যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি কমিউনিটির অত্যন্ত পরিচিত মুখ বিয়ানীবাজারের সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা আল্লামা মোস্তফা আর নেই (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)। রোববার বাংলাদেশ সময় সকাল ১১টার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডেট্রয়েট সিটির বাসার দরজা ভেঙ্গে তার লাশ উদ্ধার করেছে মিশিগান পুলিশ। এদিকে, কমিউনিটির অত্যন্ত পরিচিতমুখ আল্লামা মোস্তফার মৃত্যুতে কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

জানা গেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা আল্লামা মোস্তফা যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডেট্রয়েট সিটির বাসিন্দা। তিনি সেখানকার একটি বাসায় একা বসবাস করতেন। গত দুই-তিন ধরে তাকে মসজিদ কিংবা বাইরে বের হতে না দেখে স্থানীয় প্রবাসীরা তাঁর খোঁজ করেন। পরে তার বাসা ভেতর থেকে লক করা দেখে পুলিশকে খবর দেয়া হয় এবং পুলিশ এসে বাসার দরজা ভেঙ্গে ভেতর থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। মরহুমের জানাজার নামাজ যুক্তরাষ্ট্র সময় রোববার সন্ধ্যা ৭টায় মিশিগান আল নূর মসজিদ প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হবে।

উল্লেখ্য, আল্লামা মোস্তফার দেশের বাড়ি বিয়ানীবাজার উপজেলার কুড়ারবাজার ইউনিয়নের দেউলগ্রামে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথমে সাংবাদিকতায় ডিপ্লোমা, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় এম.এ ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৬৪ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন , ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১১ দফা আনেদালন এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতেকটি আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর একান্ত প্রিয় মানুষ ছিলেন। তিনি ১৯৬৪ সাল থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একনিষ্ট সহচর, ফটোগ্রাফার এবং পরবর্তীতে স্বাধীনতাত্তোর বঙ্গবন্ধুর প্রেস সেক্রেটারি ছিলেন।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধের সর্বাধিনাক এমএজি ওসমানীর জনসংযোগ অফিসার ও প্রেস সেক্রেটারি (মেজর পদমর্দা সম্পন্ন ) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন জয়বাংলা পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর তিনি জেনারেল এমএ জি ওসমানীর সাথে সিলেটে পাকিস্তানী বাহিনী আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে যোগদানে যাওয়ার সময় সিলেটের আকাশে হেলিকপ্টারে মোস্তফা আল্লামা গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। সদালাপী, অকুতোভয় সাহসী মোস্তফা আল্লামা মুক্তিযুদ্ধের পুর্বে  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জনসংযোগ ও প্রচার সচিব এবং সাধীনতার পরে বিশেষ সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । ১৯৮৫ সালে জাতিসংঘের উদ্যেগে ইংল্যান্ডে অনুষ্টিত বিশ্ব যুব কনফারেন্সে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসাবে ডেপুটি লিডার ছিলেন। তিনি সরকাররি বেসরকারিভাবে বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশ সফর করেন।

আল্লামা মোস্তফা একজন ক্রীড়ানুরাগী ব্যক্তি ছিলেন। ঢাকা আবাহনী স্পোটিং ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সবাপতি হিসেবে ৪ বছর দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকা ইনডোর স্টেডিয়ামে মোস্তফা আল্লামা ফুটবল টুর্নামেন্ট বহুল পরিচিত ছিলো। গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিনে তিনি মোস্তফা আল্লামা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করেন। যা দীর্ঘদিন সুনামের সাথে চলছিলো। তিনি বর্তমানে স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্টে বসবাস করতেছিলেন। ১৯৯৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে তিনি ওসমানি স্মৃতিপরিষদ গঠন করেন।