বড়লেখার দক্ষিণভাগ ইউপির কাশেমনগর গ্রামে ৩৩ হাজার ভল্টের লাইনের অরক্ষিত ২০০ কেভির দুইটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ও অবৈধ কাঠ ও বাঁশের খুটায় টানানো বিদ্যুৎলাইন যেন মৃত্যুফাঁদ। ইতিপূর্বে ট্রান্সফরমারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শিশুসহ একাধিক গবাদিপশু মারা গেলেও টনক নড়েনি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) স্থানীয় উপ-সহকারী প্রকৌশলী আনছারুল কবির শামীমের।

সরেজমিনে জানা গেছে, পিডিবি’র আসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উৎকোচ নিয়ে প্রায় ১০-১২ বছর পূর্বে বিদ্যুৎ সংযোগের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে অননুমোদিত কাঠের ও বাঁশের খুটি, সুপারী গাছের এমনকি রাস্তার পাশের জীবন্ত সরু গাছের সাথে লাইন টেনে উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউপির ৭নং কাশেমনগর, ৮নং কাশেমনগর, ১০নং কাশেমনগর, গুচ্ছগ্রাম, পুটাডহর, পূর্ব-হাতলিয়াসহ ৬টি গ্রামে প্রায় ৪০০ অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করে। গুটি কয়েক গ্রাহকের মিটার স্থাপন করে দুর্নীতিবাজ কর্মচারীরা অধিকাংশ গ্রাহককে মাসোয়ারার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ প্রদান করে। এতে একদিকে বঞ্চিত হয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ, অন্যদিকে চুরি করা ইউনিট কভার করতে গিয়ে নিরীহ গ্রাহকের ওপর ভুতুড়ে বিল চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। রাস্তার পাশ দিয়ে অবৈধ দুর্বল ও নিচু কাঠের/বাঁশের খুটায় বিদ্যুৎলাইন টানায় হালকা ঝড়-তুফানে খুটি পড়ে লাইন ছিড়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। আবার লাইন মেরামতে গ্রাহকদের মোটা অংকের টাকা খরচ করতে হয়।

কাশেমনগর প্রাইমারী স্কুল সংলগ্ন রাস্তার পাশে ৩৩ হাজার ভোল্টের লাইনের ২০০ কেভির দুইটি ট্রান্সফরমার উন্মুক্তভাবে রাখা হয়েছে। এগুলো প্রায়ই বিষ্ফোরিত হয়। স্কুলের শিশু শিক্ষার্থীরা খেলাধুলার সময় এগুলোতে স্পৃষ্ট হওয়ার আশংকা থাকে। স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার ছওয়াব আলী অভিযোগ করেন ট্রান্সফরমারে বিষ্ফোরন ঘটলে ও সমস্যা দেখা দিলে পিডিবির উপ-সহকারী প্রকৌশলী আনছারুল কবির শামীমের ফোনে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায় না। দুর্ঘটনা এড়াতে প্রায় ৩ বছর ধরে বেষ্টনী অথবা তারকাটার ভেড়া দেয়ার তাগিদ দিলেও তিনি আজও কোন ব্যবস্থা নেননি।

কাশেমনগর প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্রীধাম রুদ্র পাল জানান, স্কুলের মাঠে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করে। অনেক সময় বল ট্রান্সফরমারের ওপর গিয়ে পড়ে। তখন বল আনতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যাওয়ার আশংকা থাকে। ওই স্কুলের সভাপতি তাজুল ইসলাম জানান, অত্যন্ত শক্তিশালী ট্রান্সফরমার দুইটি এমনভাবে মাটির সাথে উন্মুক্ত, এতে যেকোন সময় মারাত্মক দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, ইতিপুর্বে ৯ বছরের এক শিশুর মৃত্যু ঘটেছে। আহত হয়েছে অনেকে। প্রায়ই বিদ্যুতায়িত হচ্ছে গবাদিপশু। রাস্তার ওপর অরক্ষিত ট্রান্সফরমারগুল্ োঅনেক সময় বিষ্ফোরিত হয়। তখন লোজনের মধ্যে আতংক বিরাজ করে। অথচ বিদ্যুৎ বিভাগ এগুলোর চর্তুদিক গ্রীলের বেষ্টনি/তারকাটার ভেড়া দিয়ে রাখলে এসব অনাকাংখিত দুর্ঘটনা ঘটতো না।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সুহেল মাহমুদ জানান, এভাবে উন্মুক্ত বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ও ঝুঁিকপূর্ণ লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ নজির বিহীন ঘটনা। যে কোন সময় বড়ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় তিনি বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পিডিবি’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে অবহিত করা হবে।

পিডিবি’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী আনছারুল কবির শামীম জানান, গ্রাহকের স্বার্থে অনেক আগেই এখানে এভাবে সংযোগ দেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ লাইনটি অত্যন্ত পুরনো। বর্তমানে মেরামত কাজ চলছে। খুব শিগগির ট্রান্সফরমারের চর্তুপাশে বেষ্টনি নির্মাণ করা হবে।