মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার ১ নম্বর বর্ণি ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বরুদল নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে মনাদী-মনারাই পাকা রাস্তা। এ রাস্তা দিয়ে ২ নম্বর ওয়ার্ডের মনাদী, মনারাই, রংপুর, পাকশাইল, পূর্ব মনারাইসহ অন্তত ১০টি গ্রামের কয়েক হাজার লোক চলাচল করে। গত বর্ষায় মনাদী-মনারাই পাকা রাস্তার অন্তত দেড়শ’ মিটার নদীতে ভেঙে পড়েছে। এতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। নদীভাঙনের ফলে বর্তমানে হুমকিতে রয়েছে আশপাশের অন্তত ৫০টি বসতভিটা।

অপরদিকে ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী এলাকার মুদৎপুর গ্রাম, মিহারি-ফকিরবাজার সংযোগ রাস্তায়ও ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা বাঁশের বেড়া দিয়ে ভাঙন রোধের চেষ্টা করছে। অব্যাহত ভাঙনের ফলে ৪ নং ওয়ার্ডের মুদৎপুর ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব শিলকুরা গ্রামের নদীপাড়ের প্রায় ৮০টি বসতভিটা এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।

এদিকে প্রতি বছরের বর্ষায় আতঙ্কে থাকে নাদীপাড়ের বাসিন্দারা। গত দেড় দশকে নদীভাঙনে বসতভিটা হারিয়ে অন্তত ৫০ পরিবার অন্যত্র বাড়ি করেছে। নদীতে বিলীন হয়েছে মসজিদ, কবরস্থান। ভাঙন রোধে স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় দীর্ঘ দিন থেকে এ অবস্থা চলছে। ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। আনুমানিক দুই যুগ আগে বরুদল নদীতে ভাঙন দেখা দেয়। তখন নদীটি বর্তমান অবস্থান থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার পূর্বে ছিল। ভাঙন রোধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তখন থেকেই গ্রামের বসতভিটা, মসজিদ ও রাস্তা নদীগর্ভে তলিয়ে যায়। অব্যাহত ভাঙনে অর্ধশতাধিক বসতঘরও চলে যায় নদীগর্ভে। ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পুরো গ্রাম নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সরেজমিন মনাদী, মনরাই, মুদৎপুর গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, নদীভাঙনে রাস্তা সরু হয়ে গেছে। ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। রাস্তা ভেঙে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া কিছু বসতঘরের উঠোন ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। যে কোনো মুহূর্তে ঘরও চলে যেতে পারে নদীতে।

স্থানীয়রা জানিয়েছে, এ বছর কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে কাজ করা হয়েছিল। কিন্তু এ কাজে উপকারের চেয়ে ক্ষতিই হয়েছে বেশি। নতুন করে ভূমি ভেঙেছে। ভেঙেছে রাস্তা। স্থানীয় বাসিন্দা মুহাম্মদ কামাল উদ্দিন ও বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘যেভাবে ভাঙন চলছে; দ্রুত রোধ করা না হলে গ্রামের আরও অনেক বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রাস্তা ভাঙায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। নদীপাড়ের বাসিন্দারা খুব কষ্টে আছে।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য সামাদ আহমদ বলেন, ‘মুদৎপুর গ্রাম, মিহারি-ফকিরবাজার সংযোগ সড়কেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। দীর্ঘ দিন থেকেই এ জায়গা ভাঙছে। বাড়িঘর ঝুঁকিপূর্ণ। মানুষ খুব কষ্টে আছে। বর্ণি ইউনিয়নের বাসিন্দা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মুহিত বলেন, ‘নদীপাড়ের রাস্তাটি আধা কিলোমিটার পূর্বে ছিল। ভাঙনের ফলে পশ্চিম দিকে সরেছে অনেক বছর হয়। অনেক পরিবার ভাঙনের ফলে জায়গা ছেড়েছে। বিভিন্নভাবে মানুষ ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছে। মনাদি গ্রামের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র ও মৎস্যজীবী। তাদের বাড়িঘর ভাঙলে আর মেরামত করার সামর্থ্য নেই। দ্রুত এ ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।’

বর্ণি ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘ভাঙনের ফলে রাস্তার অবস্থা বেহাল। বাড়িঘর ঝুঁকিতে আছে। গত দুই যুগ থেকে ৩টি ওয়ার্ডে ভাঙছে আর মানুষ অন্যত্র ঘরবাড়ি করছে। এখন যে অবস্থায় আছে; আরও ভাঙলে মানুষের যাওয়ার জায়গা থাকবে না। স্থায়ীভাবে এর সমাধান করা দরকার। নাদীপাড়ের আশপাশের অন্তত ১৫০ পরিবার ভাঙনের মুখে আছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জাতীয় সংসদের হুইপ শাহাব উদ্দিন সরেজমিন অবস্থা দেখে গেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজনও দেখে গেছেন। দ্রুত ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।’

এ ব্যাপারে পাউবোর মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, ‘এ বছর দুই জায়গায় কিছু কাজ হয়েছিল। ভাঙনের বিষয়টি স্থানীয়ভাবে জেনেছি। ভাঙন রোধের জন্য বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। শিগগিরই সরেজমিন ভাঙনস্থল পরিদর্শন করা হবে। স্থায়ীভাবে কাজ করতে হলে বড় বাজেট প্রয়োজন। এতে অন্তত দুই বছর সময় লাগতে পারে। নতুন করে যাতে না ভাঙে সে জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে প্রতিরক্ষা কাজ বাস্তবায়নে প্রাক্কলন প্রস্তুত করে বাজেট চাহিদা বোর্ডে পাঠানো হবে। বরাদ্দপ্রাপ্তি সাপেক্ষে কাজ বাস্তবায়ন করা হবে।’