বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের বনাখলাপুঞ্জির পানজুম দখলের পর ১০ লাখ টাকা চাঁদা করেছে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। জুম দখলের পর সেখানে তারা একটি ঘরও নির্মাণ করেছে। একসপ্তাহের মধ্যে তাদের দাবিকৃত টাকা না দিলে খাসিয়াদের জুমে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা।

গত শুক্রবার (২৮ মে) সকালে বনাখলাপুঞ্জির জুম দখলের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার ছয়দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও পানজুম দখলমুক্ত হয়নি। এতে ভয়ে জুমে প্রবেশ করতে পারছে না খাসিয়ারা। জুম থেকে পান তুলতে না পেরে তারা কষ্টে দিন পার করছেন। এই ঘটনায় গত রোববার (৩০ মে) পুঞ্জির নারী মান্ত্রী (পুঞ্জি প্রধান) নরা ধার ও ছোটলেখা বাগানের প্রধান টিলা করণিক মো. দেওয়ান মাসুদ থানায় পৃথকভাবে দুটি মামলা করেন।
এদিকে বনাখলাপুঞ্জি ছাড়াও ওই ইউনিয়নের ছোটলেখা বাগানের আওতাধীন আগারপুঞ্জি নামের আরেকটি পুঞ্জির খাসিয়াদের সহস্রাধিক পানগাছ কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

ধারণা করা হচ্ছে, গত শনিবার (২৯ মে) দিবাগত রাতের কোনো একসময় এই ঘটনাটি ঘটেছে। এই ঘটনায় গত সোমবার (৩১ মে) দুপুরে পুঞ্জির মান্ত্রী (পুঞ্জিপ্রধান) সুখমন আমসে বাদী হয়ে বড়লেখা থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

এসব ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আদিবাসী নেতারা। তারা দ্রুত জুম দখলমুক্ত করে খাসিয়াদের বুঝিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, তারা দখল হওয়া বনাখলাপুঞ্জির পানজুম দ্রুত উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি আগারপুঞ্জির খাসিয়াদের সহস্রাধিক পানগাছ কাটার ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বেরা করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

মামলার এজাহার, পুঞ্জির বাসিন্দা ও চা-বাগান কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের ছোটলেখা চা-বাগান কর্তৃপক্ষ চা চাষের জন্য ১ হাজার ৯৬৪ দশমিক ৫০ একর টিলাভূমি সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেয়। পরে তারা ২৭২ একর জমি খাসিয়াদের কাছে উপ-ইজারা দেয়। ২০০৭ সালে খাসিয়ারা ওই জমিতে বনাখলাপুঞ্জি নামে বসতি স্থাপন করে। এরপর সেখানে পান চাষ শুরু করেন।

পুঞ্জিতে বর্তমানে প্রায় ৩৬টি খাসিয়া পরিবারের দেড় শতাধিক সদস্য থাকে। প্রতিটি পরিবারের আলাদা পানের জুম আছে। গত ২৮ মে বোবারথল এলাকার আব্দুল বাছিত, পিচ্চি আমির, লেছই মিয়ার নেতৃত্বে ৪০-৫০ জনের একদল লোক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুঞ্জিতে ঢুকে তিনটি পানের জুমের দখল করে নেন। এ সময় তারা সেখানে একটি অস্থায়ী ঘরও নির্মাণ করে। তখন জুমে থাকা খাসিয়াদের তারা তাড়িয়ে দিয়ে বলে এক সপ্তাহের মধ্যে তাদেরকে ১০ লাখ চাঁদা না দিলে তারা জুমে প্রবেশ করতে পারবে না। এই ঘটনায় গত ৩০ মে পুঞ্জির নারী মান্ত্রী (পুঞ্জি প্রধান) নরা ধার ও ছোটলেখা বাগানের প্রধান টিলা করণিক মো. দেওয়ান মাসুদ রোববার থানায় পৃথকভাবে দুটি মামলা করেন।

সরেজমিনে বনাখলাপুঞ্জিতে গিয়ে কথা হয় সেখানকার বাসিন্দা আমস ও সেন্দাই পঃপ্লেত বলেন, ‘আমার জুমের ৬ একর জায়গা দখল করে ঘর তৈরি করেছে। ভয়ে যাইতে পারছি না। ছয়দিন হয়ে গেল। কখন পুঞ্জি উদ্ধার হবে। তাও জানি না। একটা অনিশ্চয়তায় আছি।’

বনাখলাপুঞ্জির নারী মান্ত্রী (পুঞ্জি প্রধান) নরা ধার বলেন, আমরা নিরীহ মানুষ। পানচাষই আমাদের একমাত্র পেশা। পানচাষ করে আমরা সংসার চালাই। স্থানীয় কয়েকজন লোক আমাদের জমি দখল করে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে। তারা আমাদের হুমকিÑদমকি দিয়ে বলেছে টাকা না দিলে তারা আমাদের জুমে প্রবেশ করতে দেবে না। আমরা ভয়ে আছি। জুমে যেতে পারছি না। জুম উদ্ধার না হলে আমাদের জীবিকা নির্বাহ করবো কীভাবে। আমরা খাবো কী?

এ ব্যাপারে বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার বুধবার (২ জুন) বলেন, দখলদারদের অন্যত্র সরিয়ে নিতে স্থানীয় চেয়ারম্যান ২৪ ঘন্টা সময় নিয়েছিলেন। তিনি সরাতে পারেননি। এখন আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের উচ্ছেদ করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। খাসিয়াদের সর্বত্মক আইনি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

আগারপুঞ্জি পুঞ্জির পানগাছ কাটার ঘটনায় জড়িতদের কাউকে শনাক্ত করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। জড়িতদের খুঁজে বেরা করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

বৈরাগীবাজার জেটিঘাটে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি দুই দশক ধরে, দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সাধারণ মানুষ