা। খুন করার পর থেকেই পালিয়ে যায় সে।

এরপর অভিযুক্ত যুবক নাজিম উদ্দিন পাশাকে গ্রেপ্তার করতে আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায় থানা পুলিশ। বিভিন্ন সড়কে বসানো হয় পুলিশের তল্লাশি চৌকি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাশার ছবি শেয়ার করে ঘোষণা করা হয় পুরষ্কার।

অবশেষে হত্যাকাণ্ডের পর টানা ৯ ঘন্টা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানোর পাশাকে আটক করতে সমর্থ হয় পুলিশ। স্থানীয়দের সহযোগিতায় মঙ্গলবার সন্ধায় সাড়ে ৭টার দিকে কুড়ারবাজার ইউনিয়নের আঙ্গারজুর এলাকার কুশিয়ারা নদীর তীর থেকে নাজিম উদ্দিন পাশাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।

জকিগঞ্জ-বিয়ানীবাজার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় জানান, নিহত তরুণীর মরদেহ মঙ্গলবার দুপুরে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘাতক নাজিম উদ্দিন পাশা হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে। তিনি জানান, বুধবার সকালে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।

থানা পুলিশ ও স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, শেওলা ইউনিয়নের বালিঙ্গা গ্রামের সামসুল হক চৌধুরী দুই ছেলে সন্তানের পিতা। নিহত তরুণীকে শিশুকাল থেকে দত্তক এনে নিজের মেয়ে হিসেবে লালন-পালন করছিলেন তিনি। সম্প্রতি বিয়ের কথাবার্তা চলছিলো স্কুল পড়ুয়া তরুণী নাজনিন আক্তারের। বুধবার বরপক্ষের লোকজন তাকে দেখতে আসার কথা রয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক হলে বসবেন বিয়ের পিঁড়িতে। কিন্তু তা আর হলো না। কিন্তু আর আগেই প্রতিবেশি যুবক নাজিম উদ্দিন পাশার দায়ের কোপে নৃশংসভাবে খুন হয়ে চিরতরে নিভে গেলো তরুণী নাজনিনের জীবন প্রদীপ।

জানা গেছে, ওই কিশোরীকে একতরফাভাবে ভালোবাসতো ঘাতক নাজিম উদ্দিন পাশা। সর্বশেষ প্রেম নিবেদন ও প্রত্যাখ্যান হওয়ায় ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে এমন নৃশ্যংস ঘটনা ঘটিয়েছে ঘাতক নাজিম উদ্দিন পাশা।  দুই বছর পূর্বেও নাজমিনকে উত্ত্যক্ত করতো। এ বিষয়টি পারিবারিকভাবে নিষ্পতি হয়েছিলো। মঙ্গলবার সকালে নাজিমকে গৃহস্তালি কাজ করতে দিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে সামসুল হক চৌধুরী নিজেদের নতুন বাড়ি দেখতে যান। বাড়ি একা পেয়ে নাজিম ঘরে ভেতর টিভি দেখতে থাকা নাজমিনের ঘাড়ে একাধিক কুপ দেয়। এতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু ঘটে।

এদিকে, অভিযুক্ত নাজিম উদ্দিন পাশার গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে থানায় ছুটে আসেন নিহত তরুণীর বড়ভাই রেদওয়ান। তিনি ঘাতক নাজিম উদ্দিন পাশার সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দাবি জানান। বালিঙ্গা গ্রামে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন শেওলা ইউপি চেয়ারম্যান জহুর উদ্দিন। তিনিও চান খুনি নাজিম উদ্দিন পাশার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।

উল্লেখ্য, ঘাতক নাজিম উদ্দিন পাশার বাড়ি মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার নিজ বাহাদুরপুর এলাকায় হলেও সে পরিবারের সাথে দীর্ঘদিন ধরে বালিঙ্গায় তার নানা বাড়িতে বসবাস করছিল। তার পিতার নাম মৃত আব্দুল খালিক।

বিয়ের পিঁড়িতে বসা হলো না বিয়ানীবাজারের তরুণীর!