ভারতে গরু চুরি অভিযোগে স্থানীয়দের গণপিটুনিতে নিহত হয়েছিলো মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার যুবক রনজিত রিকমন। গত মঙ্গলবার তাকে ভারত সীমান্ত এলাকার অধিবাসীরা পিঠিয়ে হত্যা করে। ৪ দিন পর শুক্রবার বিকালে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির কাছে লাশ হস্তান্তর করে বিএসএফ। সিলেটের বিয়ানীবাজারের শেওলা স্থলবন্দরের নোম্যান্সল্যান্ডে দুই দেশের সীমান্তরক্ষা বাহিনীর মধ্যে সীমান্ত আইন অনুযায়ী লাশ হস্তান্তর করা হয়।

শুক্রবার বিকেল পৌণে ছয়টায় সিলেটের বিয়ানীবাজার শেওলা এলাকায় বিএসএফ-বিজিবি পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ভারতের পাথরকান্দি থানার পুলিশ বাংলাদেশের বিয়ানীবাজার থানার পুলিশের নিকট লাশ হস্তান্তর করে।

এ সময় বিজিবি-র পক্ষে সহকারী পরিচালক মমিনুল ইসলাম, বড়গ্রাম ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার নায়েব সুবেদার মো. আলী আজগর ও জুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. ইমামুুল মুুন্তাসির এবং বিএসএফ-এর পক্ষে সুতারকান্দি ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার ইন্সপেক্টর বিষ্ণু কুমার, পাথরকান্দি থানার পুলিশ ইন্সপেক্টর তনভির আহমদ উপস্থিত ছিলেন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হস্তান্তরের জন্য বিএসএফ ওই সীমান্তে লাশ নিয়ে এলেও তার করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট না থাকায় বিজিবি লাশ গ্রহণ না করে ফেরৎ দেয়।

শুক্রবার লাশ গ্রহণ করে বিজিবি আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে পরিবারের হাতে তুলে দেয়। এ সময় নিহত রনজিতের মা, কাকা চৈতা রিকমুন, আগনু রিকমুন, বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি যাদব রুদ্র পাল, ইউপি সদস্য মিলন রুদ্র পাল ও মহিলা সদস্য জানকী দুশাদ উপস্থিত ছিলেন।

বিএসএফ-এর বরাতে বিজিবি জানায়, জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের ধামাই চা বাগানের নিয়মিত শ্রমিক এবং বাজারটিলা এলাকার বাসিন্দা রশিক লাল রিকমুনের পুত্র রনজিত রিকমুন (৩০) ও একই উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের শিলুয়া চা বাগানের ফাঁড়ি কুচাই চা বাগানের মৃত গাজু মুন্ডার পুত্র মলেন মুন্ডা (৩২) গত রোববার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার লাঠিটিলা সীমান্তের ওপারে ভারতের করিমগঞ্জ জেলার পাথারকান্দি থানার পুঁথনি চা বাগানের চম্পাবাড়ী এলাকায় অনুপ্রবেশ করে। তখন স্থানীয় জনতা গরু চোর সন্দেহে ওই দু’জনসহ চার জনকে গণপিঠুনি দেয়। এতে রনজিত ঘটনাস্থলে মারা যায় এবং মলেনসহ তিন জন আহত হয়। অপর দুইজন ভারতীয় নাগরিক। ভারতের করিমগঞ্জ হাসপাতালে নিহতের লাশের ময়নাতদন্ত হয় এবং আহতরা সেখানে পুলিশী পাহারায় চিকিৎসাধীন।

বর্ডার গার্র্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ৫২ ব্যাটালিয়ন বিয়ানীবাজার-এর কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মো. শহীদুল্লাহ জানান, লাশ গ্রহণ করে পরিবারকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। নিহতের করোনা নেগেটিভ ছিল।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার লাশ হস্তান্তর  করতে বিএসএফ শেওলা স্থল বন্দরের নোম্যান্সল্যান্ডে লাশ নিয়ে আসে। এ সময় বিএসএফের দায়িত্বশীলরা ময়না তদন্ত প্রতিবেদন এবং ভারতের আসাম প্রদেশের সংশ্লিষ্ট থানায় দায়ের করা মামলার কাগজসসহ লাশ হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে গেলে বিজিবি করোনা পরীক্ষার সনদ চাইলে তা দেখাতে পারেনি বিএসএফ। ফলে বিজিবি করোনা সনদ ছাড়া লাশ গ্রহণ না করায় বৃহস্পতিবার লাশ হস্তান্তর প্রক্রিয়া থেমে গিয়েছিলো। শুক্রবার করোনা পরীক্ষার সনদ হাতে পাওয়ার পর লাশ বুঝে নেন বিজিবির দায়িত্বশীলরা।

এবিটিভির সর্বশেষ প্রতিবেদন-