বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের বাহারপুর গ্রামের প্রবাস ফেরত বদরুল ইসলাম কবুতর পালন করে নিজের ভাগ্য বদল করেছেন। ইতোমধ্যে লোকজন তার দেশি-বিদেশি প্রজাতির কবুতর পালনের খবর শুনে এক নজর তা দেখতে ছুটে যাচ্ছেন। শত শত কবুতরের বাক-বাকুম ডাকে এবং রং-বেরঙের কবুতর দেখে আগতরা মুগ্ধ হচ্ছেন।

বড়লেখা উপজেলায় এ ধরনের বিভিন্ন প্রজাতির কবুতর খামার করতে আর কাউকে দেখা যায় না। প্রায় দুই বছর প্রবাসে থাকার পর দেশে এসে হতাশার মধ্যে ছিলেন বদরুল ইসলাম। হঠাৎ তার মাথায় এলো পশুপাখি খামার করার। যেই ভাবা, সেই কাজ। লেগে গেলেন কবুতর খামার করার কাজে।

বদরুল ইসলাম নিত্য-নতুন কবুতর সংগ্রহ করার জন্য গ্রাম থেকে গ্রামে ও শহরের বিভিন্ন জায়গায় ছুটে যান। নতুন কবুতর এবং যেসব কবুতর দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, সেসব কবুতর সংগ্রহ করা হচ্ছে তার নেশা।

বদরুল ইসলামের বাড়িতে গেলে তিনি বলেন, অনেক সখ করে কবুতর পালন শুরু করেছেন। ২০১৭ সালের মাচর্ মাসে মাত্র দুই হাজার টাকা দিয়ে একজোড়া কবুতরের বাচ্চা দিয়ে প্রথমে যাত্রা শুরু করেন। বতর্মানে এর সংখ্যা বাড়তে বাড়তে ২০০ কবুতরে এসে দাঁড়িয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বদরুলের ঘরের বারান্দায় ও উঠানে কয়েকটি লোহার খাঁচার মধ্যে কবুতর রয়েছে। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো কবুতর ডিম পাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাকার্র পেন দিয়ে তারিখ লিখে দেন এবং ডিম পাড়ার ২০ দিনের মধ্যে বাচ্চা বের হয় কিনা, সেই দিকে লক্ষ রাখেন। তার সংগ্রহে লাহরী সিরাজি, বাগদাদী হুমা, চুইনা, আফ্রিকান আউল, টামলাব, ক্যাপসিন, জ্যাক, ডাবমন্ড, গিরেবাজ, বাবুরাজ, লুটন, ময়ূরী, কুটারবল, কোরিয়া হুমার, চায়না আউল, কিং, সিল্কি, ভিয়ানাসটর্ পিজ, আউবেল এবং বিউটি হুমারসহ প্রায় ৩০ প্রজাতির কবুতর রয়েছে। বতর্মানে এসব কবুতরের বাজার মূল্য প্রচার পাচ লাখ টাকার মতো। এ ছাড়া প্রতিজোড়া কবুতরের মূল্য ১৫০০-৩০০০০ হাজার টাকা পযর্ন্ত।

তিনি বলেন, এসব বিভিন্ন প্রজাতির কবুতর থেকে মাসে গড়ে ৭০ জোড়া বাচ্চা পাওয়া যায়। যার বতর্মান বাজার মূল্য ৪০-৪৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া প্রতিদিন কবুতরকে গম, খেসারি, শষ্য, খাবার দিতে হয়। ওষুধ ও বিভিন্ন বাবদ খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ২৫-৩০ হাজার টাকার মতো প্রতি মাসে লাভ হয় তার। হুমা প্রজাতির কবুতর ও বতর্মানে দেশ থেকে বিলুপ্তি হয়ে গেছে অনেকটা।

তিনি আরও বলেন, কবুতরের বড় একটি খামার করার ইচ্ছা ছিল এবং তিনি সফলও হয়েছেন। বতর্মানে এই কবুতরের ব্যবসায় মনোযোগী হলেও ভবিষতে আরও বড় ধরনের বাণিজ্যিকভাবে পশুপাখি খামার করার পরিকল্পনা রয়েছে তার।

এদিকে চলতি বছরে উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত উন্নয়ন মেলায় বদরুল ইসলাম অংশ নিয়ে সেরা স্টল বিজয়ী হয়েছেন। তিনি যুব উন্নয়ন থেকেও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং সেখান থেকে তিনি আথির্কভাবে সাহায্যেরও আশ্বাস পেয়েছেন। তবে তিনি এখন কারও সাহায্য নিতে চান না, শুধু ক্রেতা-সাধারণ ক্রয় করলেই হবে। আগামীতে যখন বড় ধরনের পশুপাখি খামার করবেন তখন বিশাল অংকের টাকার প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।