সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মাইজগাঁওয়ের আবদুল মান্নান সপরিবারে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে যুক্তরাজ্যের লুটন শহরে। ২০১৫ সালের ১০ এপ্রিল পরিবারের ১২ সদস্যকে নিয়ে বেড়াতে এসেছিলেন গ্রামের বাড়িতে। একমাস পর ১১ মে তুরস্ক হয়ে তাদের যুক্তরাজ্যে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু তুরস্ক থেকে তারা কথিত জিহাদের জন্য চলে যায় সিরিয়ায়। ফেঞ্চুগঞ্জের সেই ‘জিহাদী’ পরিবারের ১২ সদস্যের কেউই  এখন আর বেঁচে নেই। রোগে-শোকে আর বিমান হামলায় মারা গেছেন পরিবারের সবাই। সূত্র  দ্যা ডেইলি মেইল

জানা গেছে আবদুল মান্নান ডায়াবেটিস ও তার স্ত্রী মিনারা খাতুন ক্যান্সার আক্রান্ত ছিলেন। তাদের মৃত্যু হয়েছে অসুস্থতায়। পরিবারের তিন পুরুষ সদস্য সিরিয়ায় গিয়ে যোগ দিয়েছিল আইএসে। যুদ্ধে তাদের মৃত্যু হয়। পরিবারের বাকি ৭ নারী ও শিশুর মৃত্যু হয় যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায়।

২০১৫ সালের মে মাসে সিরিয়া গেলেও প্রায় দুইমাস পর সিরিয়া থেকে আবদুল মান্নান পরিবারের সদস্যরা একটি বার্তা পাঠিয়ে নিজেদের ইসলামিক স্টেটের প্রতি সমর্থন ঘোষনার কথা জানায়। ওই সময় অনলাইনে একটি ছবিও পোস্ট করে তারা।

দ্যা ডেইলি মেইল জানায়, মান্নানই ছিলেন যুক্তরাজ্য থেকে আইসিস সমর্থন করে সিরিয়ায় পাড়ি জমানো সবচেয়ে বয়স্ক কোন ব্রিটিশ নাগরিক। তবে সিরিয়ায় পাড়ি জমানের কিছুদিনের মধ্যেই রাক্কা শহরে মারা যান আবদুল মান্নান। এর কিছুদিন পর একই শহরে মারা যান তার স্ত্রী মিনারা বেগমও।

আবদুল মান্নানের তিন ছেলে মোহাম্মদ জায়েদ হোসেন (২৫), মোহাম্মদ তৌফিক হোসেন (১৯) ও মোহাম্মদ আবুল কাশেম (৩১) রাক্কা শহরে অবস্থানকালীন সময়েই সেখানে অবস্থানরত আমেরিকান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেয়। ২০১৭ সালের অক্টোবরে রাক্কা শহর দখলে নেয় আমেরিকান সেনাবাহিনী। এসময় যুদ্ধে জায়েদ ও তৌফিক মারা যান।

রাক্কা শহর আমেরিকান সেনাবাহিনী দখলে নিলে অন্য জিহাদীদের সাথে মান্নানের পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে যান বারগুজ শহরে। তবে সেখানেও তাদের শেষ রক্ষা হয়নি। আইএস নিয়ন্ত্রনাধীন শেষ শহর ছিল বারগুজ। গত বছর সেখানে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান আবদুল মান্নানের বড় পুত্র আবুল কাশেম।

বারগুজ থেকে পালানোর সময় উপর্যুপরি বোমা হামলায় নিহত হন আবদুল মান্নানের পরিবারের নারী ও শিশুসহ ৭ সদস্য। তারা হলেন- আবদুল মান্নানের মেয়ে রাজিয়া খাতুন, ছেলে মোহাম্মদ সালেহ হোসেন, তার স্ত্রী রোশনারা বেগম, তাদের তিন সন্তান ও মান্নানের আরেক পুত্রবধূ সাইদা খানম।