মৌলভীবাজার জেলার সীমান্তবর্তী বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত মৌলভীবাজার-১ আসনটি টানা ১০ বছর ধরে আওয়ামী লীগের দখলে। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে টানা তিনবার বিজয়ী হওয়ার টার্গেট নিয়ে মাঠে রয়েছেন তিন বারের এমপি বড়লেখা উপজেলা আ’লীগের সভাপতি হুইপ শাহাব উদ্দিন।

আগামী নির্বাচনে বড়লেখা উপজেলার ১০ ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা এবং জুড়ী উপজেলার ৬ ইউনিয়ন নিয়ে মৌলভীবাজার-১ আসনে তিনি আ’লীগের একক প্রার্থী।

এছাড়া গত ৪ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম আগামী নির্বাচনে দলের প্রার্থী হিসেবে শাহাব উদ্দিনকে পরিচয় করিয়ে দেন। এরই মধ্যে তিনি মাঠে গণসংযোগে নেমে পড়েছেন। এলাকার ১৯টি চা বাগানের ভোটাররাই আ’লীগের ভোটব্যাংক হিসেবে পরিচিত।

এদিকে নানামুখী রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপে থাকা বিএনপির অন্তত তিনজন নেতা নানা কৌশলে নির্বাচনী মাঠে তৎপর আছেন। এরা হচ্ছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এবাদুর রহমান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহআন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শরীফুল হক সাজু ও ঢাকাস্থ জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি, জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও জুড়ী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমদ মিঠু।

নির্বাচন সামনে রেখে ভোটের মাঠে তৎপর রয়েছেন জাতীয় পার্টির একাধিক নেতা। এরা হচ্ছেন বড়লেখা জাতীয় পার্টির কাতার প্রবাসী আহমেদ রিয়াজ ও জুড়ী উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম শামীম। ভোটের মাঠে সক্রিয় রয়েছেন নিবন্ধনহীন জামায়াত নেতা মাওলানা আমিনুল ইসলামও। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তার মাঠে নামার আগ্রহ রয়েছে।
সার্বিক বিবেচনায় মৌলভীবাজার-১ আসনে আ’লীগ ও বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী দু’জন। তারা হলেন-আ’লীগের হুইপ শাহাব উদ্দিন এবং বিএনপির সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা প্রবীণ রাজনীতিক এবাদুর রহমান চৌধুরী।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জাতীয় পার্টির আহমদ রিয়াজের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এমপি হন আ’লীগের শাহাব উদ্দিন। পরে সরকার তাকে জাতীয় সংসদের হুইপ করে। ১৯৯৬, ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে এমপি হন শাহাব উদ্দিন।
২০০৮ সালে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে আ’লীগের শাহাব উদ্দিন ১ লাখ ৬ হাজার ৫৭০ ভোট পেয়ে এমপি হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এবাদুর রহমান চৌধুরী ধানের শীষ নিয়ে পান ৬৯ হাজার ৬১৮ ভোট।

জানতে চাইলে শাহাব উদ্দিন জানান, এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। দুটি কলেজ ও দুটি হাইস্কুল সরকারি করেছি। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার কাজ চলছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নয়নের কারণে জনগণ আগামী নির্বাচনে ফের বিজয়ী করবেন। তিনি জানান, আমার এলাকা ছাড়াও কুলাউড়া ও বিয়ানীবাজারের ভোটারদের দীর্ঘদিনের দাবি কুলাউড়া-শাহবাজপুর পরিত্যক্ত রেললাইনের নির্মাণ কাজও শুরু করেছি।

বড়লেখা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌর মেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী জানান, এ আসনে দলের একক প্রার্থী শাহাব উদ্দিন। স্বাস্থ্যমন্ত্রীও এলাকা সফর করে তাকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন প্রকাশ্যে। আগামী নির্বাচনে শাহাব উদ্দিনকে জয়ী করতে আওয়ামী পরিবার ঐক্যবদ্ধ।

আ’লীগের দুর্গে প্রথম আঘাত হানে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি। নব্বইয়ের পট পরিবর্তনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে লাঙ্গল নিয়ে নির্বাচন করে বিজয়ী হন অ্যাডভোকেট এবাদুর রহমান চৌধুরী। পরে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে ধানের শীর্ষ নিয়ে বিজয়ী হওয়ার পর তাকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়।

জানতে চাইলে এবাদুর রহমান বলেন, আগামী নির্বাচনে আমিই বিএনপির প্রার্থী। তবে অসুস্থতাজনিত কারণে এলাকায় তার যাতায়াত কম হলেও আগামী নির্বাচনে তিনি বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী।

তিনি ছাড়াও নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি ও জুড়ী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমদ মিঠু। তিনি বলেন, বিএনপির হাইকমান্ডের নির্দেশে কয়েক বছর ধরে তৃণমূলে দলীয় কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছি।

এছাড়া কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহআন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও কাতার বিএনপির সদস্য সচিব শরীফুল হক সাজু নির্বাচনী মাঠে তৎপর রয়েছেন। দলকে সুসংগঠিত করার কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় নেতাকর্মীদের পাশে আছেন। করছেন সাহায্য সহযোগিতা।

তিনি বলেন, এ আসনে একাধিকবার এমপি নির্বাচিত হন সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবাদুর রহমান। তিনি এখন অসুস্থ। আসন্ন নির্বাচনে আমি ধানের শীষ নিয়ে লড়াই করতে চাই। এরপরও দল যদি অন্য কাউকে মনোনয়ন দেয়, আমি তার পক্ষে কাজ করব। আমি চাই প্রার্থী বাছাইয়ে যেন তৃণমূলের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া হয়। টাকার জোরে কেউ প্রার্থী হলে দলের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী হিসেবে আমি কষ্ট পাবে। দলে ইমেজ সংকট দেখা দেবে। বড়লেখা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল হাফিজ জানান, দলীয় কর্মকাণ্ড চালিয়ে আলোচনায় এখন নাসির উদ্দিন আহমদ মিঠু।

জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী আহমেদ রিয়াজ জানান, আমি মৌলভীবাজার-১ ও মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে মনোনয়ন চাইব। দুই আসনেই গণসংযোগ করছি। জাতীয় পার্টির আরেক প্রার্থী অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম শামীম জানান, আগামী নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে অংশ নিতে চাই। দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে কাজ করে যাচ্ছি।

দলীয় ব্যানারে নির্বাচন করার যোগ্যতা না থাকলেও জামায়াত শিবির একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নানা কৌশল অবলম্বন করছে। জামায়াত নেতা মাওলানা আমিনুল ইসলামকে স্বতন্ত্র প্রার্থী করতে তৃণমূল জামায়াত তৎপর রয়েছে।

সূত্র- দৈনিক যুগান্তর।