যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী বিয়ানীবাজারের ক্রৃতি সন্তান, এবি মিডিয়া গ্রুপের পরিচালক কামাল আহমদকে নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বাংলা অনুবাদ ‘বিয়ানীবাজার নিউজ২৪‘ এর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন –ব্যাংকুয়েট সার্ভার থেকে কমিউনিটি লিডার: চলে গেলেন পরপোকারি কামাল আহমেদ’

সব বিদায় এক রকম হয়না। কিছু বিদায় শুধু পরিবার আর আত্মীয়-স্বজন নয়, চেনা গন্ডিকেও ছাড়িয়ে যায়। তেমনি এক প্রিয়মুখ, প্রবাসজনদের প্রিয়জন কামাল আহমেদ। করোনার এই মহামারিতে চুপিসারে চলে গেলেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৯।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে প্রবাসীদের কাছে কামাল আহমেদ পরপোকারি হিসেবে পরিচিত। প্রবাসী কমিউনিটির এই প্রিয়জনকে একটি প্রতিবেদন ছাপিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।

প্রতিবেদনের শুরুটা এরকম, “যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশের সুখে-দুঃখে যিনি পাশে দাঁড়াতেন সেই কামাল আহমেদ, ৬৯, মৃত্যুবরণ করেছেন। জাতিসংঘের পাশেই একটি ব্যাংকুয়েট সার্ভার হিসেবে কাজ শুরু করলেও যোগ্যতাবলে বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউইয়র্কের লিডারে পরিণত হন।”

শুধু নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন না কামাল আহমেদ। বরং নিজ মাতৃভূমি বাংলাদেশ থেকে যারাই নিউইয়র্ক সিটিতে এসেছেন তাদের স্থায়ী হতে সকল রকমের সহযোগিতা করতেন তিনি।

কামাল আহমদের মানবিক গুণের তারিফ করে প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, “যখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয় তখন যাদের নিজেদের স্বজনদের কবরে সমাহিত করার মতো অবস্থা ছিলোনা কামাল আহমেদ এগিয়ে এসে তাদেরকে কবরে দাফন করতে সহায়তা দিয়েছেন।”

জাতিসংঘের পার্শ্ববর্তী মিলেনিয়াম হিলটন হোটেলে খাবার পরিবেশকের দায়িত্ব পালন করে কয়েক দশক পার করেছেন কামাল আহমেদ। কাজের সুবাধে কার সঙ্গে দেখা হয়নি তার? বিশ্বের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ থেকে শুরু করে নামকরা কূটনীতিক, নানান দেশের প্রেসিডেন্টদের দেখার সুযোগ পেয়েছেন তিনি।

১৯৭৭ সালে ভাগ্যের খুঁজে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান কামাল আহমেদ।

প্রবাসের মাটিতে দেশের মানুষের কাছে তার জনপ্রিয়তা ছিল ঈর্ষণীয়। তারি প্রমাণ হলো বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউইয়র্কে দুইবার লিডার হিসেবে নির্বাচিত হওয়া। সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা ২৮,০০০।

বাংলাদেশ থেকে যারা প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে আসতেন আর চাকরি কিংবা বাসস্থানের জন্য দুশ্চিন্তায় পড়ে যেতেন। অপরিচিত আর সম্পূর্ণ ভিন্ন রকমের শহর যারা কি করবেন ভেবে পেতেন না তাদেরকে একদম আপন করে কাছে টেনে নিতেন কামাল আহমেদ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, “সম্প্রতি সময়ে যারা করোনা যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন তাদের বিদায় বেলাতেও পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন কামাল। করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন অথচ কবরে দাফন করার মতো আর্থিক অবস্থা নেই এমন অনেক প্রবাসীকেই নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডে এবংনিউজার্সিতে সোসাইটির ক্রয়কৃত জায়গায় দাফন করার সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি।”

কুইনস অঙ্গরাজ্যের এলমার্স্ট হাসপাতালে গত ৫ এপ্রিল ইন্তেকাল করেন কামাল আহমেদ। করোনা উপসর্গে আক্রান্ত হয়েই তিনি মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন তার কন্যা রোমানা আহমেদ।

কামাল আহমেদ ১৯৫১ সালে ১ জানুয়ারি সিলেটের বিয়ানীবাজারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার হাত ধরে ভাগ্যের খুঁজে যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগে পড়াশোনা করেছেন কৃষি বিষয় নিয়ে।

হিলটনে প্রথম কাজের সুযোগ পান বাস সহকারি হিসেবে, তারপর খাবার পরিবেশকের পেশাকে বেছে নেন। ১৯৮২ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পান। কিছুদিন কামাল আহমেদ অফিস ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কুইনসের আইনজীবি এইচ ব্রুস ফিসচারের অধীনে। তখনি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি সংগঠনগুলোর সঙ্গে তার যোগসূত্র তৈরি হয়। প্রথমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারি বিয়ানীবাজারবাসীদের সংগঠনে নেতৃত্ব দেন, পরে জালালাবাদ রিজিওন, সর্বশেষ বাংলাদেশ সোসাইটিতে।

সোসাইটির সদস্য আজিমুর রহমান যিনি কামাল আহমেদকে ভালো করে চিনেন-জানেন তিনি বলেন, “সোসাইটিতে বাংলা ভাষা আর সংস্কৃতির প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন কামাল আহমেদ। প্রবাসীদের শিশুরা যেন যুক্তরাষ্ট্রে থেকেও বাংলাদেশের ভাষা এবং সংস্কৃতি ভুল না যায় সেজন্য তিনি এ পদক্ষেপ নেন।”

কামাল আহমদকে দাফন করা হয়েছে নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই এলাকায়। তবে কবরের জায়গাটুকুর মালিকানা বাংলাদেশ সোসাইটির হলেও সেটা আবার ক্রয় করেছেন তার পরিবার।

সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল সিদ্দিকী কবরের জায়গা কেনার কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, “(কামাল আহমদ) মারা যাবার আগে বলেছিলেন, আমি যখন মারা যাবো তখন সোসাইটি থেকে আমি কোনো ধরনের সুবিধা নিতে চাইনা। কারণ এগুলো অসহায়দের প্রাপ্য।”

‘এবি টিভি’র সর্বশেষ প্রতিবেদন-