ব্রিটেনে আজ রবিবার (১১ আগস্ট) ছুটির দিনে পালিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল আযহা। ছুটির দিন হলেও রেস্টুরেন্টে কর্মরত লক্ষাধিক বাংলাদেশির ভাগ্যে জুটে নি ঈদের আনন্দ। রেস্টুরেন্টকর্মীদের কোনও অধিকারভিত্তিক সংগঠন না থাকায় মালিক সংগঠনগুলোও এ ব্যাপারে নিশ্চুপ।

জানা যায়, ব্রিটেনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ৬০ ভাগই রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় সম্পৃক্ত। লক্ষাধিক বাংলাদেশি কর্মী রয়েছেন এই সেক্টরে। ঈদের দিনে নামাজ আদায়ের সময়টুকু বাদ দিলে পূর্ণদিবস কাজ করতে হয় তাদের। এজন্য ওভারটাইম কিংবা অন্য কোনও সুবিধাও দেওয়া হয় না। বাংলাদেশি মালিকরাও তাদের বঞ্চিত করেন ঈদের আনন্দ থেকে। রেস্টুরেন্টকর্মীদের কোনও অধিকারভিত্তিক সংগঠন না থাকায় মালিক সংগঠনগুলোও এ ব্যাপারে নিশ্চুপ। ব্রিটেনে ঈদের দিন সরকারি ছুটি না থাকাকে কারণ দেখিয়ে এই অমানবিক পরিস্থিতি চলমান রেখেছে তারা। সপ্তাহে একদিন ছুটি ও ক্রিসমাসের দিনেই ছুটি মেলে সেখানকার বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট কর্মীদের। তাদের আকুতি, সেই ছুটি কেড়ে নিয়ে হলেও অন্তত দুই ঈদে তাদের অবসর দেওয়া হোক।

বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দফতর, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, ফার্মেসি, জরুরি বিভাগ থেকে শুরু করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ফ্যাশন হাউস, সুপার মার্কেট পর্যন্ত প্রায় সব সেক্টরের কর্মকর্তা-কর্মচারীই সেখানকার প্রচলিত শ্রম ও কর্মসংস্থান আইন অনুযায়ী বিভিন্ন ছুটি পান। সেই সঙ্গে শ্রমিক-কর্পোরেটকর্মী-ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-মন্ত্রী-ক্লিনার-কেয়ারটেকার-নিরাপত্তাকর্মী সব পেশাজীবীই গ্রীষ্মের ছয় সপ্তাহ, ক্রিসমাস, নিউ ইয়ার হলিডে আর ব্যাংক হলিডের মতো ছুটিগুলো নির্ধারিত সময়ে অথবা পরবর্তীতে ভোগ করে থাকেন।

রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানস্বীকৃত এসব নাগরিক ও আইনগত অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হয় কেবল বাংলাদেশিসহ অন্যান্য রেস্টুরেন্টে কর্মরতদের। এই খাতের লক্ষাধিক শ্রমিক-ওয়েটার-কুক-শেফ-ম্যানেজার-অ্যাসিসট্যান্ট ম্যানেজার কেউই বছরের এই নির্ধারিত জাতীয় ছুটির দিনে ছুটি ভোগ করতে পারেন না। এমনকি বছরের দুই ঈদের দিনেও ছুটি থেকে বঞ্চিত হন তারা। কেননা, ক্রিসমাসের দিন ছাড়া রেস্টুরেন্ট কখনও বন্ধ থাকে না।

ঈদের দিনটিকে ছুটি ঘোষণার দাবি প্রতিষ্ঠায় বি‌ভিন্ন সামাজিক সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে এলেও মালিকদের টনক নড়েনি। বিভিন্ন মা‌লিক সংগঠন এ ব্যাপারে কথা বলতেই নারাজ। সেখানকার মালিকদের সর্ববৃহৎ সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশন, ইউকে’র সভাপতি মোস্তফা কামাল ইয়াকুব বলেন, ঈদের দিন রেস্টুরেন্ট খোলা থাক‌লেও কর্মীরা বিকাল পর্যন্ত অনেক ক্ষেত্রেই ছুটি ভোগ করতে পারেন। ছুটির ব্যাপারে মালিক সংগঠনগুলোর দিক থেকে কোনও বাধ্যবাধকতা না থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা বন্ধ রাখার পরামর্শ দিচ্ছি। কেউ বন্ধ রাখলে স্বাগত জানা‌চ্ছি। তবে জোর করার ক্ষমতা আমাদের নেই।’

রেস্টুরেন্ট মা‌লিক সংগঠনের নেতা ফরহাদ হোসেন টিপু বলেন, ‘ব্রিটেনে ঈদের দিন সরকারি ছুটি নেই। দিনটিকে সরকারি ছুটি ঘোষণার জন্য কয়েক বছর ধরে চেষ্টা চলমান রয়েছে। সে‌ই দাবি বাস্তবায়িত হলে দিনটিতে রেস্টুরেন্ট মালিকরাও কর্মীদের ছুটি দিতে বাধ্য হবেন।’