মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের ছোটলেখা-মোহাম্মদনগরের ভাঙাচোরা রাস্তা স্বেচ্ছাশ্রমে সংস্কার করলেন এলাকাবাসী। পাকা রাস্তার ৪ কিলোমিটার এর মাঝে অন্তত ১ কিলোমিটার রাস্তা দীর্ঘদিন ধরেই ছিল ভাঙাচোরা। ভাঙাচোরা অংশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে ভাঙা অংশ গুলোয় কাঁদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। এতে প্রায়ই ঘটছিল ছোট বড় দুর্ঘটনা। দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী বাসিন্দারা।

এদিকে, সরকারিভাবে দ্রুত কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা কম হওয়ায় রাস্তা সংস্কারের উদ্যোগ নেন এলাকার কয়েকজন যুবক। তাদের এ উদ্যোগে নিজেদের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এলেন স্থানীয় আরো যুবকরা। সবাই মিলে নেমে পড়লেন রাস্তা সংস্কারের কাজে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই রাস্তাটি দিয়ে সীমান্তবর্তী বোবারথল এলাকার ১০টিসহ প্রায় ১৫টি গ্রামের মানুষ উপজেলা সদরে যাতায়াত করেন। তাঁদের মধ্যে বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, সবজি ব্যবসায়ীও রয়েছেন। এ রাস্তার গ্রামতলা উচ্চ বিদ্যালয়, গ্রামতলা শাহী ঈদগাহ, গ্রামতলা পাঞ্জেখানা, মধ্যগ্রামতলা জামে মসজিদ, মধ্যগ্রামতলা বাজার, খনিয়া টিলা রাস্তার মুখ, লন্ডনী বাড়ির সামনাসহ অন্তত ১২টি স্পটের অবস্থা খুবই খারাপ। ওই স্পটগুলোর অবস্থা খারাপ থাকায় কয়েক দিন ধরে গ্রামের যুবকরা স্বেচ্ছাশ্রমে সংস্কারকাজ শুরু করেন।

গত সোমবার গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় যুবক আহমেদ নোমানের নেতৃত্বে কয়েকজন রাস্তার গর্তে ইট ও বালু ফেলছেন। আহমেদ নোমানের তদারকিতে রাস্তা সংস্কার কাজে ব্যস্ত আছেন স্থানীয় যুবক সোহেল, বলাই, আরাফাত আহমদ শিপলু, রিফাত আহমদ, স্বপন আহমদ, তারেক আহমদ, হাফিজুর রহমান, শিপন ও জুয়েল আহমদ।

কথা হয় আহমেদ নোমানের সাথে। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা বেহাল। বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গর্তে বৃষ্টির পানি জমে প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটে। স্কুলের শিক্ষার্থীদের বেশি কষ্ট হয়। অনেকেই আহত হয়েছেন গর্তে পড়ে। আমাদের এ কাজে আর্থিকভাবে কামরুল ইসলাম, জিয়াউল হক রাসেল, তারেক হাসনাত, আব্দুল্লাহ এবং কুয়েত প্রবাসী এক ভাই সহযোগিতা করেন। এছাড়া রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী গাড়ির চালকরাও পরবর্তীতে সহায়তা করেছেন। ১২টি স্পটে গর্তগুলো প্রাথমিকভাবে ভরাট করতে ৩ হাজার ইট ও প্রায় ১০০ ফুট বালি লেগেছে। এখন কিছু দুর্ভোগ কমেছে। তবে এর স্থায়ী সমাধান করা জরুরী।’

সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক ফয়ছল আহমদ ও সাবুল আহমদ বলেন, ‘রাস্তার যে বেহাল দশা। কয়েকবার যাত্রীসহ গাড়ি উল্টেছে। অল্পেতে রক্ষা পেয়েছি। এলাকার যুবকরা গর্ত ভরাট করার উদ্যোগ নিলে আমরাও আমাদের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা করেছি।’

স্থানীয় দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘রাস্তাটির পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা না থাকায় সড়ক ভাঙছে। কিছু জায়গায় ইচ্ছাকৃতভাবে বাড়ির বাসিন্দারা রাস্তা নষ্ট করছেন। আর দুর্ভোগে পড়ছেন বাসিন্দারা। নিজ উদ্যোগে কয়েকবার বাসিন্দাদের কয়েকবার বলেছি। যুবকদের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। রাস্তাটি ভালো রাখার জন্য সবার সহযোগিতা দরকার।’

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী বিদ্যুৎ ভূষণ পাল বলেন, ‘যুবকদের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। আমার বিভাগের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই। রাস্তাটির কাজের জন্য লিস্ট এপ্রুভ হয়েছে। টেন্ডার আহবান করা হবে শীঘ্রই। কাজ শুরু করতে কয়েক মাস দেরি হতে পারে। তবে ওই রাস্তাটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার একমাত্র কারণ বাড়ির পানি রাস্তায় জমে থাকা। অনেকেই ইচ্ছাকৃতভাবে পানি নিষ্কাসন করেন না। পাকা রাস্তায় পানি দীর্ঘদিন জমে থাকলে পিচ ভাঙে।’