নৌকার পালে হাওয়া থাকলেও মোবাইলের ‘ফোর জি নেটওয়ার্কৎ স্বচল থাকায় পৌরসভা জুড়ে জোর গুঞ্জন- নৌকার সাথে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মোবাইল ফোনের। তবে ধানের শীষ দৌড়ে থাকলেও অপর দুই প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছেন। শেষ পর্যন্ত ভোটাররা কোন প্রতীক কিংবা কোন মেয়র প্রার্থীকে বেঁচে নিচ্ছেন তার উপর নির্ভও করবে জয়-পরাজয়।

বড়লেখায় পৌরসভা নির্বাচন শুরু হতে আর বাকি মাত্র কয়েক ঘন্টা। সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) সকাল ৮ টা থেকে বিরতী ছাড়া বিকেল ৪টায় পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে। গত পাঁচ বছরের হিসেব নিকেশ মিলিয়ে পৌরবাসী ব্যাটলের মাধ্যমে তাদের সিদ্ধান্ত জানাবেন। পুরাতন না নতুন তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে ২৮ ডিসেম্বরের রাতে।

পৌরবাসীর মন জয় করতে অভিরাম প্রচারণা শেষ হয়েছে গত শনিবার মধ্যরাতে। শেষ সময়ে তাই মেয়র প্রার্থীরা প্রচারণায় মহাব্যস্ত সময় পার করেছেন। প্রচারণায় পৌরসভার উন্নয়নে নিজেদের নানা কর্মপরিকল্পনার কথা তুলে ধরে সবার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন মেয়র প্রার্থীরা। পাশাপাশি দিয়েছেন উন্নয়ন প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি। মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি বসে থাকেননি ৯টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। তারাও শেষ সময়ের জোর প্রচারণা চালিয়েছেন।

গত ১১ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাচন ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রতীক বরাদ্দ করেন। প্রতীক বরাদ্দ পাবার পরপরই মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্রচারণায় নামেন। যদিও এর আগে থেকেই প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন তারা। সাহায্য-সহযোগিতার হাতও প্রসারিত করেছেন তারা।

নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল ইমাম মো: কামরান চৌধুরী (নৌকা), বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আনোয়ারুল ইসলাম (ধানের শীষ) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইদুল ইসলাম (মোবাইল ফোন)। এছাড়া ০৯টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৫ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।

সরেজমিনে পৌর এলাকার সবক’টি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভোটাররা দুই প্রার্থী নিয়ে বেশি আলোচনা করছেন। কেউ কেউ উয়ন্ননের স্বার্থে পরিবর্তন চাচ্ছেন। আবার উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে বর্তমান মেয়রের উপর আস্থা রাখতে চান। মেয়র পদে প্রধান দুই দলের প্রার্থীর সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নিয়ে আলোচনা করতে ভোটারদের আগ্রহ-ই বেশি। ভোটারদের অনেকেই, নতুন মুখ নির্বাচিত করেল এলাকার উন্নয়ন সাধিত হবে জানান। কেউ কেউ বর্তশান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার পক্ষে মতামত দেন।

তৃণমূল পর্যায়ে পর্যালোচনা দেখা গেছে- বড়লেখায় ত্রিমুখী লড়াই হলেও মূল লড়াই হবে দ্বিমুখী। আওয়ামী লীগের প্রার্থী কামরান চৌধুরীর সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইদুল ইসলামের মধ্যে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। শেষ পর্যন্ত ভোটাররা কোন প্রার্থীকে বেছে নেন- তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে সব কেন্দ্রের ফলাফলের আগ পর্যন্ত। তবে নির্বাচনের আগের দিন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর দিকে পাল্লা ভারি হচ্ছে।

পৌরসভার ভোট নিয়ে নবীন ভোটাদের মধ্যে উচ্ছ্বাস অন্যদের স্বাভাবিকভাবেই বেশি। নতুন ভোটার সাদিয়া ইসলাম বলেন, এবারই প্রথম ইভিএমে ভোট দিতে যাচ্ছি। এক অন্যরকম উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেও কিছুটা সাবধানি কাকে ভোট দেবেন এরকম প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে। যোগ্য প্রার্থীকেই ভোট দেবেন বলে নিজের উচ্ছ্বাস আড়াল করতে চান। আব্দুল হাসিম জানান, এখনো কিছুই নির্ধারণ করিনী। তবে ভোট দেয়ার আগে অনেক হিসেব নিকেষ করেই ভোট দেব।

আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল ইমাম মো: কামরান চৌধুরী জানান, সর্বত্র নৌকার গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কেননা বিগত পাঁচ বছরে পৌরসভার ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে আমার হাত ধরেই। যার সুফল পৌরবাসী ভোগ করছেন। এখনও অনেক উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে মানুষ আবার নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে আমাকে বিজয়ী করবে বলে আমি আশাবাদী।

বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। পৌরসভার অনেক সমস্যা এখনও বিদ্যমান। মানুষ উন্নয়নবঞ্চিত। তারা পরিবর্তন চান। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। আমি নির্বাচিত হলে বড়লেখাকে একটি মডেল পৌরসভা হিসেবে গড়ে তুলবো।

স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইদুল ইসলাম জানান, মোবাইলের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আমি প্রার্থী হওয়ায় সাধারণ মানুষ খুবই উচ্ছ্বসিত। তিনি অভিযোগ করেন, তার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। প্রচার প্রচারণায় বাঁধা সৃষ্টি করছে একটি মহল। নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে পৌরবাসী তাকেই নির্বাচিত করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, বড়লেখা পৌরসভায় এবারই প্রথম ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এর মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হবে। এ পৌরসভার ০৯টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ১৫ হাজার ৪৪৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭ হাজার ৫২৩ জন ও মহিলা ভোটার ৭ হাজার ৯২০ জন। ০৯টি সাধারণ ও ০৩টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ভোট গ্রহণের জন্যে ১০ টি ভোটকেন্দ্র এবং ৪৩টি ভোটকক্ষ রয়েছে।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাদিকুর রহমান জানান, ইভিএম এর মাধ্যমে পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু করার জন্য সকল ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সোমবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে।

ইউপি নির্বাচন নিয়ে 'এবি টিভি'র বিশেষ আয়োজন ‘ভোটের হাওয়া’।। ৮ম পর্বে দুবাগ ইউনিয়ন